কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুলাই) :: প্রতিদিন ভোরবেলা ছোট ছেলে মফিজুল ইসলামকে নামাজ পড়তে ডাকেন মা। এতে ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। জেগেই মাকে শুরু করেন গালাগাল। অবশেষে একদিন বাজার থেকে শিকল তৈরি করে নিয়ে আসেন এই ছেলে। এরপর প্রতিদিন ভোরে স্ত্রীকে দিয়ে মায়ের পায়ে শিকল দিয়ে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এভাবেই চলছে এক মাস। ঘটনাটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের।
ওই গ্রামের বাল্লক ওরফে পুটে গাজীর স্ত্রী জানু পারভীন (৭০)। স্বামী মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। নিজের গর্ভধারিণী মায়ের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। মায়ের অপরাধ ছেলেকে নামাজের জন্য প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ডাকা, প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া, মাঝে মধ্যে ঘরে-বারান্দায় ওঠা।
স্থানীয়রা জানান, জানু পারভীনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। থাকেন ছেলেদের সঙ্গে। ছোট ছেলে মফিজুল ইসলাম আর তার স্ত্রী ছাড়া বাকিরা কেউ দুর্ব্যবহার করেন না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি ছেলেদের নামাজের জন্য ডাকেন। কিন্তু এই ডাকাডাকি ছোট ছেলে মফিজুল ও তার স্ত্রীর সহ্য হয় না। মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তারা প্রতিদিন মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, মাঝে মাঝে ছোট ছেলের ঘরের বারান্দায় উঠলে ছেলের স্ত্রী ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। মায়ের এমন আচরণে ছোট ছেলে মফিজুল বাজার থেকে লোহার
শিকল বানিয়ে আনেন। সেই শিকল পায়ে দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এ অবস্থায় কেউ সেখানে গেলে বৃদ্ধা মা জানু পারভীন তাদের বাঁধন খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে কেউ সাহস করেন না মফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর ভয়ে।
ঘটনা নিশ্চিত করে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তাদের বলে বৃদ্ধা মাকে শিকলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম একদিন। পরবর্তীতে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। ছেলে মফিজুল বলছে, মায়ের মাথা ঠিক নেই। মানসিক ভারসম্যহীন। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি।
এদের শাস্তি হওয়া উচিত জানিয়ে শিবপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিছুর রহমান বলেন, ছোট ছেলে শফিকুলের বউ দজ্জাল। বৃদ্ধ শাশুড়িকে তার সহ্য হয় না। আর মফিজুল তো বইয়ের কথায় ওঠে আর বসে।
এদের আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক দেবাশীষ সরদার বলেন, ঘটনাটি জানা ছিল না। তবে অমানবিক এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
