কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুলাই) :: উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তদারকি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের দাবি দীর্ঘদিনের। এ লক্ষ্যে ইউজিসির পক্ষ থেকে সরকারকে কয়েক দফায় প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বছর কয়েকটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের কথা বলেছেন। এর পরও ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
জানা যায়, সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের প্রস্তাব ওঠে। এর পর ইউজিসির পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাব দফায় দফায় পরিমার্জন করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের জোর দাবি সত্ত্বেও এক দশকে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১০ মাস পার হলেও এ রূপান্তরকরণ প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আবারো স্থবির হয়ে পড়েছে কমিশনের রূপান্তর কার্যক্রম।
স্বাধীন বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা তদারকির জন্য ১৯৭৩ সালে গঠন হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। সে সময় দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয়টি। এর মধ্যে চারটিই ছিল স্বায়ত্তশাসিত। অর্থাত্ এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আইনে পরিচালিত হতো। সে হিসেবে তত্কালীন ইউজিসির মাধ্যমে হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নের কাজ পরিচালনা করত সরকার।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষা কার্যক্রম তদারকির জন্য ইউজিসির কাঠামোয় তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর না করাকে দেশের উচ্চশিক্ষার দুরবস্থার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ইউজিসির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। সে সময় সরকারের অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্নের বাইরে ইউজিসির তেমন কোনো কাজ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সে প্রেক্ষাপট নেই। পাবলিক-প্রাইভেট মিলে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন প্রায় দেড়শ।
এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সার্বিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য যে কাঠামো প্রয়োজন ইউজিসির তা নেই। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পর্যাপ্ত আইনি সক্ষমতাও নেই ইউজিসির। ইউজিসির স্বল্প জনবলের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর কাজের চাপটা বেশি। এতে করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের জন্য চার বছর চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সংশোধন ও পরিমার্জন করে তিন দফায় খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এর পর থেকে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর হচ্ছে শুনেই যাচ্ছি। কিন্তু এখনো হতে দেখলাম না। আমি জানি না কী কারণে এ অনীহা। তবে এতটুকু বলতে পারি, উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ ও দেশের উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বমণ্ডলে তুলে ধরতে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশের ইউজিসি। ১৯৭৩ ও ২০১৫ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক তদারকির জন্য ইউজিসির প্রচলিত কর্মপরিধির বিস্তৃতি এবং ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি। দেশের উচ্চশিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।’
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে উচ্চশিক্ষার পরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইউজিসির পরিসর ছোট থেকে গেছে। উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা
কমিশনে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তাই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিগগিরই ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে গৃহীত কার্যকর কোনো উদ্যোগ বিষয়ে জানা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় অনুুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে এর বেশি বলতে রাজি হননি তিনি।
Posted ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta