কক্সবাংলা ডটকম(১০ ফেব্রুয়ারি) :: সাংবাদিকদের বাসায় আসার কথা শুনেই মেঘ বলেছে, সাংগা (মামা) তুমি ওদের আসতে না কর। এসে আর কী হবে? এভাবেই কথাগুলো মামাকে বলেছে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। ছোট্ট মেঘও আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করেছে সব কিছু। তার মামা নওশের রোমান কথাগুলো বলেই কিছুটা চুপ করে থাকলেন।
তার পর বললেন, ছয় বছরে যেহেতু বিচার হয়নি, বিচার পাওয়ার আশা আমরা আর করি না। র্যাব তদন্তে অগ্রগতিও আনতে পারছে না, আবার তদন্ত কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার কাছে ছেড়েও দিচ্ছে না। র্যাব ও আগের তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই মামলা তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। কারণ মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্তে অগ্রগতি আছে বলেও দাবি করলেন র্যাবের এই মুখপাত্র।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকা-ের ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। তদন্তে কোনো অগ্রগতি না থাকলেও গত ৬ বছরে ৫৪টি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে বর্তমান তদন্ত সংস্থা র্যাব। দফায় দফায় সময় নেওয়া হয়েছে আদালতের কাছ থেকে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও নৃশংস হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ৫ দফায় বদল করা হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড ফাইভে পড়ছে মেঘ। মেঘের সব সময়ের সঙ্গী তার মামা নওশের রোমান। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ে করেন নওশের রোমান। তার স্ত্রী তানজিলা খন্দকার তৃপ্তিকে মাম ডাকে মেঘ। আর আগে থেকেই মামা নওশের রোমানকে আদর করে সাংগা ডাকত মেঘ।
এই দুজনই যেন এখন মেঘের বাবা-মা। মামা নওশের রোমান বলেন, মেঘ এখন একটু একটু করে বুঝতে পারছে তার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার হচ্ছে না। সে বুঝতে পারলেও কিছু বলেনি। সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তখন বলে কথা বলে কী লাভ? তার কাছে আমাদের কোনো জবাব নেই।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর শেরেবাংলানগর থানায় হত্যা মামলা করা হয়। থানা পুলিশ হয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর ন্যস্ত করা হয়। ৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এর পর আদালতের নির্দেশে ওই বছরের এপ্রিলে তদন্তভার নেয় র্যাব। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সংস্থাটি। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহত দম্পতির শিশুপুত্র মাহীর সরওয়ার মেঘের সঙ্গে দফায় দফায় কথাও বলে।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার দুই দিন পর তৎকালীন পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ‘৪৮ ঘণ্টা’ এবং ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ এখন যেন কেবলই উপহাস!
এদিকে হত্যাকা-ের পর পরই মেঘের যারা দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন তাদের কেউই পরবর্তী সময়ে মেঘের কোনো খোঁজ নেননি বলে জানান তার মামা রোমান। মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষও এখন আর যোগাযোগ করছে না সাগর-রুনির পরিবারের সঙ্গে।
র্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সাগর-রুনির রক্তমাখা জামাকাপড়, বঁটি, মোজাসহ কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে পাঠানো হয়। মামলায় আমেরিকান দুটি প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া হয়েছে এ ক্ষেত্রে। আমেরিকা থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পরও কোনো কিছুর সুরাহা করতে পারেনি র্যাব।
অন্যদিকে মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেনি। আদালতে দেয়নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। তবে তাদের মধ্যে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল নামে দুজন ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। তাদের মধ্যে প্রথম ৫ জন ২০১৩ সালের আগস্টে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। এর মধ্যে ২৭ জন সাংবাদিকও রয়েছেন।
Posted ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta