শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

অ্যান্টিবায়োটিকের মরণ ফাঁদে দেশ !

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭
595 ভিউ
অ্যান্টিবায়োটিকের মরণ ফাঁদে দেশ !

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জুন) :: অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার মানুষের জীবনকে হুমকিতে ফেলেছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই পাড়া-মহল্লার দোকানে এ ওষুধ দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। সর্দি-কাশি বা সামান্য শারীরিক সমস্যা হলেই কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল কিনে খাওয়া এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, শুরু করে শেষ না করা এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় না খাওয়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এর অপপ্রয়োগ বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধের দোকানগুলোতে এই ধরনের ওষুদ বিক্রি বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

প্রায় চার মাস আগে ৮৩ বছর বয়সের মাহবুবুর রহমান (ছদ্মনাম) মারা যান পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ডায়াবেটিক, উচ্চরক্ত চাপ নিয়ে মাহবুবুর রহমান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। আবার এক মাস আগে ৬৭ বছরের প্রকৌশলী মুকুল চন্দ্র দাস (ছদ্মনাম) বৃষ্টিতে ভেজার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার ফুসফুসে ইনফেকশন এবং নিউমোনিয়া হয়েছে বলে ধরা পড়ে।

প্রথমে বারডেম এবং পরে পান্থপথের একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। কিন্তু তার শরীরে কোনও ড্রাগ কাজ করছিল না, চিকিৎসকদের প্রাণান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘ইমিউনো কম্প্রোমাইজ বা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই তাকে বাঁচানো যায়নি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াতে এবং অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে আর কাজ না করাতেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনেরই।’

গবাদি পশু, মাছ এবং কৃষিক্ষেত্রেও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার আশঙ্কা হারে বেড়েছে। শতকরা ৫০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে কৃষি খাতে, কৃষিপণ্য এর যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে কিডনি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আর এসব কারণে ২০১৫ সাল নাগাদ বিশ্বের এক কোটি মানুষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুবরণ করবে বলেও জানান চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের করা এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, রাজধানীতে শতকরা ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অর্থ্যাৎ ঢাকায় মানুষের শরীরে যে রোগ জীবানুর সংক্রমণ ঘটে তার বিরুদ্ধে ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক কোনও কাজ করে না।

যেটা দরকার নেই, সেটাও ব্যবহার হচ্ছে, যখন দরকার নেই, তখনও ব্যবহার হচ্ছে। নিয়ম মেনেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা মনে করেন, দেশে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ‘এর ফলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মহাদুযোর্গের প্রতিধ্বনি হিসেবে শুনতে পাচ্ছি আমরা।’

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে বাংলাদেশে কত মানুষ মারা যায় এমন কোনও জরিপ বা গবেষণা না থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরে ২৩ হাজার আর বিশ্বে সাত লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এ ধারা চলতে থাকলে বিশ্বজুড়ে বছরে এক কোটি মানুষ মারা যাবে ওষুধ না পেয়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী যৌনরোগ গণরিয়ার চিকিৎসায় কোনও ওষুধ কাজ করছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে গণরিয়ার আর কোনও চিকিৎসাই থাকবে না।

অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স খুবই ভয়ের কথা। যখন তখন খাওয়ার প্রবণতা যদি আমরা রোধ করতে না পারি, তাহলে আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ফারুক বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আর নিয়ম না মেনে খেলে শরীরে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। রেজিস্ট্যান্স নানা কারণে হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জীবাণুকে মারার জন্য যে পরিমাণ প্রয়োজন তার চেয়ে কম সেবন, ঘন ঘন অথবা অধিক মাত্রায় সেবন এবং পুরো কোর্স সম্পন্ন না করা এবং নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা অন্যতম কারণ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সব ধরনের হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধের ব্যবহার বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ম্যাক্রোলাইড, দ্বিতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন ও পেনিসিলিন।

এছাড়া, এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের চিকিৎসায় ব্যবহারের হার সর্বোচ্চ।

গবেষণায় আর দেখা যায়, অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে ভুল ব্যবহার বেশি। আর ভুল অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণে হাসপাতালে বেশিদিন অবস্থান করতে হয়, শারীরিক জটিলতার মাত্রা বেশি হয় এবং এতে মৃত্যুর হারও তুলনামূলকভাবে বেশি।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, যথেচ্ছ ব্যবহারকে থামাতে যদি ব্যর্থ হই, তাহলে একটা সময়ে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অকার্যকর হয়ে যাবে আর পৃথিবীতে রাজত্ব করবে জীবানুরা। তাই যতো দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার রাশ টেনে ধরতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাছার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সেকে বাংলাদেশের সিরিয়াস মেডিক্যাল ও সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে কারবাপেনেম শ্রেণির একটি অ্যান্টিবায়োটিক আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র চিকিৎসারত রোগীদের দেওয়া হয়। যখন তাদের অন্য সবগুলোই কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যদি কোনোভাবে কারবাপেনেম ওষুধটি রেজিস্ট্যান্ট হয়, তাহলে আইসিইউ রোগীরা ওষুধ না পেয়েই মারা যাবে। খুবই আশঙ্কার বিষয় কারবাপেনেমও রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও।’

অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাছার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১১টি দেশের অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ছে। যার কারণে অস্ত্রোপচার ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যবহত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অবস্থাকে তুলনা করেছে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হবার আগের যুগের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুর রহিম বলেন, ফ্রান্স, আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নতদেশগুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোথাও অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় না। অথচ আমাদের দেশে ফার্মেসিতে গিয়ে যা চাওয়া হয়, তাই পাওয়া যায়।’

অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলগুলোতে হাতুড়ে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে শহরের চেয়েও বেশি এগিয়ে আছে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবদুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দিতে সাহস পাইনা, সেগুলোও তারা রোগীদের দিচ্ছেন।’

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণে রোগীদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না এমন কোনও রোগী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও সে পর্যায়ে যাইনি, তবে সতর্ক না হলে সে পর্যায়ে যেতে আমাদের সময় লাগবে না।’

উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রস্রাবের ইনফেকশন একটি কমন অসুখ, এ অসুখের জন্য যখন কালচার টেস্ট করা হয় সেখানে দেখতে পাই, অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করার মতো অস্থায় নেই। দু-একটা ওষুধ ছাড়া প্রায় ড্রাগই রেজিস্টেন্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে, নয়তো মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর জন্যও একসময় কোনও ড্রাগ থাকবে না।’

595 ভিউ

Posted ১২:০৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com