কক্সবাংলা ডটকম(১৭ আগস্ট) :: হঠাৎ করেই দীর্ঘদিন পর রাজপথ উত্তপ্ত হলো। বিএনপি`র ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল অনেক দিন আগেই। কিন্তু আজ ঘটা করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গেলো। আর সেখানে গিয়ে বিএনপি`র মারমুখী আচরণ দেখে স্পষ্টই বোঝা গেছে যে বিএনপি এখন আর চুপ করে ঘরে বসে থাকতে চায় না।
তারা কিছু একটা করে দেখাতে চায় এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের ঘটনাটা বিএনপি`র একটা সিগন্যাল মাত্র। সামনের দিনে যে বিএনপি আরও বিষয় নিয়ে আন্দোলন করবে তার একটি ইঙ্গিত দিল আজকের মারমুখী আচরণের মধ্যে দিয়ে। বিএনপি কর্মীদের সকাল থেকেই বেশ উশৃঙ্খল মারমুখী দেখা যাচ্ছিল এবং অনেকটাই অসহিষ্ণু ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের একটা প্লাটফর্ম খুঁজছিল। এই ঘটনা তাদেরকে সেই প্লাটফর্ম দিয়েছে। এই ঘটনার পরপরই আগামীকাল সারাদেশে বিএনপি বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাহলে কি বিএনপি আন্দোলনে যাচ্ছে? বিএনপি আন্দোলনে যাচ্ছে কি যাচ্ছে না এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করছে পাঁচটি কারণে এখন বিএনপি`র আন্দোলনে যাওয়া উচিত। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে,
১. করোনা মোকাবেলায় সরকার চাপে: দেশে করোনা পরিস্থিতি বাড়ছে কমছে। বাড়া কমার এক দোলাচলের মধ্যে দিয়ে এগুচ্ছে। এখনো করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আর করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য খাত ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। শুধু যে বিরোধী দল করোনা মোকাবেলার ব্যর্থতার কথা বলছে তা না, সরকারি দলের ভেতর থেকেও এই করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতার কথা বলা হচ্ছে। এই নিয়ে জনমনে বিরক্তি এবং অস্বস্তি রয়েছে। বিশেষ করে গণটিকার নামে যেভাবে মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে সেটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। সে কারণেই এখন আন্দোলন শুরু করা যায় বলে অনেকে মনে করছেন।
২. সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তে জনগণের বিরক্তি: কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে যে সিদ্ধান্তগুলো সমন্বয়হীন এবং যা জন বিরক্তির কারণ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ১ আগস্ট গার্মেন্টস খুলে দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ রাখা, গত দুই ঈদে যে সমন্বয়হীন একের পর এক সিদ্ধান্ত মানুষের বিরক্তি উৎপাদন করেছে। আর এই একের পর এক পাল্টাপাল্টি সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত সমালোচিত হচ্ছে। বিএনপি`র নেতারা মনে করছেন এখন জনগণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে একটি আন্দোলনের সূচনা করা যায়।
৩. বিএনপি`র ভেতরের চাপ: দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি`র ভেতরে আন্দোলনের জন্য চাপ রয়েছে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করে যে আন্দোলনের বিকল্প নেই। চুপ করে বসে থাকলে বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই সংগঠন গোছানোর মতামত বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীদের। আর এ কারণেই বিএনপি`র ভেতরের চাপ থেকেও বিএনপি একটি আন্দোলন করতে চায়।
৪. নতুন কমিটির সমালোচনার জবাব: বিএনপি`র যে ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটি সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। কমিটি নিয়ে দলের ভেতর নানারকম আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আর এই সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য নতুন কমিটি কিছু একটা করে দেখাতে চায় এবং কিছু একটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কিছু কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ গরম করা।
৫. পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি: সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানদের আফগানিস্তান জয় বিএনপিকে নতুন জীবন দিয়েছে বলে অনেকে মনে করে। তারা মনে করছে যে, এখন বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদ এবং উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা কিছুটা হলেও কম হবে। বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবে। আর এই সমস্ত বাস্তবতাতেই এখন বিএনপি`র চাপ কিছুটা হলেও কমবে। আর এইসব কারণেই বিএনপি মনে করছে যে, এখনই আন্দোলনের ভালো সময়।
Posted ১:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ আগস্ট ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta