শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শই সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট নয়

মঙ্গলবার, ০২ জুন ২০২০
225 ভিউ
করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শই সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট নয়

কক্সবাংলা ডটকম(২ জুন) :: করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেই অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো সংক্রমণ সৃষ্টি হবে এমন নয়। গুরুতর সংক্রমণ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমান ভাইরাস নাক বা মুখ দিয়ে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু সেই যথেষ্ট পরিমানটা আসলে কতোখানি তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সংক্রমণ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করা আর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করা ভাইরাস ডোজের মধ্যে বেশ তফাত আছে। খুব কম পরিমানে ভাইরাস কণা নাক দিয়ে প্রবেশ করলেই বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা ঘরের বাইরে সব সময় মাস্ক পরা, কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অর্থাৎ শরীরের সংস্পর্শে আসা ভাইরাসের পরিমান ন্যূনতম রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই অনেকটা নিরাপদ থাকা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক কম পরিমান ভাইরাস কণা যদি নাক বা মুখে ভেতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে তাহলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই তাকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। তবে সংক্রমণ ঘটানোর জন্য ঠিক কী পরিমান ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে হবে এর সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। ন্যূনতম প্রভাবের ডোজই বা কী সেটিও পরিষ্কার নয়।

এটি নিখুঁতভাবে বলাটা অসম্ভব। কারণ সংক্রমণ শুরুর মুহূর্তে গিয়ে সেটি হিসাব করা অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীরা এ ডোজের পরিমান হিসাব করতে ইঁদুর, গিনিপিগ ও বনবিড়ালের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত তথ্য হাতে না থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা তাদের প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করছেন না। এ কারণেই সাধারণ মৃদু সর্দি জ্বরের ভাইরাসের ডোজের কথা বললেও করোনাভাইরাসের ডোজের ব্যাপারে কথা বলাটা নীতিগতভাবে সঠিক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট অ্যাঙ্গেলা রাসমুসেন বলেন, সত্যি কথা বলতে, এটা সম্পর্কে আমরা আসলেই জানি না। ভালোভাবে না জেনে আমরা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবো বলে আমি মনে করি না।

সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেমন, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য করোনাভাইরাস এ ব্যাপারে কিছু ধারণা দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো চরিত্র বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়নি।

যেমন সার্স ভাইরাসও একটি করোনাভাইরাস, অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটির সংক্রমণের জন্য মাত্র কয়েকশ ভাইরাস কণার সংস্পর্শ লাগে। আর মার্স ভাইরাস সংক্রমণে জন্য দরকার কয়েক হাজার ভাইরাস কণা।

নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কভ-২- এর সঙ্গে সার্স ভাইরাসের মিল বেশি। সুতরাং সংক্রমণ সৃষ্টির ন্যূনতম ডোজও এটির মতো হওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. রাসমুসেন।

সাধারণত দেখা যায়, ইনফ্লুয়েঞ্জ, এইচআইভি বা সার্স ভাইরাসের মতো জীবাণু যার শরীরে যতো বেশি পরিমাণে প্রবেশ করে তার উপসর্গ ততো তীব্র ও অসুস্থতার মাত্রা ততো বেশি হয়। একাধিক গবেষণায় এটি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে তিনি ততো বেশি সেই জীবাণু ছড়াবেনও।

কিন্তু একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শরীরে কোনো উপসর্গ নেই কিন্তু বিপুল পরিমানে ভাইরাস বহন করছেন আক্রান্ত ব্যক্তি। কভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির সমান ভাইরাস থাকছে তাদের শরীরেও।

তাছাড়া করোনাভাইরাসের রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়ার দুই থেকে তিন দিন আগে সবচেয়ে বেশি সংক্রমক থাকেন। আর সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর ততোটা সংক্রামক থাকেন না।

কিছু মানুষ আবার নীরবে ছড়ায়, কিছু মানুষ আবার কম সংক্রামক। আবার কিছু মানুষ আছেন যাদের বলা হয় সুপার স্প্রেডার। তারা আক্রান্ত হলে অত্যন্ত সংক্রামক হয়ে ওঠেন। এর পেছনে তাদের জৈব বৈশিষ্ট্য নাকি আচরণ দায়ী এটা বলা মশকিল।

এতো গেল সংক্রমণ ছড়ানোর অংশ। যারা সংক্রমিত হচ্ছে অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি কাছ থেকে শরীরে ভাইরাস নাক বা মুখের মাধ্যমে শরীরে নিচ্ছেন তাদের মধ্যেও এমন পার্থক্য আছে। ব্যক্তির নাসারন্ধ্রের আকার-আকৃতি, নাকের লোম, মিউকাস এমনকি শ্বাসতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক কোষের বিস্তার যেগুলোতে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে, এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে সংক্রমণ সৃষ্টির জন্য কতোখানি ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করবে।

বেশি পরিমানে ভাইরাসে ভেতরে প্রবেশ করা মানে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটে যায়। নভেল করোনাভাইরাস সাধারণত বয়স্কদের বেশি কাবু করলেও অনেক কম বয়সীর মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি এমনকি মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে, এটি তার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে।

সংক্রমণ সৃষ্টির ন্যূনতম ডোজ আরো কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ভাইরাস কণা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাক দিয়ে প্রবেশ করছে নাকি মুখ দিয়ে ঢুকছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, মানুষ ভাইরাস দূষিত কোনো বস্তুর পৃষ্ঠ স্পর্শ করছে আবার সেই হাত নাকে বা মুখে দিচ্ছে। করোনাভাইরাস ছড়ানোর এটিই কিন্তু প্রধান পথ নয়। এভাবে কার্যকরভাবে ছড়াতে হলে এবং সংক্রমণ ঘটাতে হলে ভাইরাসের মিলিয়ন মিলিয়ন কণার দরকার হবে। যেখানে নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এর অনেক কম ভাইরাস ভেতরে প্রবেশ করলেই সংক্রমণ ঘটতে পারে।

কাশি, হাঁচি, গান গাওয়া, কথা বলা এমনকি বড় করে শ্বাস ছাড়লেও শ্বাসতন্ত্র থেকে ভাইরাস সমৃদ্ধ হাজার হাজার ছোট বড় ড্রপলেট (তরল কণা) বেরিয়ে আসতে পারে।

এ ব্যাপারে বোস্টন ডিকনেস মেডিক্যাল সেন্টারের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বেথ ইসরায়েল বলেন, এটা পরিষ্কার যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য কাউকে অসুস্থ হতেই হবে এমন নয়। এমনকি কাশি বা হাঁচি না দিলেও তিনি ভাইরাস ছড়াতে পারেন।

হালকা বাতাস বা এয়ার কন্ডিশনের মুখে না পড়লে নাক-মুখ দিয়ে বের হওয়া বড় ড্রপলেটগুলো অভিকর্ষের টানে দ্রুতই নিচে পড়ে যায় এবং সার্জিক্যাল মাস্ক ভেদ করতে পারে না। কিন্তু ৫ মাইক্রোনের ছোট ব্যাসের ড্রপলেট (অ্যারোসল) বাতাসে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে। এগুলো অনেক দূর ভেসে যেতে পারে এবং ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ভাইরাস দূষিত বস্তু স্পর্শ করা এবং এরপর সংক্রমিত হওয়ার- ভাইরাস সংক্রমণের সাধারণ পথ এটি নয়। তবে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লু, রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য অণুজীব এভাবে সংক্রমিত এবং শ্বাসতন্ত্রের অসুখ সৃষ্টি করে। নভেল করোনাভাইরাসেরও এমন চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে যেখানে বেশি মানুষের আনাগোনা হয় সেখান থেকে এভাবে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি।

এ কারণে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে বলা হচ্ছে, সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়া, মুখে হাত না দেয়া এবং বাইরে অবশ্যই মাস্ক পরা।

মনে রাখতে হবে উন্মুক্ত স্থানে চেয়ে বদ্ধ ঘরে বেশি বিপজ্জনক। এ কারণে জানালবিহীন পাবলিক টয়লেট, স্নানাগার, অফিসকক্ষ, শপিংমল এ ধরনের জনসমাগম স্থল এড়িয়ে চলতে হবে। ভিড়ের মধ্যে একসঙ্গে বেশি পরিমান ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যা ধ্বংস করা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সক্ষমতার বাইরে।

নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

225 ভিউ

Posted ১১:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ জুন ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com