বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের ঐতিহাসিক হোটেল শৈবাল ইস্যু নিয়ে পর্যটনমন্ত্রীকে কে কি বলেছেন

বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮
491 ভিউ
কক্সবাজারের ঐতিহাসিক হোটেল শৈবাল ইস্যু নিয়ে পর্যটনমন্ত্রীকে কে কি বলেছেন

দীপক শর্মা দীপু(২৩ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের ঐতিহাসিক পর্যটন ভেন্যু হোটেল শৈবাল বেসরকারি খাতে দেয়ার বিষয়ে এক মতবিনিময় মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। কক্সবাজারের সুধী সমাজের সাথে বৈঠকে নানা শ্রেনি পেশার সচেতন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ওরিয়েন্ট গ্রুপের কর্মকর্তারা হোটেল শৈবালকে নিয়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান কবির ওরিয়েন্ট গ্রুপকে শৈবাল দেয়ার জন্য যুক্তি দিয়ে বক্তব্য রাখেন। এর পর জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য আহবান জানান।

শুরুতে জাতীয় সংসদ সদস্য (কক্সবাজার সদর- রামু আসন) সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, তিনি প্রধান মন্ত্রীর মাধ্যমে হোটেল শৈবাল হস্তান্তর চুড়ান্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। পরে ২১ জানুয়ারী পর্যটন মন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকের মাধ্যমে মন্ত্রীকে কক্সবাজারে সরজমিনে পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে বৈঠকের আহবান জানান।

এমপি কমল ৪টি শর্ত দিয়ে বেসরকারি খাতে হোটেল শৈবাল দেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। শর্ত ৪ টি হচ্ছে ১৩৫ একর জমির মধ্যে ৩০ একর জমি উন্মুক্ত রাখা, এটি বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা. ৯০ ভাগ স্থানীয়দের চাকুরি দেয়া, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ফ্রি প্রবেশের অনুমতি দেয়া।

এর পর জেলা জাসদের সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল শৈবালের ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে শৈবাল, ঝাউবন ও সমুদ্র সৈকতের স্মৃতিময় ঘটনা তুলে ধরেন। হোটেল শৈবালের জমি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যাবেনা বলে তিনি যা উন্নয়ন করতে হয় সরকার করবে তাও পরিকল্পিকভাবে। তিনি প্রতি বছর শৈবালের এই সম্পত্তি থেকে প্রায় কোটি টাকা আয়ের হিসেব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন সরকার যেখানে বর্তমান লাভবান হচ্ছে অর্থাৎ শৈবাল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনো রয়েছে সেখানে এই শৈবাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার প্রশ্নই উঠে বলে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন।

এর পর কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম।তিনি বলেন, পর্যটনের উন্নয়নের স্বার্থে হোটেল শৈবাল বেসরকারি খাতে দেয়া প্রয়োজন। পর্যটন উন্নয়ন হওয়া মানে কক্সবাজার উন্নয়ন হওয়া আর কক্সবাজার উন্নয়ন হওয়া মানে কক্সাবজারবাসী লাভবান হওয়া। তিনি পর্যটন ও কক্সবাজারের নানা উন্নয়নের স্বার্থে ওরিয়েন্ট গ্রুপকে শর্ত সাপেক্ষে হোটেল শৈবাল দেয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।

এর পর কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন হোটেল শৈবাল এর সম্পত্তি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যাবেনা।

তিনি উন্নয়নের বিপক্ষে নয় বলে জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার কক্সবাজারে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। সকল উন্নয়নের সাথে কক্সবাজারবাসী সাথে ছিলেন। তিনি ওরিয়েন্ট গ্রুপকে কক্সবাজার শহরের বাইরে গিয়ে পর্যটনের উন্নয়ন করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে শহরে পরিকল্পিত কোন সড়ক নেই, বড় কোন সড়ক নেই। কক্সবাজার এমনিতেই যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এখন বড় বড় হোটেল করলে যানজটের কারনে কক্সবাজারে বসবাস করা যাবেনা।

এর পর কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। তিনি কক্সবাজারবাসীর সাথে হোটেল শৈবালের যে আত্মিক সম্পর্ক তা আবেগের সাথে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে নি:শ্বাস ফেলার এখন কোন খালি জায়গা নেই। একমাত্র শৈবাল আছে।

এখানে ঝাউবন, ফুলের সুভাষ, পাখিদের কলকাকলি, দিঘীতে মাছের খেলা উপভোগ করাসহ সবুজ পরিবেশের সাথে স্থানীয়দের সময় কাটানো আর পর্যটকদের আনন্দ উপভোগ করা হয়। এটি কি পর্যটন নয়।

