রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানে উচ্চাভিলাষী অভিযানে নামল নাসার ‘পারসিভের‌্যান্স’

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১
1710 ভিউ
মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানে উচ্চাভিলাষী অভিযানে নামল নাসার ‘পারসিভের‌্যান্স’

কক্সবাংলা ডটকম :: প্রায় ৭ মাস ধরে মহাকাশে চক্কর কাটার পর মঙ্গলের মাটি ছুঁল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সর্বাধুনিক ল্যান্ডার ও রোভার ‘পারসিভের‌্যান্স’। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ৩টা নাগাদ মঙ্গলের মাটিতে নামে মহাকাশযানটি। কোনও কালে লাল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা খুঁজে বার করাই কাজ সেটির।

তার জন্য আগামী কয়েক বছর লাল গ্রহের মাটি খুঁড়ে পাথর, জীবাশ্ম, মাটি ইত্যাদির নমুনা সংগ্রহ করে ফিরে আসবে। ২০৩০ নাগাদ সেগুলি পৃথিবীতে গবেষণার জন্য এসে পৌঁছবে বলে আশাবাদী নাসার বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি পাঠিয়েছে রোভার।

Perseverance rover landing এর ছবির ফলাফল

নাসার এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ভারতীয় স্বাতী মোহন। ‘পারসিভের‌্যান্স’-এর গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশন্স (জিএনঅ্যান্ডসি)-এর প্রধান তিনি।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ‘পারসিভের‌্যান্স’ নিরাপদে মঙ্গলের মাটি ছুঁয়েছে, তা প্যাসাডেনায় নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি থেকে তিনিই নিশ্চিত করেন। সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে একে অপরকে অভিনন্দন জানান সেখানে কর্মরত সকলে।

যদিও নাসার ঘোষণার প্রায় ১১ মিনিট আগেই মঙ্গলে অবতরণ ঘটে মহাকাশযানটির। কারণ মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে রেডিয়ো সিগন্যাল এসে পৌঁছতে ১১ মিনিট সময় লাগে। পরে নেটমাধ্যমে অ্যানিমেশন ভিডিয়োর মাধ্যমে অবতরণের প্রক্রিয়া সামনে আনে নাসা। এ ছাড়াও মঙ্গলের জেজেরো গহ্বর থেকে ‘পারসিভের‌্যান্স’-এর তোলা একটি প্রথম সাদা-কালো ছবিও প্রকাশ করেন নাসার অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর টমাস জুরবুচেন।

মঙ্গলের মাটিতে ‘পারসিভের‌্যান্স’-এর এই ঐতিহাসিক অবতরণের পর নাসাকে অভিনন্দন জানান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘নাসা এবং সেই সমস্ত মানুষ যাঁরা পারসিভের‌্যান্স-এর এই ঐতিহাসিক অভিযানকে সফল করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন, তাঁদের সকলকে অভিনন্দন। আজ ফের এক বার প্রমাণ হয়ে গেল যে বিজ্ঞান এবং আমেরিকার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়’।

১৯৬৫ থেকে এখনও পর্যন্ত মঙ্গলের উদ্দেশে যতগুলি অভিযান করেছেন তাঁরা, তার মধ্যে ‘পারসিভের‌্যান্স’ সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন নাসার এক বিজ্ঞানী। যদিও ‘পারসিভের‌্যান্স’-এর হাত ধরে এই নিয়ে গত এক সপ্তাহে তৃতীয় বার মঙ্গল অভিযান ঘটল। গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং চিন থেকে দু’টি মহাকাশযান মঙ্গলের কক্ষপথে ঢুকে কাজ শুরু করেছে।

জেযেরো গহ্বর নিয়ে বিজ্ঞানীদের কেন এতো উৎসাহ?

৪৫ কিলোমিটার চওড়া জেযোরো-র নামকরণ করা হয়েছে বসনিয়া-হারজেগোভিনা শহরের নামে। স্লাভিক অঞ্চলের কোনও কোনও দেশের ভাষায় ‘জেযেরো’ শব্দের অর্থ হলো ‘হ্রদ’। হয়ত সে কারণেই এই নামকরণ। জেযেরোতে বিভিন্ন ধরনের পাথর রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মাটিপাথর এবং কার্বোনেটস।

বিজ্ঞানীদের উৎসাহের কারণ হলো, এ ধরনের পাথরের যে কোনও রকম অণুজীবের অস্তিত্ব সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। ফলে সূদুর অতীতে এই গ্রহে যদি প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকে, তাহলে এই পাথরের মধ্যে তার ইঙ্গিত মেলার আশা করছেন তারা।

প্রাচীন হ্রদের যেটা তীর ছিল, সেখানে পলির মতো সেডিমেন্ট রয়েছে- যাকে বলা হচ্ছে ‘বাথটাব রিং’। বিজ্ঞানীরা সেটা বিশ্লেষণ করতে বিশেষভাবে আগ্রহী। পৃথিবীতে যেটাকে স্ট্রোমাটোলাইট বলা হয়, এখানে তার সন্ধান চালাবে পারসিভেয়ারেন্স।

স্ট্রোমাটোলাইট হল ব্যাকটেরিয়ার নিঃসরণ থেকে তৈরি জমাট বাধা পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল স্ট্রোমাটোলাইটের জীবাশ্ম থেকেই।

ইন্ডিয়ানার পারডিউ ইউনিভার্সিটির ড. ব্রিওনি হর্গান বলেন, ‘কোনও কোনও হ্রদে দেখা যায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর আস্তরণ এবং কার্বোনেটের মধ্যে রাসায়নিক যোগাযোগের ফলে এ ধরনের বিশাল শিলাখণ্ডের স্তর তৈরি হয়। জেযেরোতে যদি একই ধরনের কাঠামোর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটা এই গবেষণায় আমাদের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে। সেটা হবে মঙ্গলের জৈব-জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার।’

মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান চালানো হবে কিভাবে?

বর্তমানে মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া বেঁচে থাকার অনুকূল নয়। সেখানে আবহাওয়া এতোটাই ঠাণ্ডা যে, পানি সেখানে তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। বায়ুমণ্ডলও এতোই পাতলা যে, চড়া আলোকরশ্মির বিকিরণ মাটির উপরিভাগের সবকিছু ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু সবসময় মঙ্গলের পরিবেশ এমন ছিল না। ৩৫০ কোটি বছর কিংবা তারও আগে সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল। বিভিন্ন যেসব খাঁড়ি দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো, তার ছাপ এখনও গহ্বরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। ক্ষতিকর বিকিরণ ঠেকানোর জন্য আবহাওয়ামণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘন আস্তরণও ছিল। প্রাণের অস্তিত্বের জন্য যেহেতু পানি গুরুত্বপূর্ণ, তাই মনে করা হয় মঙ্গল গ্রহে এক সময় জীবন ছিল।

মঙ্গলের মাটিতে এখনও কোনও প্রাণের লক্ষণ আছে কিনা, তা দেখতে ১৯৭০-এর দশকে ওই গ্রহে ভাইকিং নামে একটি মহাকাশ মিশন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের ফলাফল কিছু প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়।

অতীত মিশন

নাসা ‘মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভারস’ নামে একটি মহাকাশযান ২০০০ সালের প্রথম দিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়েছিল পানির সূত্র ধরে অনুসন্ধানের কাজে। অপারচুনিটি ও স্পিরিট নামে দুইটি মিশন তরল পানির উপস্থিতি সম্পর্কে ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল।

কিউরিওসিটি রোভার ২০১২ সালে মঙ্গলে অবতরণ করে এবং গহ্বরের যে অংশে সেটি নেমেছিল, সেটি এক সময় পানিতে ভরা ছিল। সেখানে জীবনের অস্তিত্ব থাকার উপকরণ রয়েছে। ওই রোভার এমন জৈব অণুর সন্ধান পেয়েছিল যাতে জীবনধারণের উপযোগী কার্বন রয়েছে। এখন পারসিভেয়ান্স তার অতি উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্র সরঞ্জাম দিয়ে একই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চালাবে আগামী দুই বছর।

ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার গবেষণাগারে এই পারসিভেয়ারেন্স মিশনের ডেপুটি প্রজেক্ট বিজ্ঞানী কেন উইলিফোর্ড বলেছেন, ‘ভাইকিং মিশনের পর এটাই এই গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের কাজ চালাচ্ছে। ভাইকিং-এর কাজ ছিল মঙ্গল গ্রহে এই মুহূর্তে প্রাণের কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা তা দেখা। আর নাসার এই বর্তমান মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গলের অতীত পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। কারণ যেসব তথ্য উপাত্ত আমাদের হাতে রয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রথম কয়েকশ’ কোটি বছর মঙ্গল গ্রহ জীবন ধারণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী গ্রহ ছিল।’

আগামীর পরিকল্পনা

পারসিভেয়ারেন্স সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাথরের নমুনা এখন সংগ্রহ করবে এবং ছোট ছোট টিউব বা সিলিন্ডারে ভরে সেগুলো মঙ্গলের পৃষ্ঠে রেখে আসবে। এই দশকের শেষে সেই সিলিন্ডারগুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য কয়েকশ’ কোটি ডলারের একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা (ইএসএ)।

সেটি হবে জটিল একটি মিশন। এর জন্য পাঠানো হবে দ্বিতীয় একটি রোভার। মঙ্গলে পাঠানো হবে একটি রকেট এবং একটি বিশাল উপগ্রহ, যেগুলোর মাধ্যমে জেযেরো থেকে সংগৃহীত সব নমুনা পৃথিবীতে আনা হবে বিশ্লেষণ ও গবেষণার জন্য।

পারসিভেয়ারেন্স অণুজীবের অস্তিত্বের কোন নমুনা যদি সংগ্রহও করতে পারে, যা মঙ্গল গ্রহে জীবনের অস্তিত্বের ইঙ্গিতবাহী হতে পারে, তা নিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক কাটাছেঁড়া হবে। এসব তথ্যপ্রমাণের বিশ্বাসযাগ্যতা নিয়ে তৈরি হবে নানা বিতর্ক, ঠিক যেভাবে পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম অস্তিত্ব নিয়ে অনেক বিতর্ক এখনও আছে। তাই এই গ্রহে অতীত জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণা ও তথ্যপ্রমাণের চুলচেরা বিশ্লেষণ মানুষের জন্য আগামী বহু বছর ধরে আগ্রহের বিষয় হয়ে থাকবে।

নাসার গবেষণাগার জেট প্রোপালসান ল্যাবের পরিচালক মাইক ওয়াটকিন্স বলেছেন, ‘এই মিশনের প্রথম কয়েকদিন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। কারণ এই প্রথম মঙ্গল গ্রহের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশে পৃথিবীর প্রথম প্রতিনিধি গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে আগে কেউ যায়নি।’

 

1710 ভিউ

Posted ৮:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com