শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

গৌরব হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘বুয়েট’

মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
524 ভিউ
গৌরব হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘বুয়েট’

কক্সবাংলা ডটকম(২৪ অক্টোবর) :: ইয়াহু, গুগল থেকে শুরু করে মাইক্রোসফট ও ইউটিউব। আইবিএমের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে বুয়েট প্রকৌশলীদের সরব উপস্থিতি। বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ পুরকৌশলীর (এফআর খান) গড়ে ওঠাও বুয়েটেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দক্ষ প্রকৌশলীর জোগানদাতা সেই প্রতিষ্ঠানটিই গৌরব হারাচ্ছে। গবেষণার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হলেও বুয়েটের ল্যাবগুলোয় যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন সেভাবে হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে উচ্চতর গবেষণা। বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

বিদ্যমান ল্যাব দিয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও প্রশিক্ষণ চললেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উচ্চতর গবেষণায়। সম্প্রতি ‘ক্যালিব্রেশন অ্যান্ড ভ্যালিডেশন অব ট্রাফিক প্যারামিটারস ভায়া ভিসিম ফর নন-লেন বেজড ট্রাফিক’ শীর্ষক গবেষণা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় সিভিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া নওরোজ মুনিয়াকে। বিভাগটিতে ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট-বিষয়ক মাল্টি মোডাল ট্রাফিক ফ্লো সিমুলেশন সফটওয়্যার প্যাকেজ পিটিভি ভিসিম না থাকায় এ সমস্যায় পড়তে হয় তাকে।

অভিসন্দর্ভপত্রে সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে সাদিয়া নওরোজ মুনিয়া লেখেন, সফটওয়্যারটির ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করতে হয়েছে তাকে। এর ফলে বিভিন্ন প্যারামিটার ব্যবহারের সুযোগ পাননি তিনি। ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি সফটওয়্যারটি সংগ্রহ করতেও পারেননি।

সাদিয়া নওরোজ মুনিয়া গবেষণাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হকের অধীনে। সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণদানের জন্য বেশকিছু ল্যাব রয়েছে। কিন্তু মূলত সংকট দেখা দেয় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে।

বিশেষ করে পিএইচডি করতে আসা শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হন। ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারগুলো কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া দামি যন্ত্রপাতি মেইনটেন্যান্সের মতো দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের দুরবস্থা সত্যিই হতাশাজনক।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের অটোমোবাইল বিষয়ে প্রায়োগিক শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হিট ইঞ্জিন ল্যাব। স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত ল্যাবটির যন্ত্রপাতিগুলো খুবই পুরনো। প্রতিষ্ঠার চার দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আধুনিকায়ন হয়নি ল্যাবটির।

দূরদর্শী পরিকল্পনার অভাবে দেশের অন্যতম শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠ শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করেন বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রূপায়ন চৌধুরী। তিনি বলেন, বিশ্বের খ্যাতনামা অনেক প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

তবে দূরদর্শী পরিকল্পনা না থাকায় দেশের অন্যতম শীর্ষ এ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার গুণগত মানে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটছে না। একই সঙ্গে এখান থেকে মৌলিক ও মানসম্পন্ন গবেষণাও আসছে না। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।

স্থাপত্য শিক্ষায় সুনাম রয়েছে বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের। যদিও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য বিভাগটিতে কোনো ওয়ার্কশপ নেই। প্রিন্টিং ও লেজার মেশিন, ইলেকট্রিক স, ওয়েল্ডিং মেশিনের মতো মৌলিক প্রয়োজনেও শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় বাইরের ল্যাবের ওপর। এজন্য তাদের ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।

স্থাপত্য বিভাগের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগেই পূর্ণাঙ্গ ল্যাব সুবিধা নেই। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকৌশলীর জোগানদাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এ সংকটকে দুর্ভাগ্যজনক বলছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। এসবের প্রভাব পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রেও।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা, উদ্ভাবন ও সমাজে এর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরই শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে আসছে স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস। বিজ্ঞান গবেষণার র্যাংকিংয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বুয়েটের অবস্থান ছিল ৬২৫তম। ২০১৭ সালে এসে কয়েক ধাপ অবনমন হয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬৪২-এ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় এ বিদ্যাপীঠকে সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন বুয়েট থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী। রিসোর্স ও আস্থার অভাবে বর্তমানে দেশের প্রকল্প, বিশেষ করে পদ্মা সেতুতেও আমাদের অংশগ্রহণ কম। বিদেশীদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। এটি কাম্য নয়। নিজেদের আত্মমর্যাদার জন্য হলেও বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে বিশেষভাবে অর্থায়নের প্রয়োজন।

বুয়েটে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধাবীদের মূল্যায়নের বিষয়টি প্রশংসিত। তবে শিক্ষাজীবন শেষ করেই যারা শিক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন, তাদের জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে শ্রেণীকক্ষে কাঙ্ক্ষিত পাঠদান করতে পারছেন না তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এখানে পাস করে বের হওয়ার পর পরই সামনের সারির শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের পর পরই তারা আমাদের ক্লাস নেন। কিন্তু বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না থাকায় শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনাটা ভালোমতো করতে পারছেন না তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইস্যুতে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনাও ঘটছে। প্রশাসনে দলীয় নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১১ সালে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। ওই সময় দফায় দফায় কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা। এতে বিঘ্নিত হয় শিক্ষাকার্যক্রম। এপ্রিলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ২০১৫ সালেও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয় শিক্ষক সমিতি। কনসালট্যান্সি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার জড়িত হওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে বুয়েটের অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তবে নিয়মিত পাঠ্যক্রমের বাইরে এ ধরনের এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ অনেক শিক্ষার্থীর। দীর্ঘদিন ধরে একটি সুইমিংপুল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরকারের অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া এসব সংকট সমাধান করা সম্ভব নয় বলে জানান বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।  তিনি বলেন, সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই সরকারি অর্থে পরিচারিত হয়। তবে প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার আমাদের যে বরাদ্দ দেয়, সেটা যথেষ্ট নয়। প্রতি বছরই আমরা শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

এজন্য শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়াতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের লোকবল, যন্ত্রপাতি ও জায়গা বাড়ানো দরকার। ল্যাবের যন্ত্রপাতিগুলো খুবই ব্যয়বহুল। পাশাপাশি যন্ত্রপাতি পরিচালনায় প্রয়োজন অতিরিক্ত লোকবল। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সম্প্রতি হেকেপের অধীনে কিছু অত্যাধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমার মতে, সরকারের উচিত সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো।

এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বুয়েটের। বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রি-পেইড মিটার উদ্ভাবন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মানোন্নয়ন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসে।

এছাড়া সহজলভ্য ও টেকসই নির্মাণসামগ্রী উদ্ভাবন, আর্সেনিকের মূল কারণ অনুসন্ধান ও তা দূরীকরণে মৌলিক গবেষণা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়েও গবেষণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

524 ভিউ

Posted ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com