বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

’কুলধারা’ : রাতের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া অভিশপ্ত ভৌতিক নগরীর ইতিহাস

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯
499 ভিউ

কক্সবাংলা ডটকম(২ ডিসেম্বর) :: প্রাচীন জনপদ কিংবা কোনো পুরনো অট্টালিকা সবসময় অনুসন্ধিৎসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এসব ঐতিহাসিক স্থানে জড়িয়ে থাকে কত গল্প-কল্পকাহিনী। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হতে থাকে সত্য মিথ্যার এক আলো আঁধারি ইতিহাস। কৌতূহলী কিছু মানুষের মনে এসব ঘটনা রেখাপাত করে, আবার কোনো কোনো অবিশ্বাসী মন হেসেই উড়িয়ে দিতে চায় সেসব গল্প বা ঘটে যাওয়া সেসব অজানা কাহিনীকে। হয়তোবা সত্যের কাছাকাছি কিছু আরোপিত ঘটনার মিশেল এড়িয়ে যেতে পারলেই ঐতিহাসিক অনেক ঘটনা আমাদের সামনে অনেকটা বাস্তব চিত্র আকারে দেখা দিতে পারে।

এমন এক নগরীর গল্প শোনাবো আজ। রাজস্থানের জয়সলমীর ভারতের প্রসিদ্ধ একটি শহর। তবে আমাদের এই কাহিনী জয়সলমীরকে কেন্দ্র করে নয়। জয়সলমীর থেকে খুব বেশি একটা দূরে নয়, ১৭-১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি শহর, নাম কুলধারা। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই নগরটি কীভাবে এক রাতের মধ্যে অভিশপ্ত হয়ে পড়লো আজ তারই কাহিনী বলব।

অভিশপ্ত নগরী কুলধারা; Image Source: Travel Tales from India

সোনালি বালির মাঝে মরুদ্যানের মতোই মাথা তুলে একটা সময়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল কুলধারা। ৮৪টি ছোট ছোট সম্প্রদায়ভিত্তিক গ্রাম মিলিয়েই গড়ে উঠে ছিল এই নগরী। ১২৯১ সালের দিকে মূলত পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা এই গ্রামের পত্তন করেন। সেই সময় প্রায় পনেরশ’ মানুষের বেশ সমৃদ্ধ এক জনপদ ছিল কুলধারা। রাজস্থানের চারপাশ মরু অঞ্চল হওয়া স্বত্ত্বেও কুলধারায় কিন্তু সেই সমস্যা ছিল না। আবহাওয়া ও প্রকৃতি একটু ব্যতিক্রমই ছিল বলা যায়। এই অঞ্চলে শস্যের কোনো কমতি ছিল না।

পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা মূলত কৃষি কাজে দক্ষ ছিল। ফলে এলাকাটি কৃষি এবং ব্যবসার জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল সেসময়। কী ছিল না কুলধারায়! প্রাচীন মন্দির থেকে শুরু করে, নিখুঁত নকশায় বানানো বিভিন্ন বাড়ি এখনও অক্ষত দেখা যায়।

কুলধারা নগরীতে প্রবেশের পথ;Image Source: Haunted India

কিন্তু হঠাৎ এক রাতেই এই নগরী জনমানবহীন হয়ে পড়ল। রাজস্থানের মতো রুক্ষ অঞ্চলে যেখানে বসবাসের উপযোগী জায়গা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার, সেখানে পানীয় জলের অভাব নেই, প্রকৃতিও তেমন রুক্ষ নয় এমন নগরী মানুষের বসবাসের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো কেন, তা খুবই অবাক করা ব্যাপার।

পরিত্যক্ত কুয়ো;Image Source: news.com.au

১৮২৫ সালের দিকে মাত্র এক রাতের মধ্যেই চুরাশিটি গ্রামের অধিবাসীরা স্রেফ গায়েব হয়ে যায়। টানা সাত শতক ধরে এই গ্রামে বসবাস করার পর কেন ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা হঠাৎ করেই এই নগরী ছেড়ে চলে গিয়েছিল তা আজও সকলের কাছে অজানা।

