বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

উখিয়ায় পাহাড় ধসে মৃত্যূর ঝুঁকিতে হাজারো পরিবার

রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
372 ভিউ
উখিয়ায় পাহাড় ধসে মৃত্যূর ঝুঁকিতে হাজারো পরিবার
মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(১৭ জুন) :::: ::সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে রাঙামাটিসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক নিহতের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলেও টনক নড়েনি উখিয়ার স্থানীয় প্রশাসনের। এখানকার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসতবাসরত লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। ফলে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে হাজারো পরিবার।

বিগত দিনে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় ২০ জন নারী-পুরুষ-শিশুর অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে বর্ষা নামলে প্রশাসন ও বনবিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার প্রচারণা চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থাপনা তৈরিতে বিধি মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরই ফলে এসব এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকার পাহাড়গুলোর ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, এ দুটি উপজেলায় বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়গুলোর ৭৫ শতাংশই বালুমিশ্রিত। যেখানে বসতি তো দূরের কথা, কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্যও উপযুক্ত নয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ’ উখিয়া শাখার নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, সরকারি বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব এলাকার পাহাড় ও জমিজমাগুলো ‘সংরক্ষিত’ হলেও কতিপয় অসাধু বনকর্মীদের কারণে বিস্তীর্ণ বনভূমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেছে। জবর দখল ও পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তনের পাশাপাশি পাহাড়ের ওপরে, ঢালুতে ও নিচে অসংখ্য বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিহীন হওয়ায় ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও সংশোধিত-২০১০ এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন করা যাবে না।’ এ আইনে পাহাড় কাটার অপরাধে সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা বনবিভাগ পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউকে শাস্তির আওতায় আনেনি। যার ফলে উখিয়ায় পাহাড় কেটে স’াপনা তৈরি করে বসবাসের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

উখিয়া ও ইনানি বন রেঞ্জের আওতাধীন মনখালী, ছেপটখালী, জুম্মাপাড়া, শফির বিল, ইনানি জুমের ছড়া, সোনাইছড়ি, পাইন্যাশিয়া, তুতুরবিল, হরিণমারা, তেলখোলা, মোছার খোলা, হাতিরঘোনা, মধুরছড়া, মাছকারিয়া, দোছরী, থিমছড়ি, তুলাতলি, সোনারঘোনা, ডেইলপাড়া, ভালুকিয়া আমতলী, চিকনঝিরি পাগলির বিলসহ প্রায় শতাধিক পাহাড় দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করছে হাজারো পরিবার।

বনবিভাগের তথ্যমতে, উখিয়া ও ইনানি রেঞ্জের আওতাধীন বনভূমিতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি অবৈধ স’াপনা গড়ে উঠেছে। ২০১০ সালের ১৫ জুন প্রবল বর্ষণ ও সৃষ্ট বন্যায় পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গ্রামে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ জন, সাদৃকাটা এলাকায় ১ জন ও ছেপটখালী গ্রামের একজনসহ ৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু পাহাড় ধসে ঘরচাপা পড়ে আহত হয়েছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে বিশাল আকারের একটি পাহাড় ধসের ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হলেও দরিদ্র পরিবারগুলো সরে যেতে পারেনি। আর থিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে তিনজনসহ ৭ জন নিহত হয়। এসময় শত শত ঘরবাড়ি পাহাড়ের নিচে মাটিচাপা পড়ে। ২০১২ সালের ২৭ জুন ভালুকিয়া আমতলী চিকনঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় ১১ জন নিহত হয়। এসময় ঘরবাড়ি ও গাছপালা চাপা পড়ে প্রায় শতাধিক লোকজন আহত হয়।

ইনানি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়া জানান, ‘বনকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে স’ানীয় লোকজন পাহাড় দখল করে স’াপনা তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে।’

ইনানির সংরক্ষিত বনরক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার জানান, ‘বনকর্মীরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে বনভূমির দখল বিক্রি করার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

উখিয়ার সদর বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘স্থাপনা তৈরির খবর পেয়ে তা তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ করা হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় আবারো স্থাপনা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে তারা।’

উখিয়া উপজেলা বনরক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ‘বনভূমি দখল করে যত্রতত্র স’াপনা তৈরি, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনৈতিকতা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। যে কারণে বর্তমানে বনভূমি রক্ষা করা বনকর্মীদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। দরিদ্র পরিবারগুলো দুর্যোগের সময়ও বাড়ি ছাড়ছে না। এজন্য সরকারকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত ভূমিহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে প্রতি বছর পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা সম্প্রসারিত হবে – তাতে সন্দেহ নেই।’

372 ভিউ

Posted ১:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com