কক্সবাংলা ডটকম(৩০ মার্চ) :: নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৯ বাংলাদেশি মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরও অনেকে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর বিদেশে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকেরাও এতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কত, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে দিতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় ৩৯ বাংলাদেশি মারা গেছেন।
নিউইয়র্ক থেকে জানা যায়, নিউইয়র্কে একদিনে করোনা কেড়েছে ৮ বাংলাদেশির প্রাণ। এ নিয়ে নিউইয়র্কে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ বাংলাদেশির। আর যুক্তরাষ্ট্রে মোট প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ বাংলাদেশি। এতে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোববার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু হয় নিউইয়র্কে। নিউইয়র্কের বাইরে মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটি ও নিউজার্সি রাজ্যের প্যাটারসনে একজন করে বাংলাদেশি নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
রোববার মারা যান আইটি প্রফেশনাল মির্জা নুরুল হুদা (৪৪), মোহাম্মদ আনিসুর রহমান (৭৬), জায়েদ আলম (৪৫), মোতাব্বির চৌধুরী (৬৮), বিজিত কুমার সাহা (৩৮), মোহাম্মদ শিপন মোসেন (৫৬) শফিকুর রহমান মজুমদার ও কাজী কায়কোবাদ। এরা সবাই কুইন্সের বাসিন্দা।
করোনা: জীবানুটি এখন বাতাসে ভাসছে।
Posted by Dr Ferdous on Friday, March 27, 2020
এদিকে বাংলাদেশিদের কমিউনিটিতে মৃত্যুর মিছিল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার হারও বহুগুণ বেড়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকশ’ বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর বেশিরভাগই কুইন্স, ব্রুকলীন, ম্যানহাটন ও লং আইল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের অনেকেই শেষ রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কমিউনিটির বেশ ক’জন সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে স্থানীয় টাইম টিভি চ্যানেলের কর্মকর্তা ইলয়াস খসরু ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে দু’সপ্তাহ ধরে ভেল্টিলেশনে রয়েছেন। সাংবাদিক ফরিদ আলম ও ফটো সাংবাদিক স্বপন হাইও করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কমিউনিটিরর চিকিৎসক আতাউল হক গনি তার চেম্বারে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া জ্যাকসন হাইটসের একটি মসজিদের একজন ইমামও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ মার্চ রাত থেকে ২৯ মার্চ সকাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে পুরো রাজ্যে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেল।নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ২৯ মার্চ বলেছেন, নিউইয়র্কের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৯ মার্চ সকাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা ছিল ৯৬৫ জন। একদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ২০০ বেড়ে মোট হয়েছে ৫৯ হাজার ৫১৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৬৮ জনই নিউইয়র্ক নগরের। এখনো প্রায় ৮ হাজার ৫০০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই হাজার ৩৭ জন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভেন্টিলেটরে আছে।
গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিউইয়র্কবাসীকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে না বেরোনোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নগরীর ১১টি সরকারি হাসপাতাল কীভাবে চিকিৎসা উপকরণ ব্যবহার করবে তা মেয়র বিল ডি ব্লাজিওর কাছে জানতে চেয়েছেন কুমো। এ ছাড়া তিনি চান রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল এক সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করুক।
ইতালি থেকে জানা যায়, করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইতালিতে মারা গেছেন এক বাংলাদেশি। গত ২০ মার্চ রাতে করোনাভাইরাসে ইতালির মিলান শহরের বিজুত্তেরিয়ায় ৫০ বছর বয়স বয়সী বাংলাদেশি প্রাণ হারান। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসার পর তিনি মারা যান। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি মিলানে বসবাস করছিলেন।
আকবর হোসেন সুমন নামে আরও একজন রোমে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোমের মন্তেভেরদে এলাকায় থাকতেন তিনি। গত ৮ দিন আগে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
কামাল হোসেনের দেশের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকায়। পরিবার নিয়ে লন্ডন থাকেন। ব্যবসায়ীক কাজে রোম এসেছিলেন। সরকারি জরুরি অবস্থায় রোমে অবস্থান করছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোমের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া লোম্বার্দিয়া, তরিনো, ভারেজে, বেরগামোসহ আরও কিছু শহরে বাংলাদেশীদের আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসীদের মাঝে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
লন্ডন প্থেকে জানা যায়, ব্রিটেনে করোনায় এ পর্যন্ত অন্তত ১০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত ৮ মার্চ থেকে সোমবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তারা হলেন- আনোয়ারা বেগম চৌধুরী (৬৫), আলম আশরাফ (৫০), মনির উদ্দিন (৬০), হাজি ফখরুল ইসলাম, খসরু মিয়া (৪৯), হাজি জমসেদ আলী (৮০), মাহমুদুর রহমান, রেহান উদ্দিন, আফরোজ মিয়া (৬৬) ও সাঈদ হোসেন জসিম (৬৫)।
আরেক বিপর্যস্ত দেশ স্পেনের মাদ্রিদে মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশির। কাতারে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয়েছে মৌলভীবাজারের বাসিন্দা বাংলাদেশি নাগরিকের। এছাড়া আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় বাংলাদেশি মারা গেছেন একজন করে।
এছাড়া জার্মানিতে অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তথ্যটি জানিয়েছে রাজধানী বার্লিনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে জার্মানিতে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে সাবধানে ও নিরাপদে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলা রয়েছে।
Posted ৯:১৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩০ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta