কক্সবাংলা ডটকম(১ জুন) :: আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টি টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে দেরাদুন পৌঁছেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শেষ মুহুর্তে ইনজুরিতে আক্রান্ত মোস্তাফিজের পরিবর্তে দলে যোগ দিচ্ছেন আবুল হাসান রাজু।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, টি টোয়েন্টিতে আফগানরা বাংলাদেশের চেয়ে র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে রয়েছে। আফগান সাফল্যকে কবুল করেই বলতে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম নবীন সদস্যদের সামনে এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। বাস্তবতা বিবেচনায় বলুন অথবা বুদ্ধিদীপ্ত জওয়াব; দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ দলপতি সাকিব আল হাসান আফগানদেরই ফেভারিট ঘোষণা করেছেন। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা একটি দলের বিপক্ষে এমন অবস্থানের কারণটা দেখা প্রয়োজন।
আইপিএল যদিও একমাত্র মানদন্ড না, তবু সর্বশেষ ক্রিকেট ইভেন্ট হওয়ায় এটিকেই ধার্তব্যে এনে দু’ দলের মধ্যকার টি টোয়েন্টিতে পার্থক্যের কিছুটা নির্ণয় করা যায়।
সদ্য সমাপ্ত আসরে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান দু’ দেশ থেকেই ছিলেন দুজন প্রতিনিধি। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং মোস্তাফিজুর রহমান। আফগানদের পক্ষে ছিলেন রশিদ খান এবং মুজিবুর রহমান। সাকিব পুরো টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেললেও নিজের দিকে পুরো আলো কেড়ে নিতে পেরেছেন খুব কম সময়ই। ব্যাটিংয়ে রানের কথা আসলে যদি তার পজিশনকে দেখানো হয়; সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠবে স্ট্রাইক রেট নিয়ে।
বল হাতেও ছিলেন অ্যাভারেজ। দু একটি ম্যাচ বাদ দিলে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারের যে তাকমা সেটির প্রতি সে অর্থে তিনি সুবিচার করতে পারেননি। স্পষ্ট করে বলি, তিনি ফ্লপ ছিলেন বিষয়টা এমন না; কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকাদের একজন হিসাবে তার পারফর্ম্যান্স আশানরুপ ছিল না।
অপরদিকে আফগানিস্তানের মূল তারকা রশিদ খান প্রায় পুরোটা টুর্নামেন্টেই ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। আসরের অন্যতম শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহকও তিনি। যে ম্যাচে উইকেট পাননি সে ম্যাচগুলোতে রান আটকে চাপ সৃষ্টি করেছেন প্রতিপক্ষের ওপর। দু দলের দুই শীর্ষ তারকার পারফরম্যান্সই কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দেয় পার্থক্যটা আসলে কোথায় হচ্ছে।
অপর দুজন মোস্তাফিজ এবং মুজিব। মোস্তাফিজ শুরুর দিকে কিছু ম্যাচে সুযোগ পেলেও ধারাবাহিকতার অভাবে প্রায় অর্ধেক আসরই দেখেন মাঠের বাইরে বসে। অপরদিকে মুজিব ছিলেন পাঞ্জাবের অন্যতম মূল তারকা।
যেমনটা বলেছিলাম; আইপিএলই মান বিচারের একমাত্র মানদন্ড না। ব্যাটিংয়ে যদি লক্ষ্য করেন; এখনো বাংলাদেশ একজন পাওয়ার হিটার খুঁজে পায়নি যে মুহুর্তেই ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেবার সামর্থ্য রাখে। নিয়মিত একাদশের ব্যাটসম্যানদের বেশিভাগের স্ট্রাইকরেটই ১২০ এর আশেপাশে। ১২০ এর বেশি স্ট্রাইকরেট রয়েছে মাত্র দুজনের; সৌম্য এবং সাব্বির। কিন্তু এ দুজনও সে অর্থে ধারাবাহিক না। সুতরাং ম্যাচ জেতার ক্ষেত্রে বোলারদেরও বেশ বড় ভূমিকাই রাখতে হবে।
বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও চিন্তার বিষয় রয়েছে। সাকিব আর রুবেল বাদে বলতে গেলে প্রায় সবাই নতুন মুখ। একমাত্র সাকিব বাদে কারো ইকোনোমিই সাতের নিচে না। দেখা যাচ্ছে যে, দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানরা যতটা অনভ্যস্ত বোলাররা রান দেয়ার ক্ষেত্রে ততটাই উদার। সুতরাং, এই অবস্থায় কারো উপর একক নির্ভরশীলতার বদলে দলগত নৈপুণ্যই গড়ে দিতে পারে ব্যবধান।
আফগানিস্তানের মতন দলের বিপক্ষে খেলার আগে এত হিসাবের কি আছে ভেবে যারা বিরক্ত তারা একটু অাফগান খেলোয়াড়দের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। রশিদ খান টি টোয়েন্টির এক নাম্বার বোলার। সাথে মুজিব এবং নবী তো রয়েছেনই। ব্যাট হাতেও শেহজাদ বা নবীরা হয়ে উঠতে পারেন বিপদজনক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এ সিরিজে আফগানদের হারানোর কিছু নেই। বিপরীতে বাংলাদেশের ওপর থাকবে মর্যাদা ধরে রাখার চাপ। এমন অবস্থায় আফগানরা কতটা বিপদজনক হতে পারে তা এর আগেও টের পেয়েছে বাংলাদেশ।
আইপিএল এর জিকির করলেও এটা অনস্বীকার্য যে অভিজ্ঞতা এবং মানের দিক থেকে সাকিবই সিরিজের সবচেয়ে বড় তারকা। কিন্তু টি টোয়েন্টির মত ফরম্যাটে কারো একার ওপর নির্ভর করা বিপদজনক। আশা করা যায়, অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ ভুলটি করবে না এবং হাসিমুখেই দেশে ফিরতে পারবে।
Posted ৫:৪৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta