কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুলাই) :: ঈদুল আজহার আগে আজ মঙ্গলবারই কুরবানির পশুর হাটের শেষদিন। কিন্তু ঈদের আগের রাতেও আশানুরুপ বিক্রি নেই, লাভ দূরে থাক যে দামে অন্তত লোকসান দিয়েও পশু বিক্রি করতে পারছেন না বিক্রেতারা। ব্যাপারীদের পাশাপাশি সারাদেশের প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চল থেকে খামারিরাও সরাসরি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। তাদের কপালে এখন গভীর চিন্তার বলিরেখা।
ইউসুফ আলী সেন্টু কালিগঞ্জ থানা থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন। ২৭ মন ওজনের গরুর দাম এক ক্রেতা বলেছিলেন ৩ লাখ টাকা। এখন সেই দামও কেউ বলছে না। উপায় না পেয়ে গরু বাড়ি নিয়ে যাবেন ইউসুফ।
তিনি বলেন, গরুটি ৩ বছর পালতেই খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। তার সাথে ঢাকায় আনতে গাড়ি ভাড়া ১৫ হাজার, প্যান্ডেল ভাড়া ৮ হাজার টাকা- এত ক্ষতি আমি কিভাবে সামলাবো!
২০২১ সালে ঝিনাইদদের কালীগঞ্জে আকারে সেরা গরু হয়েছিল ইউসুফের গরুটি। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলেন, “আমার গরু সবচেয়ে বড় গরু হওয়ায় অনেক আশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম, আমার আশা ভেঙ্গে গেছে। গরু এখন বাড়ি নিয়ে যাব।”
ইউসুফের মতো এমন শত শত খামারি গাবতলী হাটে গরু নিয়ে এসে বেচতে পাছেন না। তারা বলছেন, ২ লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি হলেও, তিন লাখের উপরের দামের গরু কিনেছেন না ক্রেতারা।
কুষ্টিয়ার চিলমারী থেকে আসা খামারি সামাদ এবার হাটে ১২টি গরু আনলেও, এপর্যন্ত মাত্র পাঁচটি গরু কোনরকমে বিক্রি করতে পেরেছেন।
সামাদ জানান, গরুর পেছনে মূল খরচের চাইতে ৫০ হাজার টাকা কম দর ধরেও তিনি ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না।
বড় খামারিদের অবস্থা আরও খারাপ। গ্রামীণ অ্যাগ্রো পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ১৭১টি গরু এনেছে গাবলীর হাটে; গত ৭ দিনে একটি গরুও বিক্রি হয়নি তাদের।
এ খামারের বিক্রয়কর্মী আজিজুল জানান, খামারটি এখন সব গরু নিয়ে যাবে। ক্রেতারা খরচের দামও বলছেন না। যে গরুর দাম দেড় লাখ সেটা তারা ৭০-৮০ হাজার টাকা দর হাঁকছেন। আর যে গরুর দাম ৭ লাখ, সেটার দাম বলছেন সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার বিকালেই গ্রামীণ অ্যাগ্রোর গরু বেচাকেনা বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৭১টি গরুর রাখার জন্য ৪ লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে খামারিকে। এখন তিনি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
ব্যাপারীদের অবস্থাও সুবিধের নয়। ব্যাপারী সোহেল রানা কুষ্টিয়া থেকে ৩৩টি গরু এনেছেন। ৩০টি গরু বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, আজ সকালে ৩৫ হাজার টাকা লসে দুইটি গরু বিক্রি করেছি দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকায়। এখনও ৩টি গরু আছে, এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে প্রতিটি গরু কেনা। দাম বলছে এক লাখ টাকা করে। সন্ধ্যার পর তো ক্রেতাই আসছে না। আমাদের এবার পুরোই লস হবে।
বড় গরু নিয়ে বিক্রেতাদের মাথায় হাত:
গাবতলী হাটে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের বড় গরু নিয়ে বিপাকে রয়েছে বিক্রেতারা। তাদের ভাষ্য মতে, গত কয়েক বছর বিগ বস, কালো মানিকসহ অনেক গরুর খবর দেখেছে। সেগুলো ১০ লাখ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। সেই আশায় তারাও পেলেপুষে বড় করেছে গরু, কিন্তু বাজারে এসে দেখে এমন বড় গরু শত শত। প্রথম দিকে ক্রেতারা কিছুটা দাম বলেছিল এখন সেটাও বলছে না।
যে গরুর দাম দুই দিন আগে ৪ লাখ বলেছিল সেই গরু এখন বলছে ২ লাখ টাকা।
ক্রেতারা এবার ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু কিনতে বেশি আগ্রহী বলেও জানান বিক্রেতারা।
চিলমারীর খামারি সামাদ বলেন, যে গরুর দাম দুই দিন আগে ৪ লাখ বলেছিল, এখন সেই গরুর দাম সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা বলছে।
কুষ্টিয়া থেকে লিয়াকত আলি ৩টি গরু এনেছেন। দুটির দাম ১০ লাখ টাকা করে আর একটির দাম ৭ লাখ টাকা চাচ্ছেন। লিয়াকত বলেন, ক্রেতারা তো দামই বলে না। আর কখনও বড় গরু পালব না।
আমির হোসেন বলেন, আমার ১৩০০ কেজি ওজনের গরুটার দাম দুইদিন আগে ৬ লাখ টাকা উঠেছিল, এখন কেই ৪ লাখ টাকাও বলে না। আমার খরচই উঠবেনা। হাটে এমন বড় গরু বেশি দেখে ক্রেতারা আরও দাম কম বলছে।
আমির হোসেন নামের আরেক খামারি বলেন, আমার ১৩০০ কেজি ওজনের গরুটা ৬ লাখ টাকা দুই দিন আগে বলেছিল, এখন ৪ লাখ টাকাও কেউ বলে না। আমার খরচই উঠবেনা। হাটে এমন বড় গরু বেশি দেখে ক্রেতারা আরও কম দাম বলছে।
Posted ১১:৩৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta