মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৫ ডিসেম্বর) :: গর্ভবতি মহিলাদের নিরাপদ প্রসুতি সেবার মাধ্যমে প্রসবকালীন সময়ে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে উখিয়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ডিএসএফ প্রকল্প চালু হয় ২০০৮ সালে।
হঠাৎ করে অর্থ বরাদ্দের কারণ দেখিয়ে উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার কারনে ডিএসএফ প্রকল্পের সেবা প্রাপ্ত প্রায় দেড় হাজার প্রসুতি তাদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ভাতা ও নবজাতকের উপহার সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ডিএসএফ প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনিয়ম,দুর্নীতি,লুটপাটের কারনে উক্ত প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।
উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, ২০০৮সালে উখিয়া,রামু,টেকনাফে একই সাথে এক অনাড়ম্বর অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে ডিএসএফ প্রকল্প চালু হয়। প্রথম দিকে গ্রামের অজ্ঞ মহিলারা ডাক্তার দিয়ে প্রসব করানো কোন ভাবেই মেনে নেয়নি।
ফলে প্রকল্পের শুরুতেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন এলাকায় সভা,সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে ডিএসএফ প্রকল্পের উপকারিতা এবং এ প্রকল্পের আওতায় সন্তান প্রসব করলে নগদ টাকা ও নবজাতকের উপহার সামগ্রী দেওয়ার লোভ লালসা দেখালে স্থানীয় মহিলারা ডিএসএফ প্রকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে মানদাতার আমলের গ্রাম্য ধাতৃ দিয়ে শিশু প্রসবের কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রকল্প চালু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রসব উত্তর, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী কোন মা ও শিশুর মৃত্যু হয়নি। যে কারনে গর্ভবতি মহিলারা এ প্রকল্পের রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ধর্ণা দিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, ব্যাপক লুটপাট,অনিয়ম,দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডিএসএফ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
ডিএসএফ প্রকল্পের শুরু থেকেই কর্মরত দায়িত্বরত কর্মকর্তা বর্তমান সেনিটারী ইন্সপেক্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত নুরুল আলম জানান, ২/৩ বছর থেকে ডিএসএফ প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, ডিএসএফ প্রকল্পের সাহায্যে প্রসুতি সেবা গ্রহন করেছে এমন প্রায় দেড় হাজার মহিলা তাদের ভাতাদি পায়নি।
উখিয়া স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে বরাদ্দ না পাওয়ার কারনে প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া গ্রামের খুরশিদা বেগম অভিযোগ করে জানান, সে প্রসুতি সেবার লক্ষ্যে উখিয়া ডিএসএফ প্রকল্পের ২০১৫সালের অক্টোবরে রেজিষ্ট্রেশন করে যথাযথ সময়ে সন্তান প্রসব করেছেন। বর্তমানে তার সন্তান সুস্থ রয়েছে। তবে সরকারি বরাদ্দকৃত আড়াই হাজার টাকা ও নবজাতকের বরাদ্দকৃত উপহার সামগ্রী পায়নি।
একই অভিযোগ কুতুপালং গ্রামের নছিমা খাতুনের। সে জানায় গত ৩ বছর আগে তাকে একটি বই দেওয়া হয়েছিল। সন্তান প্রসব করার পর সন্তান সহ হাসপাতালে বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করার পরও সে ভাতা পায়নি। এভাবে বেশ কয়েকজন মহিলা প্রসুতি ভাতার জন্য হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে ডিএসএফ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, প্রকল্প সমন্বয়কারী ও সাঙ্গপাঙ্গদের লুটপাট বাণিজ্যের কারণে উক্ত প্রকল্পটি এখন বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য হানিফ আজাদ জানান, প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ার কারনে উখিয়া ও তৎসংলগ্ন আসে-পাশের হাজার হাজার গর্ভবতি সরকারি প্রসুতি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Posted ৭:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta