বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

জেরুজালেমের ইতিহাস

সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭
683 ভিউ
জেরুজালেমের ইতিহাস

কক্সবাংলা ডটকম(১১ ডিসেম্বর) :: জেরুজালেম। এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি নাম। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ায় বিশ্বব্যাপী আবারো আলোচনায় এসেছে এই নামটি। জেরুজালেম শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত সহস্র বছরের প্রাচীন ইতিহাস।

জেরুজালেম একটি শহরের নাম। বর্তমানে ইসরাইলেই অবস্থিত। এই শহরকে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলোর একটি বলে গণ্য করা হয়। তিনটি ধর্মের সঙ্গে খুবই ওতোপ্রতোভাবে ও গভীরভাবে জড়িত জেরুজালেমের নাম। ইহুদী, ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্ম।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুটি দেশই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে। ফলে এই দুটি দেশের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে এই শহর এবং সেখানে থাকা কিছু বিশেষ ছোট ছোট স্থানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রাচীন কাল থেকেই ভয়াবহ সংঘর্ষ চলে আসছে।

ইতিহাসে জেরুজালেম:

গবেষকদের দাবি প্রাচীন ব্রোঞ্চ যুগ থেকেই এখানে মানুষের বসবাস। ধারণা করা হয়, সেটা হতে পারে ৩৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকেই।

১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে কিং ডেভিড প্রথম জেরুজালেম জয় করেন এবং রাজধানী ঘোষণা করেন। তারপর তার ছেলে সলোমন অন্তত ৪০ বছর পরে এখানে প্রথম পবিত্র প্রার্থনালয় তৈরি করেন।

পরবর্তীকালে ৫৮৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ব্যবিলনীয়রা জেরুজালেম অধিকৃত করে। তারা সেই সব মন্দির ধ্বংস করে এবং ইহুদীদের নির্বাসনে পাঠায়। এরও ৫০ বছর পরে পার্শিয়ান রাজা সাইরাস আবার ইহুদীদের জেরুজালেমে ফেরত আসতে দেন এবং আবার মন্দির স্থাপন করেন।

৩৩২ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এসে আলেক্সা্ন্ডার দ্য গ্রেট জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরবর্তীতে কয়েক শত বছর ধরে নানান দল এই শহরটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে রোমান, পার্শিয়ান, আরবস, ফাটিমিড, সেলজুক, তুর্কি, ক্রুশাডার, ইজিপশিয়ান, মামেলুকিস ও মুসলিমরা ছিলো।

জেরুজালেম শহরটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যই। কেননা এখানেই শিশু হিসেবে এসেছিলেন যিশু খ্রিস্ট। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এখানেই ধর্ম প্রচার করেছেন তিনি এবং জীবনের শেষে এখানেই ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছেন ও ঈশ্বরের দ্বারা পুনরত্থিত হয়েছেন। আবার ইহুদীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাদের ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মোজেসেরও পূণ্যভূমি এই জেরুজালেম। ইহুদীদের প্রথম মন্দির এই শহরে অবস্থিত ছিলো।

এই লম্বা সময়ে জেরুজালেমের ইতিহাসে বেশ কিছু বড় বড় ধর্মীয় ঘটনাও ঘটেছে।

যেমন ৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা হেরড সেখানে দ্বিতীয় মন্দির তৈরি করেন এবং সেটার চারপাশে দেয়াল তুলে দেন। রোমানরা সেটিও নষ্ট করে দেয় ৭০ খ্রিস্টাব্দে।

৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা:) বুরাকে চড়ে বেহেশতে যান এই জেরুজালেম থেকেই। তবে তার ধর্মীয় ইতিহাসে জেরুজালেমকে পবিত্র নগরী ভিন্ন আর কোনো বিষয়ে উল্লেখ করেননি।

অটোমান সাম্রাজ্য

১৫১৬ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা শাসিত হয় জেরুজালেম ও মধ্যপ্রাচ্য।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জেরুজালেম শাসন করে গ্রেট ব্রিটেন। সেই সময়ে ফিলিস্তিনের অংশ ছিলো জেরুজালেম। ব্রিটিশরা এই শহর ও আশপাশের এলাকাকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত শাসন করে চলে।

ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ২০ বছরের মধ্যেই জেরুজালেমকে ভাগ করে নেয়া হয়। সেখানে ইসরাইল পশ্চিম অংশ শাসন করতো আর জর্ডান নিয়ন্ত্রণ করতো জেরাজালেমের পূর্বাংশ। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর,  আরব ইসরাইল যুদ্ধে পুরো জেরুজালেম দখল করে নেয় ইজরাইল।

টেম্পল মাউন্ট নিয়ে দ্বন্দ্ব

টেম্পল মাউন্ট

জেরুজালেমকে নিয়ে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু টেম্পল মাউন্ট। এটি ৩৫ একর জমিতে অবস্থিত। সেখানে কিছু ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে যেমন ওয়েস্টার্ন ওয়াল, দি ডোম অব দি রক এবং আল আকসা মসজিদ।

ইহুদী ধর্মে এই প্রাচীন স্থানটিকে খুবই পবিত্রতম স্থান হিসেবে ধরা হয়। এখানেই গড়ে উঠেছে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় মন্দির ও ইহুদী নবীদের শিক্ষাকেন্দ্রও এখানেই।

মক্কা ও মদিনার পরে আল আকসা মসজিদকে সবচেয়ে বেশি পবিত্রতম স্থান মনে করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। ইসলাম ধর্মমতে এখান থেকে বেহেশতে  ১৫ দিনের সফরে গিয়েছিলেন মহানবী হজরত মোহাম্মদ(সাঃ)।

খ্রিস্টানরাও তাদের বিশ্বাসের জায়গায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে জেরুজালেমকে।

এছাড়া ডম অফ দি রক, ওয়েস্টার্ন ওয়াল, চার্চ অব দি হলি সেপুলচার নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে বেশ।

জেরুজালেমে সংঘর্ষ

জেরুজালেম নিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব

ইসরাইল রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার পর থেকে জেরুজালেম নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনদের তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ফিলিস্তিনিরা মেনে নিতে পারেনি।

ইহুদী আইনমতে ইহুদীদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে টেম্পল মাউন্টে প্রার্থনা করার। তারপরও ইসরাইলি সেনারা টেম্পল মাউন্টে শত শত ইহুদীদের রুটিনমাফিক সেখানে প্রবেশ করতে দেয়। আর তাতেই ফিলিস্তিনিদের ধারণা ইসরাইল এই জায়গায় আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করে ফেলবে।

সম্প্রতি কিছু ইসরাইলি গ্রুপ টেম্পল মাউন্টে তৃতীয় ইহুদী মন্দির বানানোর পরিকল্পনা করছে। আর সেই সিদ্ধান্তই এই এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

আর একই সঙ্গে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দুই দেশই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী করতে আগ্রহী।

১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখন তাদের এই সিদ্ধান্তে কোনো স্বীকৃতি জানায়নি।

২০১৭ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনের হামাস গ্রুপ একটি ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে। সেখানে জেরুজালেমকে রাজধানী করে নতুন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নতুন করে গঠনের কথা বলা হয়। তারা ইসরাইলকে কোনো রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও অস্বীকৃতি জানায়। যদিও ইসরাইল সরকার সেটা বাতিল করে দেয়।

আধুনিক যুগের জেরুজালেম:

সাম্প্রতিক সময়ে জেরুজালেমের ভেতরে ও জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাকে ঘিরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যেকার সংঘর্ষও খুব সাধারণ ঘটনা।

জেরুজালেম শহরটি একই সঙ্গে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র ধর্মীয় নগরী। এ কারণে এর দখল এবং প্রবেশাধিকার নিয়ে বহু বছর ধরেই তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে। ইসরায়েল সবসময়ই জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে বলে এসেছে। কিন্তু ইসরাইল রাষ্ট্রের আনুষ্ঠাণিক রাজধানী তেলআবিব শহরই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী।

ফিলিস্তিনিদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। একেশ্বরবাদী তিনটি প্রধান ধর্মের পবিত্রস্থান বলে বিবেচিত বেশ কিছু  স্থাপনা রয়েছে জেরুজালেমে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের পত্তনের পর বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অনেক আন্তর্জাতিক দল ও দেশের সমর্থন এই বিষয়ে এই দুটি দেশের মধ্যে ভাগ ভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু সবাই সমর্থ হবে সেই ধরনের কোনো পরিকল্পনা আনা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে টেম্পল মাউন্টে দুজন ইসরাইলি পুলিশ অফিসারকে গুলি করে তিন আরব। এরপর নিরাপত্তার অজুহাতে এই এলাকায় দর্শনার্থী শূন্য করা হয় এবং ১৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুক্রবার মুসলিমদের প্রার্থনার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় আল আকসা মসজিদে।

ইতিহাসে জেরুজালেম শহরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫২ বার আক্রান্ত হয়েছে জেরুজালেম। অবরোধ, দখল ও পুনরুদ্ধার হয়েছে ৪৪ বার। ঘেরাও করা হয়েছে ২৩ বার এবং ধ্বংস করা হয়েছে ২ বার।

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো শহরটিতে একই সঙ্গে ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক শক্তি জড়িত রয়েছে প্রবলভাবে। জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে সামনে আর কি কি দেখতে হবে সেটা সময়েই বলে দেবে।

683 ভিউ

Posted ১১:৫২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com