রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে অভিবাসন : বিপদ সংকুল পথে ভয়ঙ্কর যাত্রা

বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭
1204 ভিউ
বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে অভিবাসন : বিপদ সংকুল পথে ভয়ঙ্কর যাত্রা

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ আগস্ট) :: সিসিলির কাতানিয়া বাসস্টেশনের পাশে রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে টিস্যু বিক্রি করছিলেন ২৪ বছর বয়সী নাহিন। বিশ্রামের ফাঁকে হাত খুলতেই দৃশ্যমান হয় তালুর দীর্ঘ ক্ষতচিহ্নটি। ইতালির উদ্দেশে বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার স্মারক এটি। কারণ লিবিয়া ছাড়ার পরই ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন নাহিন। ক্ষতটি ওই ডাকাতদের কাছ থেকেই পাওয়া।

লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছতে একটি কাঠের নৌকায় উঠেছিলেন নাহিন। এজন্য খরচ করতে হয়েছিল ১ হাজার ইউরো। নাহিনের ভাষায়, নৌকায় সোমালিয়াসহ আফ্রিকার আরো দেশের নাগরিকও ছিল। আর যাত্রাটা ছিল ভয়ঙ্কর। আমি সাঁতার জানি না। তার পরও সমুদ্র পাড়ি দেয়ার ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম। কারণ আমার পক্ষে লিবিয়ায় থাকা আর সম্ভব হচ্ছিল না।

অভিবাসীদের নিয়ে সংবাদ পরিবেশনকারী ইরিন নিউজে উঠে আসা নাহিনের মতোই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পাড়ি দেয়া প্রায় সবারই।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বলছে, ইতালিতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের প্রায় শতভাগই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য প্রথমেই তারা আকাশপথে যাচ্ছেন লিবিয়ায়। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর সাগরপথে পাড়ি জমাচ্ছেন ইতালিতে। লিবিয়ায় অবস্থানকালীন এ সময়টায় ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের।

লিবিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছা ৬১৯ জনের ওপর ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জরিপ চালিয়েছে আইওএম। জরিপে অংশ নেয়া ৭৫ শতাংশই লিবিয়ায় অবস্থানকালে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়েছে ৪২ শতাংশকে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইতালিতে পৌঁছানো ৭৭ শতাংশ বাংলাদেশী।

লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালি পাড়ি দেয়ার সময় আরো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। নৌকাডুবিতে অনেকেই প্রাণ হারান। তার পরও ইতালিতে অভিবাসনের স্বপ্নে সাগরপথে পাড়ি জমান বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী।

আইওএমের হিসাবে, ২০১৬ সালে সাগরপথে ইতালিতে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১৩১। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জানুয়ারি-মে) এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১০৬, যা ওই সময় সাগরপথে ইতালিতে পাড়ি দেয়া মোট অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্রায় ১২ শতাংশ। নাইজেরীয়দের পরই সাগরপথে সবচেয়ে বেশি পাড়ি দিচ্ছেন বাংলাদেশীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশ হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়াটা অনেক দিন ধরেই চলছে। এ ধারা বন্ধ করতে প্রথমেই ইতালির শরণার্থী শিবিরে থাকা বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে দালাল চক্রকে শনাক্ত করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ভয়ঙ্কর যাত্রা চলতেই থাকবে।

বিপত্সংকুল হওয়ার পরও লিবিয়া হয়ে বাংলাদেশীদের ইতালিতে পাড়ি দেয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে আইওএম। জরিপে অংশ নেয়া পূর্ণবয়স্কদের ৬৩ শতাংশই ইতালিতে অভিবাসনের কারণ হিসেবে আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন। আর্থিক সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে জানিয়েছেন ১৭ বছর বয়সীদের ৯৫ শতাংশ।

ব্যক্তিগত নির্যাতনকে কারণ হিসেবে চিত্রিত করেছেন পূর্ণবয়স্ক ৩০ ও ১৭ বছর বয়সীদের ২৮ শতাংশ। মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত থাকাকে অভিবাসনের কারণ বলে জানিয়েছেন পূর্ণবয়স্কদের ১১ ও ১৭ বছর বয়সীদের ১৪ শতাংশ। এছাড়া ৩২ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক দেশত্যাগের কারণ হিসেবে মানবিক সেবার অভাবকে চিহ্নিত করেছেন।

ইতালিতে পৌঁছার পর যে স্বস্তি মিলছে, তেমন নয়। সেখানেও ধরা পড়ে ডিটেনশন সেন্টারে থাকতে হচ্ছে অনেককে। এমনই একজন বাংলাদেশী তরুণ মেহেদি। প্রথমে বাংলাদেশী একটি এজেন্সির মাধ্যমে ভুয়া কর্ম-ভিসা নিয়ে ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে ত্রিপোলি পৌঁছেন। দালাল চক্রের মাধ্যমে সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছার পর আটক হন মেহেদি। কিছুদিনের জন্য তাকে সিসিলিতে একটি রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। বর্তমানে কাতানিয়া বাসস্টেশনের কাছে শরণার্থীদের জন্য ব্যক্তিপরিচালিত একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তিনি।

তার পরও দেশে ফিরতে চান না মেহেদির মতো সবাই।

আইওএমের সমীক্ষা অনুযায়ী, পূর্ণবয়স্কদের ৮৯ ও ১৭ বছর বয়সীদের ৯৭ শতাংশ ইতালিতে থেকে যেতে আগ্রহী। কারণ ইতালিকে তারা নিরাপদ ও আর্থসামাজিক সুবিধার দিক থেকে অনুকূল মনে করেন। সংখ্যায় কম হলেও কেউ কেউ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে চলে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন।

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সমুদ্রপথে ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৬ জন ইতালিতে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে অন্যান্য দেশের ২৪ হাজারের বেশি নারী থাকলেও বাংলাদেশী নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫।

এছাড়া কিশোরের (১৭ বছর বয়সী) সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৩। এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে ৬০ হাজার ২২৮ জন বিদেশী সমুদ্রপথে ইতালিতে গেছেন। এর মধ্যে ১২ শতাংশ বাংলাদেশী।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ইতালিতে পাড়ি দেয়া অধিকাংশ বাংলাদেশীর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক। এদের অর্ধেকই গেছেন ঢাকা থেকে। এর বাইরে সিলেট, মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইতালি গেছেন। ইতালিতে পাড়ি দেয়ার আগে কর্মরত ছিলেন প্রায় অর্ধেক। বেকার ছিলেন ৩৮ শতাংশ। বাকিরা শিক্ষার্থী।

ইতালির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এদের ৯৮ শতাংশই এক বছরের বেশি সময় লিবিয়ায় অবস্থান করেন। সেখানে তারা প্রধানত গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর কাজ করতেন।

সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পৌঁছতে তাদের খরচ হয়েছে ৫ হাজার ডলারের (৪ লাখ টাকা) বেশি। আকাশপথে দুবাই বা ইস্তাম্বুল হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছার আগে কোনো বাংলাদেশী দালালকে পুরো টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ৮১ শতাংশের ইতালিতে যাওয়ার খরচ জুগিয়েছে আত্মীয়রা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তাদের যাত্রার শুরুতেই পুরো টাকা পরিশোধ করেন না। মানব পাচারকারীরা পরিবারের প্রধানের সই করা ‘ব্ল্যাংক চেক’ নেন। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধ করতে পরিবারের প্রধান সম্পদ বন্ধক দেন বা ঋণ করেন। এরপর তারা বুঝতে পারেন, চাকরি নেই, তারা ফাঁদে পড়েছেন।

এছাড়া মানব পাচারকারীরা ইতালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এ ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে সস্তা খেলনা বা গোলাপ বিক্রির মতো কাজের সংস্থান করেন। এরপর এজেন্টরা প্রতিশ্রুত টাকা উসুল করেন।

1204 ভিউ

Posted ১:০১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com