এখনো অটুট থাকা কুলধারার বিখ্যাত মন্দির;Image Source: news.com.au

শোনা যায়, প্রায় দুইশো বছর আগে জয়সলমীরে এক অত্যাচারী দেওয়ান ছিলেন। তার নাম সেলিম সিং। কর আদায়ের জন্য হেন দুর্নীতি ছিল না, যার আশ্রয় তিনি নেননি। এই সেলিম সিংয়ের একদিন নজর পড়ল কুলধারার গ্রামপ্রধানের সুন্দরী কন্যার দিকে। সে ওই মেয়েকে জোর করে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু ব্রাহ্মণদের প্রতিবাদের মুখে তা সম্ভব হয় না। সেলিম সিং ওই মেয়েটির জন্য খুবই বেপোরোয়া হয়ে উঠে। নিজে গ্রামে এসে যায়, ওই মেয়েটিকে তার চাই-ই চাই! নইলে, অস্বাভাবিক করের বোঝা মাথায় নিয়ে বাঁচতে হবে কুলধারার ৮৪টি গ্রামকে।

কুলধারার বর্তমান অবস্থা;Image Source: lakshmisharath.com

সেই রাতেই ঘটে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। রাতারাতি ৮৪টি গ্রামের লোক যেন মিলিয়ে যায় বাতাসে! কেউ বলেন, গ্রামবাসীরা দেওয়ানের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এক বস্ত্রে। আবার কারো মতে, কুলধারার অধিবাসীরা পরবর্তী সময়ে পশ্চিম রাজস্থানের যোধপুর শহরের কাছাকাছি কোনো একটি স্থানে বসতি গেড়েছিল। কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্যে তেমন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ৮৪টি গ্রামের লোক না-হয় রাতের আঁধারে গ্রাম ছাড়তেই পারে! কিন্তু এত বড় দল কোথাও যদি চলে বা পালিয়ে যায়, তবে কোথাও না কোথাও তো পথের মধ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে। অথচ কেউই তাদের দেখলো না তা কী করে সম্ভব! আর তারা যদি  অন্যত্র গিয়ে বসতি গড়তো তাহলে তাদের বর্তমান প্রজন্মও থাকার কথা। কিন্তু পুরো ভারতে কুলধারা গ্রামের পালিওয়াল সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণদের কোথাও দেখা পাওয়া যায়নি। সেরকম তথ্যও কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

কালের পরিক্রমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নগরী;Image Source: Travel Tales from India

তাহলে কি অলৌকিক কোনো বিদ্যার আশ্রয় নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা? আত্মহত্যা করলেও তো দেহ পড়ে থাকত! কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। দেওয়ান এসে দেখেছিলেন, গ্রামের পর গ্রাম ফাঁকা পড়ে আছে। সব কিছুই রয়েছে যথাস্থানে। শুধু মানুষ নেই!

সেলিম সিং এর পর নতুন করে গ্রাম বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউ সেই গ্রামে রাত কাটাতে পারত না। তাদের মৃত্যু হত। মৃত্যুর কারণও জানা যেত না। এরপর থেকে নানা কাহিনী প্রচার হতে থাকে। তবে অধিকাংশ লোকেই মনে করে কুলধারার অধিবাসীদের অভিশাপের কারণেই আর কেউ এই এলাকায় বসতি স্থাপন করতে পারেনি। মিলিয়ে যাওয়ার আগে তারা নাকি অভিশাপ ছড়িয়ে দিয়েছিল নগরীর বাতাসে- কেউ এখানে বাস করতে পারবে না। যেমনটা তারাও পারেনি! সেই থেকে কুলধারা এক পরিত্যক্ত নগরী হয়ে পড়ে রয়েছে।

পরিত্যক্ত হওয়ার পরও কুলধারার কিছু বাড়ি এখনো অটুট থাকার জলন্ত ছবি;Image Source: news.com.au

সেই ঘটনার পর কত বছর কেটে গেল। তারপরও নতুন করে জনবসতি গড়ে উঠেনি কুলধারায়। জয়সলমীরের কুলধারায় এখন অবধি কেউ পা রাখতে সাহস করেন না। অন্তত রাতের বেলায় তো নয়ই! কুলধারায় যারা রাত কাটিয়েছেন, কোনো না কোনো বিপদের মুখে পড়েছেন। কুলধারায় রাত কাটিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে মৃত্যুর দিকে, এমন উদাহরণও কম নেই!

এখনো অটুট থেকে যাওয়া কুলধারার কিছু বাড়ির পুরনো স্থাপত্যশৈলী;Image Source: www.indiamike.com

কালের নিয়মে কিছু বাড়ি তো ভেঙেচুরে গেলোও বেশ কিছু বাড়ি এখনও অটুট আছে। অটুট আছে মন্দিরও। কালের এতটুকুও আঁচড় পড়েনি গ্রামের মাঝখানের ছত্রীতে। একটু অবাক করা ব্যাপার নয় কি? সময়ের সাথে সাথে যেখানে সব বাড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, সেখানে এই তিনটি রক্ষা পায় কীভাবে? কীভাবেই বা রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে বাড়ির দেওয়ালের অলঙ্করণ? এখনো অবিকল একই রকম অবস্থায় আছে নগরটি। কুলধারার আশেপাশের অঞ্চলগুলো অনেক উন্নত হয়ে গেলেও কুলধারা যেন সেই সময়টাতেই থমকে আছে।

Image Source: sangbadpratidin.in

এই নগরটি  নিয়ে কিছু গবেষক নানারকম গবেষণাও চালিয়েছিলেন। সেসব গবেষণায় এমন কিছু বিষয় উঠে আসে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। ২০১৩ সালে দিল্লির প্যারানর্ম্যাল সোসাইটির বেশ কিছু সদস্য রাত কাটাতে গিয়েছিল কুলধারায়।  অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে তাদের চারপাশের আবহাওয়া। এই কনকনে ঠাণ্ডা, তো এই অসহ্য গরম! আর তাপমাত্রার ওই দুই অবস্থাতেই স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়।

কয়েকজন সদস্যকে ধাক্কা দেয় কেউ! পিছনে ফিরে দেখা যায়- ধারেকাছে কেউ নেই! রাত বাড়লে শোনা গিয়েছিল কান্নার আওয়াজ। সকালবেলায় উঠে তারা দেখতে পান, গাড়ির কাঁচে কোলের শিশুর হাতের ছাপ! মোট ৫০০টি স্থানে পরীক্ষা চালিয়ে এরকম বেশ কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন গবেষকরা। তাহলে কি এখনও বছর তিনশো আগের ওই গ্রামবাসীরা অদৃশ্য হয়ে, অশরীরী রূপে থেকে গিয়েছেন গ্রামেই?

পরিত্যক্ত হওয়ার পরও এখনো টিখে থাকা কিছু স্থাপত্যশৈলী;Image Source: Travel Tales from India

সমগ্র ভারতের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কেন্দ্র ভাবা হয় রাজস্থানকে। আর তারই একটি নগরী কুলধারা আজ কালের অতল গহবরে হারিয়ে গেছে।  বছরের পর বছর তিল তিল করে গড়ে ওঠা জনপদ কুলধারা রাতারাতি হয়ে পড়ে ভৌতিক। বর্তমানে ভারত সরকার একে হেরিটেজ নগরী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দেখে আসবেন নাকি সেই ভৌতিক অভিশপ্ত নগরী- কুলধারা?

499 ভিউ

Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com