কক্সবাংলা ডটকম :: ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফের যাত্রা শুরু করেছে চন্দ্রযান। ১৪ জুলাই৷ সময় ঠিক ২টো বেজে ৩৫ মিনিট৷ ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল আরও এক সুবর্ণ সময়৷ চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-৩৷ হল সফল উৎক্ষেপণ৷
শুক্রবার শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। ৪০ দিন পরে আগামী ২৩-২৪ অগাস্ট নাগাদ চাঁদের বুকে নামার কথা এই চন্দ্রযানের৷
এর আগে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি উৎক্ষেপণ হয় চন্দ্রযান ২।সবশেষ ৬ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপিত চন্দ্রযান ২-এর অরবিটরটি সফলভাবে চন্দ্রকক্ষে প্রবেশ করলেও অবতরণের ঠিক আগের মুহূর্তে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর চন্দ্রযান-২ নভোযান। পরে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়।
সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তাই ৬১৫ কোটি টাকা খরচ করে ফের নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে চন্দ্রযান ৩। চার বছর আগে একেবারে শেষমুহূর্তে চন্দ্রযান-২ এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্বপ্ন ভাঙে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর।
এবারের চন্দ্রযাত্রার কেন্দ্রে রয়েছে এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জোগাবে ও পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দেবে। এলভিএম-৩ একটি ত্রিস্তরীয় উৎক্ষেপণ যান। এর আগে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ ও চন্দ্রযাত্রায় এ যান ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্তরে কঠিন জ্বালানি ও একটি স্তরে তরল জ্বালানি রয়েছে। কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করে তরল জ্বালানি। তা ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটি চালনা করে।
বর্তমানে ফ্রান্সে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল প্যারিসে প্রবাসী ভারতীয়দের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ও প্রতিভার ওপর নির্ভর করেই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব এগিয়ে যাবে। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তাতে ওই বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেটার প্রমাণ হলো আমাদের মহাকাশ কর্মসূচি। থুম্বাতে রকেট স্টেশন নির্মাণের আলোচনা শুরু হয়েছিল, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ফ্রান্স। তারপর থেকে মহাকাশ ক্ষেত্রে দুই দেশই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। আজ আমরা একে অপরের স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণ করছি। আর এটা শুনে আপনারা আনন্দিত হবেন যে আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন ভারতে চন্দ্রযান-৩ এর উৎক্ষেপণের জন্য কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরই ভারতের শ্রীহরিকোটা থেকে সেই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ হবে।’
২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ল্যান্ডার বিক্রমকে চাঁদের পিঠে নামাতে ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। অতীতের অভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনো চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এবার ইসরো আর কোনো অরবিটার পাঠাবে না চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের মাটিতে নামতে কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার আর তার ভেতরে থাকা রোভার।
চাঁদের মাটিতে নেমে দুই সপ্তাহ ইসরোর গবেষণা চলবে। এতে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও নাসার সাহায্যও নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, ১৪ জুলাই উৎক্ষেপণের পরে চাঁদের মাটিতে পৌঁছতে চন্দ্রযান ৩-এর বেশ অনেকটা সময় লাগবে। ২৩ আগস্ট চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। সেখানে পৌঁছে চাঁদের হিসাবে একদিন কাজ করবে এই চন্দ্রযান, যা পৃথিবীর হিসাবে প্রায় ১৪ দিনের সমান।
এই সময়ের মধ্যে চাঁদের মাটি পরীক্ষা করে দেখবে চন্দ্রযানের রোভার। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, আগের বার চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে গেলেও সেখানে অবতরণের সময়ে ভেঙে পড়েছিল চন্দ্রযান। তবে এবার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে সেরকম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই।
৬৪০টন ওজনের এই চন্দ্রযান ৩ তৈরি করতে মোট ৬১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ৪৩.৫ মিটার উঁচু ও ৪ মিটার চওড়া চন্দ্রযানে থাকবে তিনটি মডিউল- প্রোপালশান, ল্যান্ডার ও রোভার। প্রোপালশান মডিউল মূলত একটি রকেট যা চন্দ্রযান ৩-কে উৎক্ষেপন করতে সাহায্য করবে। ল্যান্ডারের কাজ হল চাঁদের কক্ষপথ থেকে রোভারকে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামিয়ে আনা। রোভার একটি ছয় চাকা যুক্ত রোবটযান যেটি চন্দ্রপৃষ্ঠে হেঁটে বেড়াবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ও ছবি পৃথিবীতে পাঠাবে।
পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করে মোট ছ’টি ধাপে চাঁদে পৌঁছে যাবে এই চন্দ্রযান ৩। শ্রীহরিকোটার উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথেই ঘুরপাক খাবে চন্দ্রযান। সেখান থেকে ধাপে ধাপে প্রবেশ করবে চাঁদের কক্ষপথে। সেখানে পৌঁছেই প্রোপালশন মডেল থেকে আলাদা হয়ে যাবে ল্যান্ডার। তারপর বিছিন্ন হয়ে যাওয়া ল্যান্ডার থেকেই চাঁদের মাটিতে নেমে পড়বে রোভার। মূলত চাঁদের দক্ষিণ মেরু এলাকায় কাজ চালাবে রোভারটি। সেখান থেকেই মিলবে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এই অভিযান সফল হলে চাঁদের পৃষ্ঠে রোভার অবতরণ করাতে পারা সফল চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চন্দ্রপৃষ্ঠে নভোযান নামিয়েছে।
১৯৫৮ সাল থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের জন্য অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশ ৭০টি সফল কিংবা আংশিক সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। ৪১টি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এসব তথ্য জানিয়েছে।
Posted ১২:০৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta