কক্সবাংলা ডটকম(২৩ মে) :: শেষ জীবনে অর্থকষ্টে ভুগেছেন তাজিন আহমেদ। হাতে তাঁর কাজ ছিল না প্রায়ই। তাজিনের মা দিলারা জলি চেক ডিজঅনার মামলায় দুই বছর ধরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। একাকী বসবাস করতেন তিনি। অনেক ডিপ্রেশনেও ছিলেন বলে জানা যায়।
অর্থের অভাবে নাকি নিজের মা’কে বাসার খাবার পাঠাতে পারতেন না। এমনটাই জানালেন তাজিনের কাছের মানুষজন। নির্মাতা অনিমেষ আইচের ফেসবুক স্ট্যাটাসে পাওয়া যায় তাজিনের অর্থাভাবের কথা।
অনিমেষ আইচ নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে লিখেন, ‘মরে গেলেই আহা…উহু! বেঁচে থাকতে কেউ পুছে না। ঈদ নাটক মানেই সব টাকা দিয়ে একটা মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, অপূর্ব এবং স্টার কাস্ট কিনতে হবে। মরে গিয়ে বেঁচে গেলেন তাজিন। একজন শিল্পির অপমৃত্যুর জন্য আমরাই দায়ী। সামনে অকালমৃত্যুর দীর্ঘ সারি।’
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে লিখেছেন, এখন নাটকে মিতা,তাজিনদের লাগে না,কিছু অসাধারন কাজিন আর চড়া মুল্যের পেছন ভুলে যাওয়া,কিছু অর্বাচীন হলেই হল!শিল্পী ছাড়ায় শিল্পের বড্ড বেশী জয়জয়াকার। কথা কোনও একজন তাজিনের নয়। অসংখ্য তাজিনরা বিলুপ্ত হচ্ছে নিদারুণ উদাসীনতায়।আমরা বেশ বিবেক কে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে টকশো,র বিবেকের ভুমিকায় দিব্যি অভিনয় করে যাচ্ছি! সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে! এ দায় যে আপনার,আমার সবার।
নির্মাতা মাহাদী হাসান সোমেনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে অর্থাভাবের বিষয়টি স্পষ্ট। তিনি তার স্ট্যাটাসে জানান,পাঁচশ টাকার অভাবে মায়ের জন্য খাবার কিনেও পাঠাতে পারতেন না তাজিন।
সোমেন তার স্ট্যাটাসে হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘তাজিন আহমেদ। গত ৩টা বছর ধরে কি অমানুষিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি তা অব্যক্ত। আজ কত কত মানুষ ঐ মৃত মুখটা দেখতে আসছেন, কিন্তু জীবিত অবস্থায় যদি একবারের জন্যও এই মানুষগুলো পাশে দাঁড়াতো তাহলে অন্তত এভাবে নীরবে চলে যেতে হতো না। পরপর দুইটা চাকরি চলে গেল, কেউ ঐভাবে কাজেও ডাকতো না, মাঝে মাঝে দুই থেকে তিন হাজার টাকার জন্য কত জনের কাছে হাত পেতেছেন, এই আমি তার সাক্ষী।
তিনি বলেন, ৫০০ টাকা হলে মায়ের জন্য কারাগারে খাবার পাঠানো যায়, সেই টাকাটাও থাকত না মাঝে মাঝে এই আমি তার সাক্ষী। আমাকে পাঠানো সর্বশেষ মেসেজ এখন কী করবা? আমি বুঝে উঠতে পারিনি। যেতে যেতেই অভিমানে বিদায়…’
জানা যায় তাজিন আহমেদ জীবনের শেষ সময়গুলোতে অর্থ কষ্ট ও নিদারুণ মানসিক কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুর সময়ও পরিবারের কাউকে পাশে পাননি। তাজিন আহমেদ ২২মে বিকেলে মারা যান। তার মৃত্যুতে বিস্মিত হয়ে যায় গোটা শোবিজ মিডিয়া।
আমাকে ক্ষমা করে দাও, ভুল হয়ে গেছে তাজিন আপু : শ্রাবন্তী
আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝিনি তোমার মূল্য। আমাকে মাফ করে দাও তাজিন আপা- কথা গুলো ইপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তীর। আর এই ক্ষমা প্রার্থনা প্রয়াত তাজিন আহমেদের নিকট। কিন্তু কেন ক্ষমা চাইছেন তাজিনের কাছে। তাজিনের শেষ দিন গুলো কেটেছে বড্ড একাকীত্বে। কে জানতো তার মনের অবস্থা!
গত বছরের মে মাসের কথা। তাজিন ফেসবুকে মেসেজ দেন শ্রাবন্তীকে। শ্রাবণ কেমন আছিস তুইরে? একটা যোগাযোগও তো করিস না মাঝে মধ্যে যা একটু ছবিতে বা স্ট্যাটাসে লাইক আর কমেন্ট দিস ব্যাস! আর কোনো যোগাযোফ করিস না কেন রে… ।
এরপর মেসেঞ্জারে ফোনও দিয়েছিলেন শ্রাবন্তীকে। সেই ফোনটিও শ্রাবন্তী ধরেননি। হয়তো তখন কোন সাহায্য চেয়েছিলেন। তাই এটাই এখন অনুশোচনায় ভোগাচ্ছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই পুরো বিষয়টি শেয়ার করে মাফ চেয়েছেন প্রবাসী এই অভিনেত্রী।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ মে দুপুর ৪ টা ৩৪ মিনিটে মারা যান তাজিন আহমেদ।
Posted ১১:৪১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta