এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১১ জুলাই) :: চকরিয়ায় ৬ দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিরামহীণ ভারী বৃষ্টিপাত ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সাথে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারনে অভ্যান্তরীণ একাধিক সড়ক তলিয়ে গেছে পানির নীচে। এতে উপজেলা ও পৌরসভার প্রতিটি জনপদে বেড়ে চলছে জনদুর্ভোগ।
শুক্রবার থেকে টানা ৬দিন চকরিয়া, লামা ও আলীকদমে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টির পানি রাতের দিকে মাতামুহুরী নদী দিয়ে ভাটির দিকে চলে আসে। এ সময় নদীর দুই তীর উপচে উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল ও উপকূলীয় সাত ইউপি ও পৌরসভার একাংশসহ এলাকার শতাধিক গ্রাম ডুবে রয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) এসএম তারেক বিন সগীর বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে নদীতে পাহাড়ি ঢলের প্রবাহ আরো বাড়তে পারে। তাতে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।
সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক ও কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন , আমাদের ইউপি দুটি মাতামুহুরী নদী একেবারে লাগোয়া। নদীর পানি বাড়তে থাকায় এলাকায় অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট, স্কুল, ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে বার বার তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এলাকার জনসাধারণ। বর্তমানে শতশত পরিবারে রান্নার কাজও বন্ধ রয়েছে ।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল হোছেন বলেন , টানা বৃষ্টিতে কৈয়ারবিলের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউপির খিলছাদক, ভরন্যারচর, বানিয়ারকুম গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ৬ দিনের টানা বৃষ্টিতে এলাকার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোও বর্তমানে ঢলের পানির নিচে রয়েছে । এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চিরিংগা ইউপির চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, এখনো অধিকাংশ এলাকায় পানি ঢুকেনি। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হলে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি জোনের বেশিরভাগ মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে কয়েকশ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে দেড়শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতায় আটকা পড়েছেন। বন্যার পানি দ্রুত নামার জন্য পৌর ড্রেনগুলো পরিস্কার করা হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি এরই মধ্যে বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চিরিংগা শহর রক্ষা বেড়ী বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে পৌরশহর হুমকীর মুখে পড়তে পারে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, চকরিয়ার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। কবলিত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে । জরুরীভাবে বন্যা দুর্গতএলাকাগুলোতে ৩০ মে: টন চাল বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আরো শুকনো খাবারের চাহিদা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দূর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Posted ১১:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta