কক্সবাংলা রিপোর্ট(২১ জানুয়ারি) :: কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরনার্থী শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টন কাঠ পোড়াচ্ছে। এই কাঠ জোগাড় করতে দুটি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ বনভূমি উজাড় হচ্ছে। এক বছরে ওই কাঠের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় তিন লাখ টন।
রোহিঙ্গাদের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সংক্রামক রোগের ঝুঁকি, অতি ঘনবসতি ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বর্ষাকালে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও আছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
খুব সহজে ও শিগগির রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে বলে মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন না।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘হঠাৎ করে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আমরা সফলভাবে আশ্রয় দিতে পেরেছি। তাদের বসবাসের স্থান হয়েছে। নিয়মিত খাদ্যের সংস্থান আছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিবিরগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন প্রত্যাবাসনের অপেক্ষা।’ তিনি আরও বলেন, প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে জ্বালানি সমস্যাই প্রধান। সমস্যা আরও আছে।সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী, গত ২৫ আগস্টের পরে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এদের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বনভূমিতে গড়ে তোলা শিবিরে রাখা হয়েছে। আগেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ছিল। সব মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। এখনো রোহিঙ্গারা আসছে।
জানা যায়,পুরোনো রোহিঙ্গারা রেশন হিসেবে জ্বালানি সহায়তা পায়। ২৫ আগস্টের পর আসা রোহিঙ্গারা তা পায় না। প্রতিদিনের রান্নার জন্য তারা কাঠ কিনছে। এই কাঠের উৎস স্থানীয় বন। সম্প্রতি ছয়টি রোহিঙ্গা শিবিরে কাঠ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কুতুপালং শিবিরে কাঠের স্থায়ী বড় বড় দোকান আছে। এ ছাড়া শিবিরগুলোর সামনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে অনেকে কাঠের বোঝা নিয়ে বসে থাকেন। শিবির থেকে রোহিঙ্গারা এসে কাঠ কিনে নিয়ে যায়।বালুখালী ২/২ শিবিরের মমতাজ বেগম বলেন, তাঁর আট সদস্যের পরিবার। তাঁরা শিবিরের সামনে সড়ক থেকে কাঠ কেনেন। আবার তাঁর কিশোর ছেলে পাশের বন থেকে শুকনা কাঠও সংগ্রহ করে আনে নিয়মিত।
কক্সবাজারে বনভূমি ধ্বংস নিয়ে এফএও জরিপ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন ৮০০ টন করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে শিবিরগুলোতে। বন বিভাগ নিজেও বনভূমি ধ্বংস নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।
চলতি মাসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ধ্বংস হওয়া বনভূমির আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। রোহিঙ্গা শিবির করতে গিয়ে ৪ হাজার ১৪০ একর বনভূমি শেষ হয়ে গেছে।এ ছাড়া পাহাড়ের গাছ কেটে রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। এলাকায় গেলে একেবারে ন্যাড়া পাহাড়ও চোখে পড়ে। এসব পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে গেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, নতুন রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাঠ অন্য কোনো জেলা থেকে আসছে না। আসছে কক্সবাজারের বনাঞ্চল থেকে। তিনি বলেন, প্রতি পরিবারে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ কেজি জ্বালানি কাঠের দরকার হয়।
১ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের জন্য দৈনিক যে পরিমাণ কাঠ দরকার হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ওই পরিমাণ কাঠের জন্য দুটি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমির দরকার হয়।
Posted ৭:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta