বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঈদবাজার ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি

শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
26 ভিউ
ঈদবাজার ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি

কক্সবংলা ডটকম(২৯ মার্চ) :: গত চার বছরের মধ্যে প্রথম দুই বছর করোনা মহামারির কারণে ঈদবাজার ছিল মন্দা। করোনা কেটে যাওয়ার পরের বছরও ঈদবাজার তেমন জমেনি। সর্বশেষ গত বছর ব্যবসায়ীরা মোটামুটি ব্যবসা করেছিলেন। তবে ঈদ ঘিরে চলতি বছর খুব ভালো বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার রোজার শুরু থেকে তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে। প্রথম রোজা থেকেই এবার ঈদবাজার জমে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ঈদবাজার ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এবারের ঈদবাজারে আড়াই লাখ থেকে পৌনে তিন কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে। এর মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারেই লেনদেন হতে পারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর বাইরে ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, মিষ্টির বাজার, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি অর্থ যোগ হবে।

পাশাপাশি সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদ বোনাস এবং দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবীদের ঈদ বোনাসও যুক্ত হবে ঈদবাজারে। ঈদ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, দেশের অর্থনীতিও তেমনি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

প্রতি বছরই ঈদ উৎসবকে ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ে। সরকারি-বেসরকারি তথ্য মতে রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। ঈদ ঘিরে কেনাকাটার এই আবহ অব্যাহত থাকে ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত। সব মিলে এই সময়ে এবার দেশের অর্থনীতিতে আড়াই থেকে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন এফবিসিসিআইর এক সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘সাধারণত রোজার ঈদ ঘিরে ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে এবারের রোজার ঈদ ঘিরে সেটি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারেই যোগ হবে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

ধনীদের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ যুক্ত হবে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য হবে ১ হাজার কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া আয়ের হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাসও ঈদের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। এ ছাড়া রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদের সময় প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস।

ঈদে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বিশেষ ভোজ্য তেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই এবং পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ টন, চিনি সোয়া ২ লাখ থেকে পৌনে ৩ লাখ টন, ডাল ৬০ হাজার টন, ছোলা ৫০ হাজার টন, খেজুর ১৩ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন, রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া হয়।

ঈদ উৎসবের অর্থনীতিতে দেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২৫ লাখ দোকান, শপিংমল ও বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে প্রায় ৬৫ লাখ জনবল কাজ করছে। সংগঠনটির হিসাবে নিম্নে একজন কর্মীকে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা ধরে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হয়।

দেশের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপনে লাখো কোটি টাকা নগদ লেনদেন হয় নতুন পোশাক ও বিশেষ খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ে। এক-অষ্টমাংশ মানুষ গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাতায়াত খরচ, গরিব ও অসহায়দের মধ্যে জাকাত বিতরণ এবং বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেওয়া হয়। বাজারে একসঙ্গে নগদ টাকার এত চাহিদা বাড়ে যে, গ্রাহকের দাবি মেটাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কল মার্কেট থেকে কঠিন সুদে টাকা জোগাড় করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার নতুন নোটের খাজাঞ্চিখানার দুয়ার খুলে দিতে হয়।

বিপুল অর্থ লেনদেনের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসে। ব্যাংকিং খাতে লেনদেন ব্যাপক হারে বাড়ে। ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথ থেকে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। মোবাইল লেনদেন প্রতিদিন বাড়ছে। এদিকে মানুষের চাহিদা পূরণে বাজারে অতিরিক্ত নতুন নোট ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩১ মার্চ থেকে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের ৮০টি শাখা থেকে মিলবে নতুন টাকার নোট।

দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের অনলাইন বাজার। নিত্যনতুন পণ্যের সমাহার, বিভিন্ন ছাড় ও উপহারের কমতি নেই ভার্চুয়াল বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে অনলাইনে ঈদের বাজার জমজমাট। প্রতি বছরই ঈদের সময় অনলাইনে কেনাকাটা বাড়ছে। ফলে এবার শুধু অনলাইনে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রির আশা করা হচ্ছে।

ঈদবাজারের বড় অংশজুড়ে রয়েছে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী। পোশাকের মধ্যে পাজামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, লুঙ্গি ও টুপি প্রধান। এরপর রয়েছে জুতা, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার। আর উচ্চবিত্তের জন্য রয়েছে সোনা, ডায়মন্ডের অলংকার ও গাড়ি। সবার জন্য অপরিহার্য সেমাই, চিনি, ছোলা, ডালসহ অনেক ভোগ্যপণ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত এবং ঋণের হিসেবে গ্রামের অংশ শহরের তুলনায় অনেক কম। গ্রাম থেকে যতটুকু আমানত নেওয়া হয়, তার অর্ধেক বিনিয়োগ হচ্ছে শহরে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এ চিত্র উল্টে যায়। শহরের মানুষ হয় গ্রামমুখী। ফলে সারা বছর স্তিমিত থাকা গ্রামের হাট-বাজার ঈদের কয়েক দিনে দারুণ চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

ঈদবাজার সম্পর্কে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এবারের ঈদবাজারকে ঘিরে আমরা খুব আশাবাদী। ইতিমধ্যে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় দোকান, শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকান পর্যন্ত কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠেছে।

ঈদবাজারকে ঘিরে ব্যবসায়ীরাও এবার আগে থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। করোনা মিলে গত ক’বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী ঈদবাজার জমেনি। ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করতে পারেননি। এবার একেবারে রোজার শুরু থেকে ঈদবাজার জমে ওঠায় আমরা আশা করছি আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হবে।’

অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, এবারের ঈদে অর্থনীতি অনেক চাঙ্গা হবে। ইতিমধ্যেই তার নমুনা দৃশ্যমান।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ‘বছরের দুটি ঈদ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কুরবানির ঈদ জমে পশুর বাজারকে ঘিরে, আর রোজার ঈদ জমে পোশাক, প্রসাধন থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য, জাকাত-ফিতরা ইত্যাদি মিলে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বাড়ে টাকার প্রবাহ। ঈদকে ঘিরে রেমিট্যান্স প্রবাহও চাঙ্গা হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিও গতিশীল হয় ঈদকে ঘিরে। সুতরাং বলাই যেতে পারে, ঈদকে ঘিরে এবার দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’

26 ভিউ

Posted ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com