বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

করোনা-পরবর্তী বিশ্ব মোকাবেলায় বাংলাদেশ কেমন হবে ?

সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০
269 ভিউ
করোনা-পরবর্তী বিশ্ব মোকাবেলায় বাংলাদেশ কেমন হবে ?

কক্সবাংলা ডটকম(১২ এপ্রিল) :: বিশ্ব নভেল করোনাভাইরাসের জন্য প্রস্তুত ছিল না যেটা ত্বরিৎ ভয়াবহতা নিয়ে সারা বিশ্বকে আঘাত করেছে। এটা যদিও চরম পর্যায়ে গিয়ে আবার আশাব্যঞ্জকভাবে মে মাস এগিয়ে আসার সাথে সাথে এটা একটা সমান্তরাল পর্যায়ে নেমে আসছে। এ পর্যায়ে এসে এই সঙ্কটের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, বিশ্ব একটা মন্দার মধ্যে চলে গেছে। বহু গতানুগতিক অর্থনীতি পিছিয়ে পড়েছে এবং ইউরোপে নজিরবিহীন আঘাত লেগেছে। যুক্তরাষ্ট্রও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই অঞ্চল মিলিয়ে তেলসহ বৈশ্বিক ভোক্তা চাহিদার উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর অর্থ হলো মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিও বিশেষভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হবে। এই সব খবরই বাংলাদেশের জন্যও নেতিবাচক।

আত্মতৃপ্তির মূল্য

যে ভাবে সবকিছু চলছিল, সেটা নিয়ে বিশ্ব খুবই আত্মতৃপ্তির মধ্যে ছিল এবং কেউই এ ধরনের সর্বগ্রাসী সঙ্কটের আশা করেনি। এর ফলে হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে এবং আর্থ-সামাজিক ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাগুলো সামনে চলে এসেছে। পশ্চিমারা এতদিন যেসব অর্থনৈতিক নীতি ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশ্বস্ত ছিল, তারা এখন দেখতে পাচ্ছে যে, তাদের ‘স্বাভাবিক হিসেবে নেয়া’ বহু বিষয়ই এখন কাজ করছে না।

বাংলাদেশের জন্যও একই বিষয় প্রযোজ্য, যেখানে প্রভাবশালী রেমিটেন্স খাত, পশ্চিমামুখী রফতানি এবং অবকাঠামোভিত্তিক অর্থনীতি একটা মারাত্মক সঙ্কটের মুখে পড়ে গেছে, যেটা দীর্ঘ দিন ধরে দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে এটা যত ভালোভাবেই সমস্যা কাটিয়ে উঠুক না কেন (এক পর্যায়ে গিয়ে সেটা হবে), কিন্তু মধ্যবর্তী সময়টাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী বড় ধরনের দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে তার শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে কারণ শুধু অর্থনীতি নয়, জীবনের কোন দিকই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবে না।

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ খুবই সামান্য। এখানে যে কাঠামো রয়েছে, সেটা হঠাৎ সমস্যার সামাল দিতে পারে না এবং করোনাভাইরাস মহামারীর মতো পরিস্থিতিতে চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এটা সত্য যে কেউই এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারীর জন্য প্রস্তুত ছিল না, কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে দরিদ্রদের সেবা দেয়ার বিষয়ে তেমন অগ্রাধিকার না থাকায় দেখা যাচ্ছে যে, এ ধরনের নীতি সবার জন্যই নজিরবিহীন ক্ষতির কারণ হতে পারে। এখন প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য খাতের সেবা প্রয়োজন কিন্তু এটার সক্ষমতা এখন সীমিত।

এটা শুধু কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত নয়, বরং সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও এটা সত্য। স্পষ্টতই, এই সিস্টেম মানুষকে আস্থা দিতে পারেনি যে, সবকিছু ঠিকঠাক আছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস সর্বকালের মধ্যে নিম্নতম পর্যায়ে চলে গেছে এখন।

পরীক্ষার সরঞ্জাম যে ছিল না, সেটা স্পষ্ট কিন্তু অসহায়দের সেবা দেয়ার মতো জরুরি কোন পরিকল্পনাও ছিল না। ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য জরুরি সরঞ্জামাদি নিঃসন্দেহে ছিল না এবং সেখানে পার্সনাল প্রটেকশান ইকুইপমেন্টের (পিপিই) তো প্রশ্নই ওঠে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ রকম একটা সঙ্কটের জন্য কোন জরুরি পরিকল্পনাও ছিল না।

যে দেশে মন্ত্রী আর সিনিয়র কর্মকর্তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, সেখানে জনস্বাস্থ্য খাত মূলত গরিবদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। পরিস্থিতি যদি এর চেয়ে ভালো হতো, তাহলেই বরং বেশি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হতো।

বিজিএমইএ’র বেদনাদায়ক আচরণ

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাণ্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশান (বিজিএমইএ) এই সঙ্কটের মধ্যে যখন গার্মেন্ট খোলার ঘোষণা দিলো, তখন দেখা গেলো হাজার হাজার কর্মী তাদের গ্রাম থেকে ঢাকার দিকে রওনা দিলো। এরপর চাপের মুখে বিজিএমইএ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলে গার্মেন্টস কর্মীরা ঢাকায় আটকা পড়ে এবং বাড়ি ফিরতে তাদেরকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

আগের দিনও তৈরী পোষাক শিল্পের (আরএমজি) খাতের মালিকরা প্রবলভাবে কারখানা বন্ধের বিরোধিতা করে, এবং সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলে। কিন্তু যেহেতু তারা সবচেয়ে সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠি (যাদের মধ্যে মন্ত্রী, এবং একজন মেয়রও রয়েছেন) এবং তাদের বড় প্রভাব রয়েছে, সে কারণে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় মাপের অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও জট পাকিয়ে যায় কারণ সরকারের আদেশ স্পষ্ট ছিল না।

বৈশ্বিক চাহিদা হারানো

আরএমজি কারখানাগুলোকে যদিও ১৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখনও অস্পষ্ট। বিজিএমইএ জনপ্রিয় না হলেও শক্তিধর ছিল সবসময়। তারা একটি সংগঠন হিসেবে এমনকি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক উপযোগিতার চেয়েও অর্থকে প্রাধান্য দেয় বেশি। মহামারী যেহেতু বিশ্বের ব্যবসায়ের ধরন বদলে দিয়েছে এবং সেটা ক্ষমতাসীন শ্রেণীর ধনাঢ্য অংশকে যতটা স্পর্শ করার দরকার ছিল, তেমনটা স্পর্শ করেনি। ফলে একটা ফারাক এখানে সৃষ্টি হয়েছে, যেটা বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক।

আরএমজি খাত নিশ্চিত আঘাতের মুখে পড়বে, যেহেতু তাদের প্রধান ক্রেতা পশ্চিমা অর্থনীতিগুলো চাহিদা হারাচ্ছে। যে সব অর্ডার হারিয়েছে, বিদেশী মুদ্রার হিসেবে সেগুলোর মূল্য বহু বিলিয়ন। বিশ্ব একটা মারাত্মক অর্থনৈতিক লকডাউনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আরএমজি খাতের মালিক – যাদেরকে মূলত বিদেশী মুদ্রা অর্জনকারী হিসেবে তোষণ করা হয় সবসময় – তারা এই পরিস্থিতি সামলাতে পারবে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু সঙ্কট আরও অনেক গভীর কারণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে দেখা যাচ্ছে যে, আরএমজি খাত অতটা শক্তিশালী নয়। তারা খুবই স্বল্পমেয়াদি চিন্তাভাবনার দ্বারা ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এই সঙ্কটে সবচেয়ে বড় আঘাতটা পড়বে কর্মীদের উপর। এই গ্রামীণ অভিবাসীদের বেশির ভাগই নারী, এবং তারা নজিরবিহীন দুর্দশায় পড়ে গেছে। তাদের বিপর্যয়কালে টিকে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই এবং কোন সামাজিক ইন্সুরেন্সও নেই। তাদেরকে যেহেতু ‘কাজ নেই তো আয় নেই’ পরিস্থিতিতে ছুড়ে দেয়া হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি যেহেতু আরও দুই মাস বা তার বেশি দীর্ঘায়িত হতে পারে, সে কারণে যে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

রেমিটেন্স বিপর্যয়

সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে রেমিটেন্স অর্থনীতি, যেটা প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার উপর নির্ভরশীল, তবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশকে এরই মধ্যে বলেছে যাতে কাগজপত্রবিহীন কর্মীদেরকে ফিরিয়ে নেয় বাংলাদেশ। করোনা সঙ্কটটা নিয়েও এসেছে ইটালি ও অন্যান্য জায়গা থেকে আসা অভিবাসী কর্মীরা। সে কারণে জাতীয় জীবনের সাথে অভিবাসী জনসংখ্যার মিশ্রণ হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। তাদের সংখ্যাও বহু মিলিয়ন।

ঠিকাদার/অবকাঠামো ভিত্তিক অর্থনীতি, যেখানে শিল্প বিনিয়োগ নেই, সেখানে অর্থনৈতিক সঙ্কটটা বহুমুখী। যে বহু মিলিয়ন মানুষ ফিরে এসেছে, তারা শুধু অর্থনৈতিক সঙ্কটেরই মোকাবেলা করছে না, বরং সামাজিক সমস্যারও মুখোমুখি হচ্ছে তারা।

ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে কিছু ভালো খবর রয়েছে, কিন্তু সেটাও সীমিত। কিছু আরএমজি উদ্যোক্তারা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পণ্য উৎপাদনে সরে যেতে পারে, কিন্তু সেটাও হবে সীমিত মাত্রায়। উৎপাদন-ভিত্তিক শিল্প ছেড়ে নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক সেবা অর্থনীতির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে, সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কাঠামোর কিছু সঙ্কট এড়ানো সম্ভব।

আফসান চৌধুরী

269 ভিউ

Posted ১:৪১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com