কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জুলাই) :: ছোটবেলা থেকেই চাপা স্বভাবের ছিলেন সাংবাদিক সোহানা পারভীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনে পা দেন। দুই বছর আগে চাকরি হারিয়ে হঠাৎই তার জীবনের ছন্দপতন ঘটে। বিয়ের ৫ মাসের মাথায় বিচ্ছেদ হওয়ায় পারিবারিক জীবন নিয়েও তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।
এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টুকটাক কাজের চেষ্টা করলেও কাটছিল না অর্থাভাব। এরপর শুরু করেন অনলাইনে এগ্রো ব্যবসা। তাতেও মিলছিল না আশানুরূপ সাড়া। সব মিলিয়ে হতাশা আর বিষাদময় সময় পার করছিলেন সোহানা। পুলিশ ও স্বজনদের ধারণা, এই হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন সোহানা।
ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ যশোরে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আত্মহত্যার আলামত পাওয়া গেছে সোহানার মরদেহে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. কে এম মঈনুদ্দিন নিহত সোহানার ময়নাতদন্ত করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে নিহতের রক্তসহ অন্যান্য নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান জানান, সোহানার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন তার ছোট ভাই।
সোহানার বড় চাচা গাজী রেজাউল হক বলেন, সোহানারা দুই ভাইবোন। ছোট ভাই মোহাইমিনুল ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা। মা হৃদরোগে ভুগছেন। ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন সোহানা। যদিও ছোট ভাই মোহাইমিনুল সহপাঠীদের সঙ্গে অন্য বাসায় থাকত। মাঝে মাঝে এসে বোনের সঙ্গে দেখা করে যেত।
পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আর্থিক সহযোগিতার দায়িত্ব ছিল তার ওপর, কিন্তু সেভাবে কিছু করতে পারছিল না। এ কারণেই বেশি হতাশ ছিল সে। এছাড়াও চাকরি হারানোর পরে আর্থিক টানাপড়েন ও ব্যক্তিগত জীবনের হতাশায় বিষাদময় সময় পারছিল সে।
এদিকে সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরেক সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
একটি দৈনিকের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে বৃহস্পতিবার তদন্তের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ জানান, “একটি জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কিছু তথ্য নিয়েছি। নিহত তুলির বাসায় তার যাতায়াত ছিল। তার সাথে কথা বলে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি।”
রায়েরবাজারের শেরেবাংলা সড়কে যে ভবনে তুলি ভাড়া থাকতেন সেটির তত্ত্বাবধায়ক আজিমউদ্দীন পুলিশকে জানান, ওই বাসায় তুলি তিন বছর থেকে ভাড়া থাকতেন। তার ছোট ভাই মাঝেমধ্যে আসতেন। মোটরসাইকেল নিয়ে তার এক বন্ধু আসতেন।
মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নম্বরের সূত্র ধরে সাংবাদিক রঞ্জুকে শনাক্ত করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই তত্ত্বাবধায়কের মোটর সাইকেলে নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন। এরপর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সাংবাদিক রঞ্জু সংবাদ মাধ্যমে জানান, পুলিশ ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে। কর্মকর্তারা যা জানতে চেয়েছেন সেগুলোর সব জবাব দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “তাদের বলেছি আমি নির্দোষ, তারা সবরকম তদন্ত করে দেখুক। অনেক জায়গায় লিখেছে আমার মুঠোফোন পুলিশ জব্দ করেছে। আসলে এরকম কিছু হয়নি।”
অন্যদিকে, সোহানার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই মৃত্যুর আসল রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকালে রাজধানীর হাজারীবাগ থানার শেরেবাংলা সড়কের বাসা থেকে সাংবাদিক সোহানার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সবশেষ একটি অনলাইন পত্রিকায় কাজ করতেন তিনি।
Posted ২:১০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta