কক্সবাংলা ডটকম(১৬ ডিসেম্বর) :: দীর্ঘ আলোচনা শেষে পোল্যান্ডের কাতোভিসে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে নীতিমালার বিষয়ে সম্মত হয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। দুই সপ্তাহের আলোচনা শেষে শনিবার বেশকিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হলেও কার্বন নিঃসরণ রোধে দেশগুলোর প্রচেষ্টা জোরদারে এ সম্মেলনও ব্যর্থ হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি।
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস নিয়ে মতভেদে শেষ মুহূর্তে সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ। প্রতিনিধিরা আশা করছেন, নতুন নীতিমালা দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। কপ২৪ হিসেবে পরিচিত জলবায়ু সম্মেলনের চেয়ারম্যান মিশেল কারতেকা বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন একটি বড় দায়িত্ব।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং সম্ভব হলে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বিশ্বের সিংহভাগ দেশ এ প্রতিশ্রুতি পূরণে সম্মত হলেও এ লক্ষ্যে তিন বছরেও বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে। দরিদ্র দেশগুলোয় এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
এমনকি এ পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্প যুগের ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কপ২৪ সম্মেলনে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনকে স্বাগত জানানোর পরিবর্তে বিরোধিতা করতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, রাশিয়া ও কুয়েতকে। তবে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে প্রতিবেদনটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং দেশগুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কাতোভিসে সম্মেলন থেকে সব দেশের জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা বা রুলবুক বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ হ্রাস কর্মসূচি বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ও দরিদ্র দেশগুলোর অর্থায়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তত্ত্বাবধায়ন করা হবে। একই সঙ্গে এ নীতিমালার মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের করণীয় নিশ্চিত করা হবে।
নীতিমালা প্রণয়ন সহজ মনে হলেও বিষয়টি বেশ জটিল। বিভিন্ন দেশের কার্বন নিঃসরণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা এবং হ্রাসের ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচি রয়েছে। এছাড়া যথেষ্ট সক্ষমতা না থাকায় দরিদ্র দেশগুলো নীতিমালা কিছুটা শিথিলের দাবি জানিয়েছে।
তবে কপ২৪ সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরেন্স তুবিয়ানা। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম স্থপতি ছিলেন তিনি। তার মতে, সমঝোতাটিতে অপেক্ষাকৃত ভালো স্বচ্ছতা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তুবিয়ানা আরো বলেন, নিয়মকানুন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে রাশিয়ার মতো দেশগুলো এত দিন প্যারিস চুক্তি সমর্থন করতে অসম্মতি জানিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আর তারা এ অজুহাত দেখাতে পারবে না।
অন্যদিকে বেশকিছু সম্মেলন পর্যবেক্ষকের মতে, জলবায়ু সমস্যার জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য সমঝোতাটি যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। সমঝোতায় কী সম্ভব তা উঠে এসেছে, তবে কী প্রয়োজন তা স্পষ্ট হয়নি।
Posted ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta