কক্সবাংলা ডটকম(২৩ এপ্রিল) :: বদলে যাওয়া পৃথিবীতে চীন থেকে আগমন ঘটে নতুন এক ভাইরাসের। খুব দ্রুত এ ভাইরাসকে শনাক্ত করে দেশটি। দ্রুতই সীমান্ত বন্ধ করে দেয় তারা। এরপর ভাইরাসের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব এক অভিযান শুরু করে দেশটি। পাশাপাশি যত কম ক্ষতি করে ভাইরাসের প্রকোপ কমিয়ে আনা যায়, সেটিও নিশ্চিত করে। এছাড়া অন্য দেশগুলো যেমন তাইওয়ান, হংকং ও সিঙ্গাপুর দ্রুত সংক্রমিত ব্যক্তিদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করে আলাদা করে ফেলে। এভাবে তারা ভাইরাসের বিস্তৃতিও কমিয়ে আনে। পরীক্ষা, শনাক্ত ও আইসোলেশন এই তিন পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে সফল হয় তারা। মানুষের জীবনও বেঁচে যায়।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কভিড-১৯ চীনের জনস্বাস্থ্য কৌশল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য সরকারগুলোও যখন এ ভাইরাস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি দ্রুত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য করে এবং কাউকে কাউকে হত্যাও করে। এই ভাইরাসটি লক্ষণীয়ভাবে বিপজ্জনক। এটি ঠান্ডা ও সর্দিজ্বর হিসেবে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে, যার কোনো উপসর্গই দেখা যায়নি।
কয়েক দিন আগে প্রকাশিত একটি হিসাব বলছে, আক্রান্তদের ৫ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। যাদের ৩০ শতাংশকে আবার আইসিওতে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের ০.৬-১.৪ মৃত্যুবরণ করে। যদিও এই কদিনের মাঝে নিশ্চিতভাবে এ হারগুলো আরো বেড়েছে।
এখন গোটা দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চীনে শুরু হলেও পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে নিজের প্রকোপ অব্যাহত রেখেছে মরণঘাতী এ ভাইরাস। তবে এ ভাইরাসের সংক্রমণে এ মুহূর্তে দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করছে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আমরা এখনো জানি না পৃথিবীর জনসংখ্যার কত ভাগ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য অ্যান্টিবডি টেস্ট ছাড়াই এটা শনাক্ত করা যে কেউ আক্রান্ত কিনা এবং এটির প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে কিনা। উপসর্গ ছাড়াই কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা। বাচ্চাদের মাঝে এর সংক্রমণের বিষয়টি পরিষ্কার নয়। বাচ্চাদের অনেকে প্রতিরোধী, আবার তীব্রভাবে আক্রান্তও মনে হয় না।
তাইলে এখন উপায় কী? বিভিন্ন দেশে এর প্রকাশের ধরন এবং দেশগুলোর সাড়া দেয়ার ভিত্তিতে আমি এটি শেষ হওয়ার চারটি সম্ভাব্য পথ দেখছি। একটি হচ্ছে সরকারগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে এটি নির্মূলের জন্য দ্রুত ও সাশ্রয়ী শনাক্তের ব্যবস্থা করা। সব দেশ একযোগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি ভাইরাসের বাহককে শনাক্ত করতে এবং নির্মূলে আগ্রাসী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এ পদ্ধতি যদিও অসম্ভব মনে হচ্ছে। কারণ ভাইরাসটি খুবই আগ্রাসীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কিছু দেশ অন্য দেশকে সহযোগিতার ব্যাপারে নিশ্চুপ। কিন্তু তিনটি কারণে এটা হতে পারত সবচেয়ে বাস্তবসম্মত।
কভিড-১৯-এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি দুর্বল হতে পারে, ভ্যাকসিন তৈরি হতেও সময় লাগতে পারে এবং প্রতিরোধী হওয়াও হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার, যা হতে পারে একই ব্যক্তি একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে। তবে নিউজিল্যান্ড সম্প্রতি এ পদ্ধতির একটি রূপ ব্যবহার করেছে। তারা সীমান্ত বন্ধ করে দেশ লকডাউন করে দিয়েছে এবং জনগোষ্ঠীর মাঝে ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্যে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় উপায়টি অপেক্ষাকৃত বেশি আশাব্যঞ্জক। তা হচ্ছে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো সফল হওয়া। এখন ভ্যাকসিনের জন্য অমপক্ষাকালে দেশগুলো চেষ্টা করবে ১২-১৮ মাস ধাপে ধাপে বিরতি দিয়ে লকডাউন চালিয়ে নিতে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে, যেন যথেষ্ট বেড, ভেন্টিলেটর এবং কর্মচারী নিশ্চিত করা যায়। এর ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোয়ারেন্টিনের শর্ত কমানো বা বাড়ানোর বিষয়টি।
যদিও এ পদ্ধতি আদর্শ নয়। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়বে। সে সঙ্গে লকডাউনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্যও খুব চড়া হবে। এর ফলে গণবেকারত্ব তৈরি হবে, বাড়বে দারিদ্র্য। সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খলাও তৈরি হবে। দরিদ্র দেশগুলোতে ভাইরাসের বদলে অন্য রোগেও মৃত্যুর হার বাড়বে।
তৃতীয় পদ্ধতি বরং অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো। যা অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা পরীক্ষার মাত্রা বাড়িয়ে বাহককে এবং তাদের সংস্পর্শে আসাদেও শনাক্ত করে তিন সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দিয়েছে। অবশ্য এর জন্য বড় আকারের পরিকল্পনা, কন্ট্রাক্ট-ট্র্যাকিং অ্যাপের উন্নতি এবং হাজারো স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে এবং স্বাস্থ্য খাতের চাপ কমাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
অন্যটি হচ্ছে, যেহেতু এখনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি, তাই কারণ খোঁজার চেয়ে উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে আক্রান্তকে এমনভাবে চিকিৎসা দেয়া হবে, যাতে তাকে আইসিইউতে নিতে না হয় কিংবা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। এমনকি আরো ভালো সমাধান পাওয়া যেতে পারে প্রোফিলেটিক থেরাপি দেয়ার মাধ্যমে। যা অবশ্য দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অসম্ভব না হলেও ব্যবস্থা করা খুব কঠিন।
সত্যি কথা হচ্ছে, সহজ কোনো সমাধান নেই। সামনের দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনীতির মাঝে ভারসাম্য রাখার কাজটিও করতে হবে। সরকারগুলোকে আগের তুলনায় অনেক বেশি একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। যেখানে অর্ধেক লড়াই হবে ভাইরাস সারানোর জন্য। যেমন ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি এবং দ্রুত পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করা। বাকি অর্ধেক হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন, সঠিকভাবে বণ্টন এবং প্রত্যেকের কাছে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনূদিত
Posted ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta