হাইভোল্টেজ ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশনে পারদ চড়েছিল আগেই। স্মিথ-ওয়ার্নার হীন ব্যাগি গ্রীণদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য ভারতের কাছে সেরা সুযোগ এটাই। এমনটাই মত ছিল প্রাক্তনদের। সিরিজ শুরুর আগের সেই আভাসকে মান্যতা দিয়েই অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে দুরন্ত জয় তুলে নিল ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে ৩১ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া।

একই ক্যালেন্ডার ইয়ারে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়, পাশাপাশি অজিদের ডেরায় প্রথম টেস্ট জিতেই সিরিজে এগিয়ে যাওয়া। সবমিলিয়ে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে অ্যাডিলেডে টেস্ট জয়কে দ্ব্যর্থহীন ভাবেই ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দেওয়াই যায়। ব্যাট হাতে ‘পয়া’ অ্যাডিলেডে দাগ কাটতে না পারলেও অধিনায়ক হিসেবে কোহলি কিন্তু এই টেস্ট জিতে উঠে এলেন শিরোনামে। ২০০৮ কুম্বলের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিরাটই প্রথম, যিনি ভারতকে টেস্ট জয়ের স্বাদ দিলেন।

তবে শুধু বিরাটই নন, টেস্ট জয়ের সাথে সাথে অ্যাডিলেড ওভালে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী হলেন তরুণ উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত। অজি ভূমে প্রথম টেস্টে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়েই তালুবন্দি করলেন বিপক্ষের এগারোজন ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ভারতীয় উইকেটকিপার হিসেবে এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন তরুণ পন্ত। এগারো ক্যাচ তালুবন্দি করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে ইংরেজ উকেটকিপার জ্যাক রাসেল ও দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপার এবি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে একাসনে বসে গেলেন পন্ত।

ঋদ্ধির অবর্তমানে পন্ত না পার্থিব কাকে খেলানো উচিৎ? এই নিয়ে দ্বিবিভক্ত ছিলেন অনুরাগীরা। ব্যাট হাতে প্রথম টেস্টে আশার সঞ্চার না করতে পারলেও উইকেটের পিছনে পন্ত কিন্ত জানান দিয়ে গেলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়েই শতরান হাঁকিয়ে নজর কেড়েছিলেন নির্বাচকদের। প্রথম ভারতীয় উইকেটকিপার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে শতরান অযাচিতভাবেই তাঁকে সুযোগ করে দিয়েছিল ঘরের মাঠে পরবর্তী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ে উইকেটের পিছনে কতটা কার্যকরী হতে পারবেন পন্ত? প্রশ্ন উঠছিলই।

মোক্ষম সময় তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং চর্চায় উঠে এসেছে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের পর। তবে এগারো ক্যাচ তালুবন্দি করে পন্ত যেন জবাব দিলেন সব প্রশ্নের। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে জাতীয় দলে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঋদ্ধিমানকেও এদিন টপকে যান পন্ত। এর আগে ১০টি ক্যাচ নিয়ে ভারতীয় হিসেবে রেকর্ড ছিল ঋদ্ধির ঝুলিতেই। তবে পঞ্চমদিন দ্বিতীয় সেশনে এককভাবে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী হওয়ার সুযোগ নিজেই হারান পন্ত। ন্যাথান লায়নের ক্যাচ ফস্কে জ্যাক রাসেল ও ডিভিলিয়ার্সকে টপকে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন বছর একুশের এই উইকেটকিপার। তাই প্রাক্তন দুই টেস্ট উইকেটরক্ষকের সঙ্গে একাসনে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পন্তকে।