তিনি আবেগি হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, হোটেল শৈবাল আমাদের সন্তানের মতো। আমাদের সন্তানকে আমরা বিক্রি করবোনা, দত্তকও দেবোনা। শৈবাল নিয়ে অন্য কেউ নিয়ে ব্যবসা করবে। আর আমাদের টাকা দিয়ে শৈবালে যেতে হবে, এমনটি আমরা চাইনা। তিনি হোটেল শৈবালের সাথে বঙ্গবন্ধুর কি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে তা তুলে ধরেন।

এর পর কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, ছোট এই শহরে সাড়ে চারশ আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার কোন পর্যটক পাওয়া নেই। সব হোটেল বছরে নয় মাস খালি থাকে। এখানে আর কত হোটেল হতে হবে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে যে পরিমান খালি জায়গা থাকার কথা তা নেই। কক্সবাজার শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে।

যা গেছে তা গেছে এখন নতুন করে যেন আর কিছু হারাতে না হয়। তিনি হোটেল শৈবালকে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে পর্যটন শিল্পকে সম্প্রসারন করতে কক্সবাজার শহরের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টসহ আগ্রহী প্রতিষ্ঠানদের পর্যটন ব্যবসা করার আহবান জানান।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বিভিন্ন দেশের উদাহরন দিয়ে বলেন, নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ রেখে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হয়না। কক্সবাজার জেলাজুড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ। কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে গড়ে উঠা হোটেল টিউলিপ দেশ সেরা একটি পর্যটন হোটেলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই হোটেল শৈবালকে নিয়ে যে পরিকল্পনা তা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

এর পর সভায় ওরিয়েন্ট গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক লে. জেনারেল (অব) সাব্বির হোসেনকে কথা বলার সুযোগ দেন পর্যটন মন্ত্রী। প্রকল্প পরিচালক জানান, শৈবালের ১৩৫একর জমিতে কি কি হবে তা তুলে ধরেন। তিনি কক্সবাজারের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এমপি কমলের দেয়া যে শর্ত তা পূরণ করা হবে।

বিশেষ করে ৮০ ভাগ স্থানীয়দের চাকুরি দেয়া হবে। তার উপস্থাপনায় উঠে আসে এটি হবে বাংলাদেশে প্রথম একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান । যা হবে অত্যন্ত আকর্ষনীয় আর দৃষ্টিনন্দন। দেশি বিদেশী পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসবে এটি দেখার জন্য ছুটে আসবে।

ওরিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের এমন উপস্থাপনা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করলে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু তার প্রকল্পকে স্বাগত জানান। তবে তিনি একটি শর্ত দেন এটি হতে হবে কক্সবাজার শহরের বাইরে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব) ফোরকান আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে যা হবে তা পরিকল্পিত হতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু হবেনা। নতুন করে মাষ্টার প্ল্যানের মাধ্যমে আগামিতে সব বড় উন্নয়ন হবে। তিনি কক্সবাজারের নানা সমস্যার কথা মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।

পরে মহেশখালি-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ জেলার সব স্থানে পর্যটনের উন্নয়ন করতে হবে। শুধু কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণ হবেনা। হোটেল শৈবাল এখন যেমন আছে তেমন থাকুক। সরকার নিজে পরিকল্পিতভাবে এর উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে পারে। তিনি শৈবালের এই ইস্যু নিয়ে কোন প্রকার কাউকে রাজনীতি করার আহবান জানান।

সর্বশেষ পর্যটন মন্ত্রী একে এম শাহজাহান কামাল বলেন, কক্সবাজারবাসীর প্রাণের দাবি শুনেছি। আর এই দাবি প্রধান মন্ত্রীর কাছে যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দেবো। প্রয়োজনে কক্সবাজারের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে। তিনি কক্সবাজারকে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন অঞ্চলে পরিণত করবেন বলে ঘোষনা দিয়ে বলেন, কক্সবাজার হবে কাশ্মিরের মতো ভুস্বর্গ ।

আগামি দুই মাসের মধ্যে কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে রাতেও বিমান উঠা নামা করবে। আর এতে কক্সবাজারের গুরুত্ব অনেকাংশ বেড়ে যাবে। সাথে সাথে কক্সাবাজারের মানুষেরও গুরুত্বও বাড়বে। এই জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

491 ভিউ

Posted ১:১৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com