সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কানাডায় স্থায়ী অভিবাসনের আড়ালে বাংলাদেশীদের অর্থ ও সম্পদ পাচার

রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০
140 ভিউ
কানাডায় স্থায়ী অভিবাসনের আড়ালে বাংলাদেশীদের অর্থ ও সম্পদ পাচার

কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জানুয়ারী) :: উন্নত জীবনের খোঁজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। অর্থ ও সম্পদ পাচারের দুরভিসন্ধিসহ নানা কারণে আইনের নাগাল এড়ানোর তাগিদ থেকেও ঘটছে অনেক স্থায়ী অভিবাসনের ঘটনা। শরণার্থী হিসেবেও যাচ্ছেন অনেকে।

বছর সাতেক আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি  ও পরিবার কানাডার ওন্টারিওতে অভিবাসী হন, তাদের ওপর একটি জরিপ চালায় বেঙ্গলি ইনফরমেশন অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস (বিআইইএস)। ১০০ জনের ওপর পরিচালিত ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৭২ শতাংশেরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে। নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ ও উপযুক্ত পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তারা। যদিও কানাডায় এসে এদের ৭০ ভাগই ভালো কোনো কাজ পাননি। এ কারণে অনেকে কানাডীয় ডিগ্রি অর্জনের জন্য নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। মাত্র ১৭ শতাংশ অভিবাসী দেশ থেকে অর্জিত দক্ষতা অনুসারে উপযুক্ত চাকরি পেয়েছেন।

উন্নত জীবনের প্রলোভন ও ভাগ্যান্বেষণে  পাশ্চাত্যের দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের এ প্রবণতা মোটেও নতুন নয়। তবে সম্প্রতি বিনিয়োগ কোটায় দেশ থেকে অবৈধ অর্থ স্থানান্তরিত করে স্থায়ী অভিবাসনের ঘটনা বেড়েছে ব্যাপক মাত্রায়। বিনিয়োগ কোটায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়াদের একটা অংশ দেশ থেকে দুর্নীতি, ব্যাংক লুট ও সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধভাবে ধনী হয়ে কানাডায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন। এদেরই একজন চট্টগ্রামের বাদশা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইসা। কয়েকটি ব্যাংকের ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ পরিশোধ না করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন এ ব্যবসায়ী। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার ভাই মোহাম্মদ মুসাকেও।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীম। প্রায় হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রেখে বর্তমানে কানাডায় পালিয়ে আছেন তার মালিকানাধীন ক্রিস্টাল গ্রুপের তিন কর্ণধার ও পরিবারের সদস্যরা। তিনি নিজেও কানাডা-বাংলাদেশ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন।

কানাডা সরকারের তথ্যমতে, পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর তিন হাজারের অধিক বাংলাদেশী কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।  আর ২০০৬ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পিআর পেয়েছেন ৪৪ হাজার ১৮৬ জন বাংলাদেশী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেসব বাংলাদেশী বিনিয়োগকারী কোটায় কানাডায় পিআর সুযোগ পেয়েছেন তাদের একটা অংশ মূলত অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় এ বিনিয়োগ করেছেন। দেশ থেকে নেয়া দুর্নীতি ও লুটের টাকায় সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছেন তারা।

বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যান জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু, যিনি জি বি হোসেন নামে পরিচিত। লুটের টাকায় সেখানে ৮-১০টি পেট্রলপাম্প, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও বিলাসবহুল বাড়িও কিনেছেন তিনি।

ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করেই কানাডায় স্থায়ী আবাস গড়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী দিদারুল আলম। দেশে থাকাকালীন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইফফাত ইন্টারন্যাশনালের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি।  এই টাকার  সিংহভাগই তিনি বিদেশে পাচার করেন এবং পরবর্তী সময়ে নিজেও সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে যান।

২০১০ সালের দিকে ইস্পাত, শিপব্রেকিং ও আবাসন ব্যবসার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মিশম্যাক গ্রুপের কর্ণধার তিন ভাই হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান শাহীন ও মুজিবুর রহমান মিলন। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেন। এদের মধ্যে মিজানুর রহমান শাহীন ও হুমায়ুন কবির বর্তমানে সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করছেন। ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা না দিয়ে বর্তমানে সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন আরেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন। তিনি শিপব্রেকিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার।

দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের প্রবণতা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি  বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনার কিছু প্রকাশ পাচ্ছে। কানাডাসহ অন্যান্য দেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই এ সুযোগ নিচ্ছেন অর্থ পাচারকারীরা। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করছেন তারা। দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার রোধে এসব দেশের সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর আরো উদ্যোগী হওয়া উচিত।

কানাডা বিভিন্ন খাতে পেশাজীবীদের জন্য অভিবাসনের সুযোগ দেয়ায় দেশটিতে প্রতি বছরই যাচ্ছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশী। আবার মাত্র দেড় লাখ কানাডীয় ডলার বা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা দিলেই বিনিয়োগ কোটায় কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়। রফতানিকারকরা তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সীমিত অংশ ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনার জন্য বৈধভাবে বিদেশে রাখতে পারেন। তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীসহ দেশের বেশকিছু রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে এই কোটার সুযোগ নেন। এর বাইরে দেশ থেকে অর্থ লুট করে কানাডায় পাড়ি দিচ্ছেন ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের অনেকেই। অবৈধ অর্থ পাচার করে যারা কানাডায় বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে সেখানে বসবাসকারী অন্য বাংলাদেশীদের এক ধরনের দ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে।

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে কানাডায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিরা। নগদ টাকায় মিলিয়ন ডলারের বাড়ি কিনে এখানে ব্যবসাও শুরু করছেন  তারা। এমনকি তারা কমিউনিটির মধ্যেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। দেশে তাদের দুর্নীতির কিছু সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। এ নিয়ে প্রতিবাদও হচ্ছে সেখানে। এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা ২৪ জানুয়ারি বাঙালিপাড়া ড্যানফোর্থের মিজান কমপ্লেক্সে সভার আয়োজন করেছেন।

কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক ও নতুন দেশের প্রধান সম্পাদক সওগাত আলী সাগর বলেন, দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ পাচার করে কানাডায় এসে বসবাস করছেন এমন অনেকেই রয়েছেন। কারো কারো ক্ষেত্রে অর্থ পাচারের এ পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। কানাডায় তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা কিংবা আয়ের উৎস নেই। অথচ যাপন করছেন বিলাসবহুল জীবন। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্য নেই তাদের। তবে এখন কমিউনিটিতে এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠছে।

নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নেন চট্টগ্রামের আরেক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম। সেই ঋণ পরিশোধ না করেই এখন সপরিবারে কানাডায় বসবাস করছেন তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছোট-বড় শতাধিক ব্যবসায়ীর কমপক্ষে শতকোটি টাকা পাওনা রয়েছে তার কাছে। পাওনাদারদের এসব টাকা পরিশোধ না করে ২০১৫ সাল থেকে সপরিবারে কানাডায় আছেন তিনি।

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইয়াছির এন্টারপ্রাইজ। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি বড় পরিসরে ভোগ্যপণ্য আমদানি শুরু করে। ২০১২-১৩ সালে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বড় লোকসান হলে ব্যাংকের দায় না মিটিয়েই ২০১৪ সালের শুরুর দিকে সপরিবারে কানাডা পাড়ি দেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মোজাহের হোসেন।

এতদিন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও একই ধরনের প্রতারণায় যোগ দিয়েছেন নিতাইগঞ্জের এক ব্যবসায়ী। সম্প্রতি আত্মগোপনে যাওয়া আবদুর রাজ্জাক নামের এ ব্যবসায়ীর কাছে খাতুনগঞ্জ ও নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীদের পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের এ পাওনা পরিশোধ না করে এ ব্যবসায়ী সম্প্রতি কানাডায় পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

কানাডা প্রবাসী আরেক বাংলাদেশী সাংবাদিক শওকত মিলটন বলেন, ‘আমরা যেভাবে দেশে চলেছি সেভাবে চলার জন্য পরিবারের দুজনকেই সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। দুর্নীতিবাজদের কেউ কেউ কমিউনিটিতে অর্থ খরচ করে নাম-যশ চায়, আবার কেউ কমিউনিটি থেকে দূরে থাকে। তবে এখন বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন তাদের বিরুদ্ধে একটু একটু করে সোচ্চার হয়ে উঠছে।’

140 ভিউ

Posted ৩:০১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com