মোসলেহ উদ্দিন,(২৯ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও জঙ্গি অপতত্পরতা রোধে ইতোমধ্যে ১২টি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এনজিওগুলোর ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছে। তারপরও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছে।
একটি মহল প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে উত্তপ্ত করছে ক্যাম্পের পরিবেশ। যে কারণে উপজেলা প্রশাসন সবগুলো ক্যাম্পের উপর নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
রাতের বেলায় কিছু এনজিওর মানবিক সেবার নামে ক্যাম্পে ধর্মীয় নেতাদের অবাধ বিচরণ ও কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করে উপজেলা প্রশাসন।
এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বিষয়টির উপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি একটি প্রতিবেদন পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করতে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে বিভাগীয় কমিশনারের পাঠানো প্রতিবেদনে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য চলমান ত্রাণ কার্যক্রম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের ভেতরে কিছু এনজিও জঙ্গি তত্পরতা ও মিয়ানমারবিরোধী সংগঠনকে উত্সাহিত করার কাজে লিপ্ত। সন্দেহভাজন এ সব এনজিও বা সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিওর কার্যক্রমে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬টি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থী মিয়ানমারের নাগরিকরা কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন প্রায় তিন হাজার একর নির্ধারিত জমিতে ২০টি ব্লকে ভাগ হয়ে দেড় লাখ শেডের মধ্যে বসবাস করছে। ২০টি ব্লকের জন্য পাঁচটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের পর্যাপ্ত সরকারি যানবাহন নেই। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটলে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারবে না। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, মোটরসাইকেল জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিকে একটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য জঙ্গি তত্পরতা, নাশকতামূলক কার্যক্রম রোধ তথা সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পের চারদিকে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, প্রবেশ ও বহির্গমন পথ নির্ধারণ এবং দুই পথে চেকপোস্ট বসানো, ক্যাম্পের চারদিকে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ এবং এ সব স্থানে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে একটি নিরাপত্তা বলয় গঠন করা জরুরি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য অফিস ও স্থাপনা নির্মাণ করতে প্রতিবেদনে প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলায় মিয়ানমারের নাগরিক অধ্যুষিত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও পর্যালোচনা করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে একটি বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে ক্যাম্পের ভেতরে যাতায়াত ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত করা, মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের কথাও বলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও আনসারের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, উখিয়ার আটটি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রিত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও এলাকার সার্বিক পরিবেশে সমুন্নত রাখতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পেশা করা হয়েছে।
এর উপর ভিত্তি করে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে ১৬টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫টি পুলিশ ক্যাম্পের কার্যক্রম চলছে।
এ দিকে, উখিয়ার পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি বড় ছনখোলা শূন্যরেখায় গত পাঁচ মাস ধরে অবস্থান করা ১৯৬টি পরিবারে ৮৩২ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে গতকাল সোমবার কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও স্থানীয় প্রশাসন এ সব রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন শেষে ইউইউ জোন এলাকায় আশ্রয় দেওয়া হবে।
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ সেলিম আহমদ জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি লেবুছড়ি শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া আরো ৩৬৫ জন রোহিঙ্গাকে আজ কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসা হবে।
Posted ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta