বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার রক্ষিত বনভূমির ৫ হাজার কোটি টাকার ৭০০ একর জায়গা খাস দেখিয়ে ১ লাখ টাকায় ইজারা

রবিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
461 ভিউ
কক্সবাজার রক্ষিত বনভূমির ৫ হাজার কোটি টাকার ৭০০ একর জায়গা খাস দেখিয়ে ১ লাখ টাকায় ইজারা

বিশেষ প্রতিবেদক :: সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে ‘রক্ষিত বনভূমির’ ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে।

বন বিভাগের দাবি, এই জমি তাদের। এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা)কক্সবাজার কমিটি সহ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এ সিদ্ধান্তে বিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে।

জানা যায়,১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এ বনভূমিকে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমি। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের।

কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেওয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা।

ভূমি মন্ত্রণালয় এলাকাটিকে অকৃষি খাসজমি দেখালে বন বিভাগ বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আপত্তি তোলে। তারা জানায়, বন আইন অনুযায়ী ওই জমি বন বিভাগের আওতাধীন ‘রক্ষিত বনভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত। ‘ওই জমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ বলে একটি চিঠিও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরকে দেয় বন বিভাগ। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে আছে। সরকারের এই বিভাগ বিসিএস বন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত।

জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই বনভূমির মালিক বন বিভাগ। কিন্তু ইজারার জন্য কেউ আমাদের চিঠি দেয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয় যে বনভূমি ইজারা দিয়েছে, তাও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না।’

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্টেশনের (বাপা) কার্যালয় নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়। সংস্থাটি ওই বছরই ১৪টি শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এর মহাপরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর পরিচালকেরা প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য।

কিন্তু বন বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে লেখা তাদের চিঠিতে বলেছে, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের একটি রক্ষিত বন ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাকে স্থাপনা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অবৈধ। আমরা সংসদীয় কমিটি থেকে বরাদ্দ না দিতে চিঠিও দিয়েছিলাম। সরকার যেখানে বেহাত বনভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করছে, সেখানে সরকারি সংস্থা যদি অবৈধভাবে বনভূমি ইজারা নেয়, তাহলে বনভূমি রক্ষা হবে কীভাবে?।

বন বিভাগের জমি কীভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের এক বিভাগ আরেক বিভাগকে জমি দিয়েছে। এতে সমস্যা কী!’

কক্সবাজার ভিত্তিক কয়েকটি পরিবেশ সংগঠন ওই বনভূমি ইজারা না দেওয়ার দাবি জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল। তাতে বলা হয়, সেখানে ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতি। এ ছাড়া বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি।

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার কাছে সাভারে বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার (বিপিএটিসি) আছে। কক্সবাজারে আরেকটি একাডেমি কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকারি কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ করে তোলার জন্য এই একাডেমি নির্মাণ করা হবে। এর ধরন কেমন হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে মূল উদ্দেশ্য দূরদর্শী নেতৃত্ব তৈরি করা। তিনি জানান, মূল্য পরিশোধ করায় ওই ৭০০ একর জমি ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সাভারে বিপিএটিসি আছে। প্রশিক্ষণের জন্য আরও স্থান দরকার হলে সেখানে বহুতল ভবন করা যায় বা তার পরিধি বাড়ানো যায়। তা না করে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন একটি বনভূমি ধ্বংস করে কেন এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে, তা বোধগম্য নয়। এই পরিকল্পনা থেকে অবশ্যই সরে আসা উচিত।

সূত্র : প্রখম আলো

461 ভিউ

Posted ১:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com