রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঈদুল আযহার ছুটিতে কক্সবাজারের উত্তাল সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটক

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০১৯
279 ভিউ
ঈদুল আযহার ছুটিতে কক্সবাজারের উত্তাল সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটক

বিশেষ প্রতিবেদক(১৩ আগস্ট) :: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের প্রতি আকৃষ্ট সারাদেশের ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষ। এখানকার সমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বছর জুড়ে পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মত। ঈদ,পূজা,বড়দিন সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসের ছুটিতে ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষের পাদচারণায় মুখর থাকে সমুদ্র সৈকত সহ কক্সবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলো।এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব মিলে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে ১৩ আগস্ট থেকে যেন ঢল নেমেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল কক্সবাজারে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বেশ উত্তাল বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতও। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। কিন্তু তাতেও বসে নেই ভ্রমণে আসা নানা বয়সী লাখো পর্যটক। তাঁরা সমুদ্রের কোমরপানিতে নেমে গোসল করছেন। দিচ্ছেন বালুচরে গড়াগড়ি। হইচই করছেন। কেউ নিজের ছবি তুলেছেন। কেউ আবার প্রিয়জনদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন। কেউ ঘুরে ঘুরে এখানকার সৈকতের সৌন্দর্য অবোলকন করছেন।

সমুদ্রবিলাসী এসব পর্যটকের দিকে তীক্ষ্ম নজর ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীর। কারণ এই সৈকতে গোসলে নেমে দুই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয় গত শনিবার।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ১২ হাজার পর্যটক সমুদ্রে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন। কেউ কেউ টিউবে গা ভাসিয়ে চলে যাচ্ছেন গভীর সাগরের দিকে। সৈকতের সি-গাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টেও একই দৃশ্য। ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা চেষ্টা করেও তাঁদের থামাতে পারছে না।

ঘটনাস্থলে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মনির বললেন, পর্যটকদের সামলানো কঠিন। কেউ কারও কথা শুনছেন না। এই জায়গায় শনিবার দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। এ কথাও কারও কানে যায় না। তবুও আমরা সতর্ক। নিরাপত্তায় সৈকত ও পর্যটন স্পটগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে গোসল করছিলেন শতাধিক পর্যটক। মুহূর্তে একটি বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় কয়েকজন ভেসে যাচ্ছিলেন। লাইফগার্ডের কর্মীরা তাৎক্ষণিক সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে উদ্ধার করলেন কয়েকজনকে। এর মধ্যে আছেন কাজী শফিকুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছেলে কাজী সাদমান (১৬)। তাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে গোসলে নামা প্রসঙ্গে কাজী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুল হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে নামা ঠিক হয়নি।’

বিকাল চারটার দিকে লাখো পর্যটকে ভরপুর ছিল সৈকতের পুরো চার কিলোমিটার এলাকা। তখনো কিছু পর্যটক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে গোসলে ব্যস্ত ছিলেন। তবে বেশির ভাগ পর্যটকই বালুচরে পায়চারি করেই সময় কাটান। অনেকে পাশের ঝাউবাগানে গিয়ে আপনজনদের সঙ্গে আড্ডা-গল্পগুজবে সময় কাটান। ছবি তুলেছেন ইচ্ছেমতো, রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে কালো মেঘে ঢাকা সাদা আকাশের সঙ্গে মিতালি করে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আলমগীর ইসলাম (৩৫) বলেন, উত্তাল সমুদ্র দেখতেই তাঁরা কক্সবাজার আসেন। সকালে লাবণী পয়েন্টে পা দিয়েই শোনেন শনিবার এই সৈকতে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী চোরাবালিতে আটকে মারা গেছেন। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে পর্যটকদের নিরাপদে গোসল করার মতো একটা ব্যবস্থা নেই, ভাবতে অবাক লাগছে। পুরো সৈকতের কোথাও কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা নেই।

সি সেইফ লাইফ গার্ড কক্সবাজারের সুপারভাইজার মো. ওসমান গণি বলেন, ১২০ কিলোমিটার সৈকতে শুধু লাবণী পয়েন্টের এক কিলোমিটারে প্রশাসন ‘সুইমিং জোন’ ঘোষণা দিয়েছে। বাকি সৈকত অরক্ষিত। সেখানে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে তাৎক্ষণিক উদ্ধারের ব্যবস্থা নেই। এখন ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত উপেক্ষা করে অরক্ষিত সৈকতে ঝাঁপ দিচ্ছেন হাজারো পর্যটক। সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে গুপ্ত খালের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে কেউ আটকা পড়লে উদ্ধার করাও কঠিন।

ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদে টানা সাত দিনের ছুটি কাটাতে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটকের কক্সবাজার ভ্রমণে আসার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৭২ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা আছে। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজারে এসেছেন এক লাখের বেশি পর্যটক।

ফখরুল ইসলাম বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল। উত্তাল সমুদ্রে না নামতে পর্যটকদের সতর্ক করে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে লাল নিশানা (পতাকা) উড়ানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকের সেদিকে নজর নেই। তাঁরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে ঝাঁপ দিচ্ছেন। লাখো পর্যটককে সামাল দিতে ১০২ জন ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

পর্যটকদের সমুদ্র স্নান। ছবি: প্রথম আলো

গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম ও রফিক মাহমুদ। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে কবিতা চত্বর সৈকতে জোয়ারের ধাক্কায় ভেসে আসে রফিক মাহমুদের মরদেহ। পরের দিন রোববার সকাল আটটায় নাজিরারটেক উপকূলে ভেসে আসে আরিফুল ইসলামের মরদেহ। আরিফুল রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং রফিক চট্টগ্রাম ইসলামিক বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। দুজনের বাড়ি কক্সবাজার শহরে। ঈদের ছুটিতে এসে তাঁরা আট বন্ধু সৈকতে গোসলে নামেন। বিশাল ঢেউ তাঁদের গভীর সাগরের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে কয়েকজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা গেলেও দুই শিক্ষার্থী মারা যান।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। আজ এক দিনে সৈকতে সমবেত হয়েছেন লাখো পর্যটক। আগামী তিন দিনে আসবেন আরও অন্তত চার লাখ। সব মিলিয়ে আগামী সাত দিনে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসার কথা রয়েছে।

পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি ছুটছেন মেরিন ড্রাইভ সৈকত দিয়ে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী, টেকনাফ সৈকত, মগ জমিদার কন্যার প্রেম কাহিনির মাথিন কূপ, নাফ নদীর জালিয়ারদিয়া, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ইত্যাদি। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, সোনাদিয়া ভ্রমণ বন্ধ আছে।

৮৪ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ ঘুরে এসে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, সেখানেও বিপুল পর্যটকদের সমাগম তিনি দেখেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশি টহল জোরদার রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো কামাল হোসেন জানান, ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটকরা ঘুরতে আসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র : আব্দুল কুদ্দুস রানা,দৈনিক প্রথম আলো

279 ভিউ

Posted ১১:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com