কক্সবাংলা ডটকম(১৪ মে) :: যত দিন যাচ্ছে একটি একটু করে প্রতিষেধক নিয়ে আশা জাগছে। তবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। আর সেই ফলাফল খুব তাড়াতাড়ি হাতে আসবে বলে জানা যাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক স্যার জন বেল জানিয়েছেন, কয়েক’শ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলেই প্রচুর পরিমাণ ভ্যাক্সিন তৈরি করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
গত এপ্রিল মাসের শেষে মানুষের উপর প্রথম প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু করে ইউরোপে। অক্সফোর্ডে প্রথম এই পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষা চালানোর জন্য ৮০০ জনকে বেছে নেওয়া হয়।
এই ৮০০ জনের মধ্যে অর্ধেক কে দেওয়া হচ্ছে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক ও বাকিদের দেওয়া হবে কন্ট্রোল ভ্যাকসিন যা তাদেরকে মেনিনজাইটিস থেকে রক্ষা করবে, করোনাভাইরাস থেকে নয়।
এই পরীক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী কাকে কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তা তাঁরা জানতে পারবেন না, জানবেন শুধুমাত্র চিকিৎসকেরা। প্রথম যে দুজনের শরীরে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তাদের মধ্যে একজন হলেন এলিসা গ্রানাতু। তিনি নিজেও পেশায় একজন বিজ্ঞানী, তাই বিজ্ঞান কে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন তিনি।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সারা গিলবার্ট এর তত্ত্বাবধানে একটি টিম গত তিন মাসে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। আর এই ভ্যাক্সিন নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন সারা।
যদিও তিনি জানিয়েছেন যে পরীক্ষা করে তবেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এরপরই বলা যাবে যে ওই ভ্যাকসিন মানুষের উপর কতটা কাজ করছে। তবে ভ্যাকসিন যে কাজ করবে সে ব্যাপারে ৮০ শতাংশ নিশ্চিত অধ্যাপক।
একটি সাধারণ জ্বরের ভাইরাস থেকে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, যা শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার সেটিকে মডিফাই করা হয়েছে যাতে ওই ভাইরাস নতুন করে মানুষের শরীরের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এর আগে অক্সফোর্ডের টিম মার্সের ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল, সেটাও এক ধরনের করোনাভাইরাস। তাই এবারের ফলাফল নিয়েও আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন না তারা।
নতুন করোনাভাইরাসের টিকা ও চিকিৎসাসেবা প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিনামূল্যে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এক চিঠিতে সই করেছেন বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে পাঠানো চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ ১৪০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতা ওই চিঠিতে সই করেছেন। তাদের দাবি, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হলে তা যেন কোনোভাবেই পেটেন্ট করা না হয়। টিকার ফর্মুলা যেন সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
আগামী সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সে সভায় যাতে বিষয়টি মনোযোগ পায় এবং আলোচনা হয় তার জন্যই সংস্থাটির কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হলে তা যেন দ্রুত সব দেশের মানুষ কোনো বৈষম্য ছাড়াই পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এক হতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসা, পরীক্ষা বা কারিগরি পদ্ধতির কোনো পেটেন্ট না রেখে তা যেন সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও সই করেছেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-অ্যাডো, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জা পিটার বালকেন্দে, পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল বারোসা, ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক, লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেলজয়ী এলেন জনসন সেরলিফ, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস প্রমুখ।
ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি বৃহস্পতিবার বলেছে, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হলে তা প্রথমে দেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ ওয়াশিংটন কোম্পানিটিকে টিকা তৈরিতে অর্থায়ন করেছে।
সানোফির এমন মন্তব্যের মধ্যেই বিশ্বনেতাদের চিঠির বিষয়টি সামনে এলো। একই সঙ্গে ওষুধ কোম্পানিটির মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেছেন, ‘আফ্রিকার দেশগুলোসহ সবার জন্যই করোনাভাইরাসের টিকা পেটেন্টমুক্ত রাখার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। আবিষ্কার হওয়া মাত্রই সবাই যেন বিনামূল্যে টিকা পায় তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো দেশকে বিবেচনায় নিয়ে বা ধনী-গরীব বৈষম্য করে কাউকে টিকা থেকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না’।
Posted ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta