বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ইবনে বতুতা : বিশ্বের সেরা ভ্রমণকারী

বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭
852 ভিউ
ইবনে বতুতা : বিশ্বের সেরা ভ্রমণকারী

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ আগস্ট) :: ইবনে বতুতা। ইতিহাসের এক সমৃদ্ধ ভান্ডারের নাম। বিশ্ব বিখ্যাত এ ভ্রমণ পিপাসু ঘুরে বেড়িয়েছেন আফ্রিকা থেকে ভারত, ভারত থেকে তুরস্ক পর্যন্ত। এমনকি বাংলাদেশেও পড়েছে তার পদ চিহ্ন। তিনি বিশাল এ পথ পাড়ি দিয়েছেন কখনো নদী পথে, কখনো উট কাফেলায় আবার কখনো বা পায়ে হেঁটে।

টানা ২৯ বছর বিশ্ব ভ্রমণ করে ক্ষান্ত হয়েছেন তিনি। এসময় তিনি যত দেশে গিয়েছেন তা সত্যিই কল্পনা করার মতো। মার্কো পালোকে তার সমকক্ষ মনে করা হলেও পালোর চেয়ে বতুতা বেশি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। তাই অধিকাংশ ইতিহাসিবিদ ইবনে বতুতাকেই বিশ্বের সেরা ভ্রমণকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

ইবনে বতুতা মরোক্কোর তাঞ্জিয়ার নামক স্থানে এক মুসলিম বিচারপতির ঘরে জন্মগ্রহন করেন। ২১ বছর বয়সে তিনি পবিত্র হজ পালন করার উদ্দেশ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন। হজ পালন করার পাশাপাশি আইনের উপর পড়ালেখা করারও শখ ছিল তরুণ বতুতার মনে।

একটি গাধার পিঠে চড়ে ইবনে বতুতা একাই তার ভ্রমণ শুরু করলেন। পথিমধ্যে এক উট কাফেলার সাথে পরিচয় হয়ে গেল, যারা উত্তর আফ্রিকার দিকে যাচ্ছিল। এ যাত্রাপথ খুব কষ্টসাধ্যের পাশাপাশি ডাকাতে ভরা ছিল। ইবনে বতুতা জ্বরে আক্রান্ত হলেন। জ্বরের অজুহাতে তিনি সহজেই ডাকাতদের হাত থেকে রেহাই পেতেন। যাত্রা বিরতিতে ইবনে বতুতা বিয়ে করতেন। এভাবে এ যাত্রা পথেই তিনি ১০টি বিয়ে করেন এবং তাদের তালাকও দেন।

মিশরে পৌছে ইবনে বতুতা আইনের উপর পড়ালেখা শুরু করেন। এসময় তিনি কায়রো শহর, আলেকজান্দ্রিয়া ভ্রমণ করেন । এরপর তিনি হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান। হজ এবং আইনের উপর পড়ালেখা-দুটিই সম্পন্ন হল। এখানেই থেমে যেতে পারতো ইবনে বতুতার জীবন। কিন্তু না, তিনি নতুন সংকল্প করলেন। সারাবিশ্বের মুসলিম সাম্রাজ্য ঘুরে দেখবেন।

ইবনে বতুতার এরপরের বছরগুলোর ভ্রমণ ঝড়ের বেগে হয়েছে। তিনি একটি উট কাফেলার সাথে যুক্ত হয়ে ইরাক ও পারস্য (যা বর্তমানে ইরান ) ভ্রমণ করেন। এরপর আরও উত্তরের দিকে পৌছান, যা বর্তমানে আজারবাইজান। তিনি ইয়েমেনে গিয়ে আফ্রিকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে একটি জলযান নির্মাণ করেন। এ জলযানে চড়েই তিনি আফ্রিকার মেগাদিসু, সোমালি নগর, কেনিয়া এবং তাঞ্জিনিয়া ভ্রমণ করেন।

আফ্রিকা সফর শেষে এবার তিনি মনস্থির করলেন যে ভারত ভ্রমণ করবেন। তার আশা ভারতে গিয়ে সে কাজী বা মুসলিম বিচারকের চাকরি করবেন। আফ্রিকা থেকে তিনি পূর্বের দিকে যাত্রা পথে মিশর, সিরিয়া এবং তুরস্কে পৌছান। তিনি সব সময় মুসলিম শাসিত অঞ্চলে যেতেন। মুসলিম পন্ডিত হওয়ায় তিনি সেখানে বেশ আতিথেয়তা পেতেন। এসব অঞ্চলের রাজারা তাকে বিভিন্ন ধরণের উপহার দিতেন।

তুরস্ক থেকে ইবনে বতুতা যান উজবেগ-এ। সেখানকার আদালত কতৃক তিনি সংবর্ধিত হন। এই প্রথম তিনি কোন অমুসলিম শাসিত দেশে গেলেন। এখানে বতুতা এক মাস অবস্থান করেন।

ইবনে বতুতা আফগানিস্থান ও হিন্দুকুশ পার হয়ে ১৪৩৪ সালে ভারতে এসে পৌছান। ভারতে তখন সুলতান ছিলেন মুহাম্মদ তুঘলগ। মুসলিম এ শাসক ইবনে বতুতাকে কাজী বা মুসলিম বিচারক হিসেবে চাকরি দেন। ইবনে বতুতা উপভোগের সাথেই কয়েক বছর এ চাকরি করেন। ভারতে তিনি বিয়ে করেন এবং পিতাও হন।
১৩৪১ সালে বতুতার সামনে চীন যাওয়ার সুযোগ চলে আসলো। মাইম নামে এক সুলতান তার বিরোধীদের উপর খুব অত্যাচার করছিল। সে তার বিরোধীদের হাতি দিয়ে পিষে মারতো কিংবা শুড় দিয়ে ছুঁড়ে ফেলতো। চীনে অবস্থিত মঙ্গোলিয়ান আদালতে অভিযোগ জানানোর জন্য সুলতান তুঘলগ, ইবনে বতুতাকে তার প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। চীনে যাওয়ার জন্য ইবনে বতুতাকে অনেক উপহার সামগ্রী ও দাস দেওয়া হয়।

চীনে যাত্রা বতুতার জীবনে সবচেয়ে বেধনাবিধুর ছিল। হিন্দু রাজারা বতুতার এ যাত্রা পথে নানা ভাবে হেনস্থা করে। এরপর তারা ডাকাত দ্বারা অপহৃত হন। এসময় ডাকাতরা তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ে। এরপর তিনি কালিকট বন্দরে পৌছানোর আগেই ঝড়ে জাহাজ ডুবে যায় এবং তার অনেক সঙ্গী নিহত হন।

সুলতানের কাছে তিনি ফিরে এলে সুলতান তাকে মালদ্বীপ যাত্রার জন্য জলযান নির্মাণের কথা বলেন। এরপর মালদ্বীপ গিয়ে আবারো কাজী হিসেবে মনোনীত হন। এখানেই তিনি সবচেয়ে বেশিদিন বসবাস করেন। মালদ্বীপ থাকা অবস্থায় তিনি আবারো চীন ভ্রমণের সংকল্প করেন।

১৩৪৫ সালে ইবনে বতুতা চীনে পৌছান। চীনে পৌছানোর আগে তিনি শ্রীলঙ্কায় যাত্রা বিরতি দেন। চীনকে তিনি পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসেবে মন্তব্য করেন।

ইবনে বতুতা ১৩৪৯ সালে যখন দেশে ফিরলেন, তখন তারা মা-বাবা উভয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। দেশে যাওয়ার পর তিনি আবারো বিশ্ব ভ্রমণের জন্য মনস্থির করেন। এরপর তিনি মালি, সাহারা,তিমভুতকু প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণ করেছেন।

বিশ্ব বিখ্যাত এ ভ্রমণকারী বাংলাদেশকেও বাদ রাখেন নি তার ভ্রমণের তালিকা থেকে। ইসলাম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রা:)-এর সাথে দেখা করার জন্য তিনি এ অঞ্চলে আসেন।

১৩৫৪ সালে আবার যখন তিনি মরোক্কোতে ফিরে আসেন তখন মরোক্কোর সম্রাট তার ভ্রমণ কাহিনি লেখার নির্দেশ দেন। ইবনে জুজাই নামের এক লেখকের কাছে তিনি তার ভ্রমণের কথা বলেন যিনি এসব কথা লিপিবদ্ধ করেন। এ বইটি মরোক্কোতে ‘রিহলা’ নামে পরিচিত যার বাংলা হল ‘ভ্রমণ’।

১৩৬৮ সালে তিনি মারা যান। যে মানুষটি সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন, তিনি হয়ে গেলেন এক জায়গায় স্থির।

হিস্ট্রি ডট কম অবলম্বনে

852 ভিউ

Posted ১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com