বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ! আমদানি নির্ভর হওয়ার আশঙ্কা

শুক্রবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
67 ভিউ
আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ! আমদানি নির্ভর হওয়ার আশঙ্কা

কক্সবংলা ডটকম(৪ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে । গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষিপণ্যটির মাথাপিছু ভোগ। ব্যবহার বেড়েছে খাদ্য ও ফিড শিল্পেও। তবে পণ্যটির চাহিদা যে গতিতে বেড়েছে, উৎপাদন বা সরবরাহ সে গতিতে বাড়েনি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পর থেকেই দেশে উদ্বৃত্ত আলুর পরিমাণ কমছে।

এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আলুতে নিট উদ্বৃত্ত অচিরেই নিট ঘাটতিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় আলুতেও বাংলাদেশের আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে।

বিএআরসির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরই আলুর নিট চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও কমে আসছে নিট উদ্বৃত্তের পরিমাণ। ২০১৭ সালেও দেশে আলুর নিট চাহিদা ছিল ৬২ লাখ ৭১ হাজার টন। ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১৭ হাজার টনে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে দেশে আলুর উদ্বৃত্ত ছিল ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। ২০২০ সালের মধ্যে তা নেমে আসে ৩ লাখ ৪০ হাজার টনে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছিল বিএআরসি। ২০২০ সালে আলু, পেঁয়াজ ও চালের বাজার অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে গবেষণাটি চালানো হয়েছিল।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই সময়ের তুলনায় দেশে আলুর চাহিদা এখন আরো অনেক বেশি। আবার উদ্বৃত্তের পরিমাণও অনেকটাই কমে যাওয়ার কথা। এ কারণেই ২০২৩ সালে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

সদ্য বিদায় নেয়া বছরে দেশে সবচেয়ে বেশি মূল্য অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া পণ্যগুলোর অন্যতম ছিল আলু। নানা পদক্ষেপেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় এক পর্যায়ে আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর পরও বাজারে পণ্যটির দাম এখন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

বিএআরসির গবেষণাটির সমন্বয় করেছিলেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি বলেন, ‘‌আমাদের আলু উৎপাদন হয় চাহিদার চেয়ে একটু বেশি। প্রতিনিয়ত খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার বাড়ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ে আলুর চাহিদা বাড়ছে। দেশে প্রচুর আলু উৎপাদনের যে তথ্য পাওয়া যায়, অনেকেই মনে করেন এটি সঠিক নয়। কারণ সরবরাহ প্রচুর হলে সিন্ডিকেশন করে দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকে না। সম্ভাব্য ঘাটতি এড়াতে হলে আলুর উৎপাদন বাড়াতে হবে বছরে অন্তত দুই লাখ টন করে। অনেকগুলো নতুন জাত এসেছে। এগুলো যত দ্রুত সম্প্রসারণ হবে তত দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে। কৃষক পর্যায়ে আলুর দাম নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারিভাবেও প্রচুর আলুর মজুদ রাখতে হবে।’

দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭৫-৮০ লাখ টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, দেশে উৎপাদিত আলুর প্রায় ২৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৪২ টন আলু উৎপাদন হয়। সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি বিবেচনায় নিলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৬-২৭ লাখ টন আলু নষ্ট হয়ে যায়। সে হিসেবে দেশে আলুর চাহিদা ও উৎপাদনের ব্যবহারযোগ্য অংশ প্রায় কাছাকাছি।

দেশে আলুর মাথাপিছু ভোগ প্রতি বছরই বাড়ছে। বিএআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশেও দৈনিক মাথাপিছু আলু খাওয়ার হার ছিল ৫৮ গ্রাম। সেখান থেকে বেড়ে ২০১০ সালে তা পৌঁছায় ৭০ দশমিক ৩০ গ্রামে। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ দশমিক ৩০ গ্রামে। তবে বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে আলুর মাথাপিছু ভোগ ৬৯ দশমিক ৭০ গ্রাম।

জানতে চাইলে সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আলুর এখন বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি জনসংখ্যা ও মাথাপিছু ভোগের পরিমাণ বেড়েছে। সে হিসেবে আলুর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে আলুর উৎপাদন ও চাহিদা এখন প্রায় কাছাকাছি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় ঘাটতির দিকেই যাচ্ছি। আমাদের জমি কম। একটিতে উৎপাদন বাড়ালে অন্যগুলোয় টান পড়ে। শুধু আলু নয়, সব ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। অধিক লাভজনক ফসলের কারণে আলুর জমি কমে যাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে।’

স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিক থেকে চালের পরই আলুর অবস্থান। আলুকে দেখা হয় নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে। এছাড়া বীজ, প্রাণী খাদ্য, রফতানি ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও প্রচুর আলু ব্যবহার হচ্ছে। জনসাধারণের খাদ্য হিসেবে ২০১৬ সালে আলুর ব্যবহার হয়েছে ৩৭ লাখ ৪১ হাজার টন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ লাখ ১৪ হাজার টনে। এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় প্রাণী খাদ্য হিসেবে। ২০১৬ সালে প্রাণী খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার হয় প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার টন, যা ২০২০ সালে বেড়ে হয় প্রায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার টন। আর বীজ হিসেবে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ২০১৬ সালে ছিল ১০ লাখ ৪২ হাজার টন, যা ২০২০ সালে হয় ১০ লাখ ৬ হাজার টন।

বাজারে গত কয়েক মাসে আলুর দাম বাড়লেও এর কোনো সুফল কৃষকরা পাননি। বিএআরসির আরেক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে খুব অল্প দামেই আলু কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। ২০২৩ সালেও মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ মার্চে কৃষকরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছিলেন ১০-১২ টাকায়। বাজার অস্থির হওয়া শুরু করে জুলাইয়ে। টানা দাম বাড়ার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরও দাম বাড়তে থাকায় অক্টোবরের শেষ নাগাদ আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর আলুর দাম নিয়ে কারসাজি হয় মূলত হিমাগার পর্যায়ে। এতে ফড়িয়া, হিমাগার মালিক (কোল্ড স্টোরেজ) ও আড়তদারদের বড় ভূমিকা থাকে।

যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে হিমাগার মালিকরা দায়ী করছেন আলুর উৎপাদন নিয়ে ভুল তথ্য প্রকাশকে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‌এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে এমন ভুল তথ্যের কারণেই হয়তো পরিস্থিতি এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। প্রথম থেকেই সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, ১ কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। তখনই আমাদের সংগঠন থেকে জানানো হয় যে আলুর উৎপাদন এ বছর কম হয়েছে।

তাই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাব ছিল যৌথ জরিপ করার। কারণ কিছু হলে আমাদেরই দোষারোপ করা হয়। এছাড়া সরকারিভাবে আলু মজুদ রাখার প্রস্তাবও দিয়েছি। আলুর উৎপাদন কেমন হচ্ছে তা হিমাগার পর্যায়ে কতটা জমা হচ্ছে, তা দেখেই বোঝা যায়। এবার আলুর আবাদ বেশি জমিতে হয়েছে। এখন আবহাওয়া বা বীজের মানের কারণে উৎপাদন কেমন হয় তা মৌসুম শেষে বলা যাবে।’

গত বছর আলু রফতানির জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। যদিও শেষ পর্যন্ত রফতানি কমানোর পাশাপাশি আমদানি করতে হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও প্রায় ৭৯ হাজার টন আলু রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে নেমে আসে ৩২ হাজার ৩৯২ টনে।

সামনের দিনগুলোয় আলুর বাজারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পণ্যটির বিপণন সংশ্লিষ্টরাও।

পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসিআই এগ্রোলিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. ফা হ আনসারী বলেন, ‘‌গত বছর সবজি বা অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় মৌসুমের শুরুতেই আলুর ওপর চাপ বেশি ছিল। সে কারণে শুরুর দিকে আলুর ভোগ বেশি হয়েছে। এ বছর আরেকটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকরা অনেকেই ছোট ছোট আলু তুলে ফেলছেন।

এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ৯০ দিনের আলু কৃষকরা ৬০-৬৫ দিনে হারভেস্ট করে ফেলছেন। একদিকে আলুর কনজাম্পশন বাড়ছে আবার উৎপাদন কমে গেলে সামনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে আলুর উচ্চফলনশীল কিছু জাত এসেছে। কিন্তু এগুলোর সম্প্রসারণ এখনো সেভাবে হয়নি। এটা সম্প্রসারণ করতে হবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি মৌসুমে ৪ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমির আলু কাটা হয়েছে। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পুরনো ও নতুন আলু প্রতি কেজি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘উৎপাদনের তথ্যের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য হয় না। আলুর ক্ষেত্রে কৃষক মৌসুমে ১০-১২ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু পরে দাম অনেক বেড়ে যায়। অথচ কৃষক কিন্তু দাম পাননি। হিমাগারের খরচও খুব বেশি না। উৎপাদনের তথ্যের ক্ষেত্রে হয়তো একটু কম-বেশি হতে পারে। বাজারে ঘাটতি আছে বা সরবরাহ কম বিষয়টি এমন নয়। আলু চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নৈতিক স্খলনের কারণে বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা গেছে।’

67 ভিউ

Posted ৩:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com