কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৫ মে) :: সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অ্যাকশন শুরুর পর কক্সবাজারের অনেক বাঘা মাদক ব্যবসায়ী এলাকা ছাড়ছে।
বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার মাদক জোনখ্যাত টেকনাফের তালিকাভূক্ত শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী,উখিয়া,রামু,মহেশখালী, পেকুয়া সহ কক্সবাজার শহরের অনেককেই আগের মতো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে অনেকেই গোপনে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দূরের জেলাগুলোয়।আবার একজন স্বপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন মালয়শিয়ায়।মুলত যারা লাখ লাখ ইয়াবা সহ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর,পুলিশ ও র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিলেন। পরবর্তীতে আ্ইনের ফাঁক গলে জামিনে বের হয়ে আসে।
সূত্রে জানা গেছে,বন্দুকযুদ্ধ-‘ক্রসফায়ার শুরুর পর থেকে গত কয়েক দিন ধরে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই পলাতক, কোথাও দেখা মিলছে না। এ কারনে জেলার তালিকাভূক্ত ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ঘরে এখন ‘ক্রসফায়ার আতঙ্ক’।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে,কক্সবাজার শহর,টেকনাফ ও মহেশখালীতে হত ২৪ ঘন্টায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩ মাদক কারবারী নিহত হওয়ার পর এলাকা ছাড়তে শুরু করে চিহ্নিতরা। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের খুচরা ব্যবসায়ীরা এলাকায় থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিবিধিতে রয়েছে।
জানা যায়,সারাদেশে মাদক ও ইয়াবার ব্যাপক বিস্তার পাওয়ায় মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার। আর এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আর গত ১৫ মে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩ মাদক কারবারী নিহত হয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারেও ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে নিহত হয়েছেন তিন মাদক ব্যবসায়ী। ২৪মে বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে শহরের কলাতলী এলাকা থেকে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মোহাম্মদ হাসান (৩৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সে শহরের কলাতলী আদর্শগ্রাম এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে।এছাড়া একইদিন মহেশখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাক মিয়া (৩২)নামে আরও এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত মোস্তাক বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সিরড়েইল গ্রামের আনোয়ার পাশার ছেলে।আর সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৯টায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন এমপি বদির বেয়াই ও টেকনাফের কথিত ‘ইয়াবা ডন’ এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আকতার কামাল (৪১)।জানা গেছে নিহত আকতার কামাল এমপি বদির বড় বোন শামসুন্নাহারের দেবর ও টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং একই এলাকার মৃত নজির হোসেনের ছেলে।
আর পুলিশ জানিয়েছে নিহত তিন জনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগে কক্সবাজার সদরমহেশখালী,টেকনাফ থানাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।তার মধ্যে আকতার কামাল ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’র তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী।
সূত্রে জানা যায়,দেশব্যাপী মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক থেকে ক্রাশপ্রোগ্রাম নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এবারের উচ্চমাত্রার এ অভিযানে ‘টপ টেন লিস্ট’ তালিকা ধরে এরই মধ্যে সরকারের ক্রাশপ্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছে।আর প্রতিটি জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নাম-ঠিকানা সংবলিত ৭১ পৃষ্ঠার গোপনীয় তালিকায় স্থান পেয়েছে কক্সবাজার জেলারও শীর্ষ ১০ মাদক ব্যবসায়ীর নাম।তালিকায় মাদক ব্যবসায়ীদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, মামলার সংখ্যা, ব্যবসার ধরন এবং কারও কারও ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুঠোফোনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা যায়,কক্সবাজার জেলাকে ধরা হয় দেশের মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে।এ কারণে ক্রাশপ্রোগ্রাম এর অংশ হিসাবে কক্সবাজারের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকাও এখন অপারেশন টিমের হাতে।ধারণা করা হচ্ছে শুক্রবার ও বৃহস্পতিবারে কক্সবাজারে নিহত তিন মাদক ব্যবসায়ীর নাম ওই তালিকায় থেকে থাকতে পারেন।
এদিকে সরবারের ক্রাশপ্রোগ্রাম এর কারণে ক্রসফায়ার আতঙ্কে এবং আটক হওয়ার ভয়ে কক্সবাজারে শহরের অনেক মাদক সিন্ডিকেটের অধিকাংশ সদস্য এরইমধ্যে ‘গা ঢাকা’ দিয়ে অন্যত্র সরে গেছেন।বিশেষ করে যারা মাদক নিয়ে একাধিকবার আটক হয়েছেন এবং যাদের নাম প্রশাসনের একাধিক তালিকায় রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে,ইতিমধ্যে শহরের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকার শীর্ষ পাঁচজন গা ঢাকা দিয়েছেন। এরমধ্যে একজন পরিবারসহ মালয়শিয়ায় পাড়ি দিয়েছে।তবে তাদের এ গা ঢাকা ক্ষণিকের।আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শেষ হলেই তারা আবারও ফিরে আসবেন।
এদিকে কক্সবাজার পুলিশের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রথম রমজান থেকে পরিকল্পিতভাবেই মাদক নির্মূলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে প্রশাসন। আর তা কবে নাগাদ এই অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে তার নির্ধারিত তারিখ নেই। তবে কক্সবাজার থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের মূল উৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
জানা যায়,সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর ইয়াবার সিংহভাগ আসে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশি মিয়ানমার থেকে। আর প্রবেশের পর কক্সবাজারকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে তা ছড়িয়ে দেয়া হয় পুরো দেশে।এটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় মিয়ানমার সীমান্তে একের পর এক গড়ে উঠছে ইয়াবার কারখানা।আর মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহায়তায় এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার-টেকনাফের ৬০ জন গডফাদার সহ অস্তত ৯শ’ মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। যারা কয়েক বছরের ব্যবধানে বিপুল ধনসম্পদ সহ বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন।আর এ তালিকা প্রকাশ করার পর থেকে সারাদেশে ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় ক্রাশপ্রোগ্রাম।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর মধ্যেও কক্সবাজার-টেকনাফে থেমে নেই ইয়াবা পাচার।গত দুইদিনে র্যাব,বিজবি,কোস্টগার্ড এবং পুলিশের অভিযানে ৬লক্ষাধিক ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।এর মধ্যে টেকনাফেই উদ্ধার হয়েছে ৫ লাখ ইয়াবা।
প্রসঙ্গত,টেকনাফ সীমান্তে এরআগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৬জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছিলেন।এদের মধ্যে হ্নীলার নুর মোহাম্মদ হচ্ছেন প্রথম ইয়াবা ব্যবসায়ী, যিনি ক্রসফায়ারে মারা যান। আর সাম্প্রতিক সময়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রসফায়ার আতংক চলছে।একারণে অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হয় সীমান্ত পাড় হয়েছেন অথবা এলাকা ছেড়েছেন।
Posted ৮:৩৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta