বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের নতুন করে ফাইল খোলা বন্ধ

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
124 ভিউ
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের নতুন করে ফাইল খোলা বন্ধ

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ নভেম্বর) :: উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে অর্ধলাখ শিক্ষার্থী বিদেশ যাচ্ছেন। তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকই নতুন করে খুলছে না তাদের ফি পাঠানো-সংক্রান্ত ফাইল। এতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ডলার পাঠাতে না পারায় অনেকেরই ভর্তি বাতিল হয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

বিদেশে উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ পাঠান। এজন্য ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের একটি ফাইল খুলতে হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হয়, ব্যাংকগুলোর এমন সব এডি শাখা থেকেই ফাইল খোলার সুযোগ রয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ওই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি ও বিদেশী খাতের প্রথম সারির ব্যাংকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলে। এক্ষেত্রে অগ্রগামী ব্যাংকগুলো হলো ইস্টার্ন, ব্র্যাক, দ্য সিটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট (এমটিবি), ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম, প্রিমিয়ার ও সাউথইস্ট। বেসরকারি খাতের আরো এক ডজনের মতো ব্যাংক এসব ফাইল খোলে। তবে ডলার সংকটের কারণে সম্প্রতি প্রায় সব ব্যাংকই এসব ফাইল খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু ব্যাংক এখনো চালু রাখলেও প্রভাবশালীদের তদবির লাগছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের জন্য গত বছর ৫ হাজার ৩৯০টি ফাইল খুলেছিল বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটি খুলেছে ৭ হাজার ৮৪০টি নতুন ফাইল। তবে গত মাসের শেষের দিক থেকে নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বণিক বার্তাকে বলেন, একটি ফাইল খুললে তিন-পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে নিয়মিত ডলার পাঠাতে হয়। দেশে এখন ডলারের তীব্র সংকট চলছে। এ কারণে আমরা আপাতত নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি। বিদ্যমান বা পুরনো যেসব ফাইল খোলা হয়েছিল, সেগুলো সচল রাখা হয়েছে।

ডলার সংকটের কারণে স্টুডেট ফাইল খোলা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান মিউচুয়াল স্ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী একজন ছাত্র ২০-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশ পাঠান। পাঁচজন ছাত্রের টিউশন ফি পাঠানো হলে সেটির পরিমাণ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ব্যাংকের জন্য ১ লাখ ডলার অনেক মূল্যবান। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আপাতত আমরা বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কতসংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন তার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়েছেন উচ্চশিক্ষা নিতে।

এর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটিতে গিয়েছেন ৮ হাজার ৬৬৫ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ৫৪৮, অস্ট্রেলিয়ায় ৫ হাজার ৬৪৭, কানাডায় ৫ হাজার ১৩৬, জার্মানিতে ৩ হাজার ৯৩০, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১৯৪, ভারতে ২ হাজার ৭৫০, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ১৭৬ ও সৌদি আরবে ১ হাজার ১৬৮ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গত বছর উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েছেন।

বিদেশগামী শিক্ষার্থীর পরিমাণ চলতি বছর আরো অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও এটা উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেশ থেকে ২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাঠানো হয়। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঠানো হয় ২৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা বাবদ, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিভিন্ন ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া একজন ছাত্রের জন্য প্রতি বছর ৫০-৬০ হাজার ডলার পাঠাতে হয়। স্টুডেন্ট ফাইল খোলার দিক থেকে সামনের সারিতে থাকা ব্যাংকগুলোর বছরে ২-৩ কোটি ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে হচ্ছে। ডলার সংকট তীব্র হওয়ায় ব্যাংকগুলো নতুন করে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার দায় বাড়াতে চাইছে না। এ কারণে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈধ পথ বন্ধ হয়ে গেলে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে ডলার পাঠানো উৎসাহিত হবে। বিদেশগামী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেছিলেন ইকবাল হোসেন। দুই বছরের বেশি সময়ের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। দীর্ঘ পরিশ্রমের চেষ্টায় ভর্তির নিশ্চয়তাও পেয়েছেন। তবে ডলার সংকটের কারণে ইকবাল হোসেন এখন ব্যাংকে ফাইল খুলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে এ শিক্ষার্থী বলেন, পাঁচটা ব্যাংকে গিয়েও স্টুডেট ফাইল খুলতে পারিনি। ২৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফার্মেশন ফি পাঠানোর শেষ দিন। তাই শেষ পর্যন্ত কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা করেছি।

যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য ইস্টার্ন, ব্র্যাক, ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংকে তারা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কেউই রাজি হয়নি। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে তাদের অনেকে হুন্ডিকেই বেছে নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ডলার সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে স্টুডেট ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি। দেশের প্রায় সব ব্যাংকই ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে। আবার প্রভাবশালী কেউ তদবির করলে সেটি খুলতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ঘটনা উৎসাহিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক পাইওনিয়ার নয়। আমাদের কিছু শাখায় এ ধরনের ফাইল খোলা হতো। গত বছর থেকে সেবাটির আওতা বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের ব্যাংকে এসে এখনো কেউ ফেরত যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনও বলছেন, সাউথইস্ট ব্যাংক এখনো স্টুডেন্ট ফাইল খোলা বন্ধ করেনি। বিদ্যমান ফাইলগুলোও ডলার পরিশোধের মাধ্যমে সচল রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ অর্থবছর রেকর্ড ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলে বাংলাদেশ। ফলে অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সরকারের চলতি হিসাবের ঘটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয় গত অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই আমদানি দায় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানির এলসি খোলায় বিভিন্ন শর্তও আরোপ করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্নমুখী তত্পরতায় আমদানি কিছুটা কমে এলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়নি। উল্টো দিন যত যাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের সংকটও তত বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবে ঘাটতি এবং বিওপির ঘাটতি আরো বড় হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৭৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ঘাটতির পরিমাণ ৭৫৪ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ৩৬১ কোটি ডলার ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই বিওপির ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি মাত্র ৮১ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ ছিল।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অক্টোবরে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় উভয়ই ৭ শতাংশের বেশি হারে কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান দুই উৎসেই পতন হওয়ায় স্ফীত হয়েছে বিওপির ঘাটতি। এটি পূরণ করতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে। যদিও গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।

124 ভিউ

Posted ১২:১০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com