রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টাকা ছাপিয়ে তারল্য সংকট দূর করার চেষ্টা

সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
37 ভিউ
টাকা ছাপিয়ে তারল্য সংকট দূর করার চেষ্টা

কক্সবাংলা ডটকম :: ব্যাংক খাতের সংকট কাটছেই না। খেলাপি ঋণ দিন দিন ফুলেফেঁপে উঠছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতের জন্য ক্রমেই বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মনে করছে খেলাপি ঋণই এখন দেশের ব্যাংক খাতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এর বাইরে ব্যাংকের ডিপোজিট বৃদ্ধি না পাওয়া, দীর্ঘ প্রায় বছরব্যাপী চলমান ডলার সংকট, ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও নামে-বেনামে ঋণ প্রদান এবং তারল্য সংকট রয়েছে প্রকট। বর্তমানে এই চতুর্মুখী সংকট ব্যাংক খাতের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি বাধাগ্রস্ত করছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করছেন, ব্যাংক খাতের অস্থিরতা শুধু ব্যাংকিং কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করতে তা না, পুরো অর্থনীতিতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ব্যাংক খাতের চলমান সংকটের বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মোটাদাগে কিছু বিষয় তুলে ধরছেন। যেমন জাতীয় আয়ের তুলনায় ব্যাংক ডিপোজিটের আকার ছোট হয়ে আসা, জালিয়াতির মাধ্যমে একের পর এক নামে-বেনামে ঋণ প্রদান করা, রি-সিডিউলের নামে খেলাপি ঋণ কম দেখানো এবং ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়া, ব্যাংক খাতে সুশানের অভাব, তারল্য সংকট দূর করার নামে টাকা ছাপিয়ে বাজেটে যোগান দেওয়া এবং চলমান ডলার সংকট দূর করতে না পারা।

ব্যাংক খাতের সার্বিক বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বহুমুখী সংকট ঘিরে ধরেছে দেশের ব্যাংক খাতকে। আর এই সংকট এক দিনে হয়নি, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা বাড়তে বাড়তে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংক খাতের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতিকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় আয় যে হারে বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে বা বাড়ছে সে হারে কিন্তু ব্যাংকের আমানতের হার বাড়ছে না। এটি এখন ব্যাংক খাতের সিরিয়াস সংকট। খেলাপি ঋণ নিয়ে দেশে এত আলোচনা-সমালোচনা কিন্তু তারপরও ঋণ জালিয়াতি থামানো যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাছে না বা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে না। বরং ঋণ রি-সিডিউলের নামে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছে এবং ঋণখেলাপিদের নানাভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর কুফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীকে।

কারণ ঋণখেলাপিদের কারণে সাধারণ আমানতকারীদের কম হারে আমানতের সুদ নিতে হচ্ছে। অর্থাৎ যারা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর শোধ করছে না, কেউ কেউ বিদেশে পাচার করছে। আর সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। এভাবেই এখন চলছে দেশের ব্যাংক খাত।’

অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক খাতের আমানত কমে যাওয়াকে বর্তমানে ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে উল্লেখ করছেন। সুতরাং, ব্যাংক খাতের আমানত পরিস্থিতির কি অবস্থা সেদিকেই আগে নজর দেওয়া যাক। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তথ্য তাতে দেখা যাচ্ছে-আসলেই ব্যাংক খাতের আমানত বেশ কমে গেছে।

সবশেষ পরিসংখ্যান তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫৪ শতাংশ, যেখানে গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৯.০৯ শতাংশ। আর ২০২১ সালের জুনে ছিল ১৪.৩৭ শতাংশ। আমানতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে চলতি আমানত। এপ্রিলে চলতি আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.০৭ শতাংশ, যেখানে গত বছরের এপ্রিলে ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ।

অর্থনীতির সবশেষ সূচক নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বিদায়ি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ মাসে আমানত বেড়েছিল ৭৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, সেখানে বিদায়ি অর্থবছরের ১০ মাসে আমানত ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৭ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। অথচ গত বছরের জুন শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৯০ শতাংশ।

২০২১ সালের জুনে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৪.৩৭ শতাংশ। আর এক মাস হিসাবে গত এপ্রিলে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮.৫৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মাসিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সাল থেকে আমানতের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে।

একদিকে আমানত কমছে অন্যদিকে খেলাপি ঋণ ফুলেফেঁপে বেড়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের সবশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ বিবরণী অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি।

গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি বেশি বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। আইএমএফ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।

ঋণের হিসাবে গত মার্চে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ ছিল অগ্রণী ব্যাংকে। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এরপর জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৬ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণ।

মার্চের পর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে খেলাপি ঋণের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে, সহসাই অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের খেলাপির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

খেলাপি ঋণ ও ঋণ আদায় করাকে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। তা ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় করাও অনেক চ্যালেঞ্জ। তাই বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন যেসব ব্যবসায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে তারা যেন সঠিক পণ্যটি আমদানি করে সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যাতে পণ্য আমদানির আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং করতে না পারে সেটি মনিটরিং করা হচ্ছে।’

এদিকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটও এখনও প্রকট আকারে রয়েছে। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি করে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সংকট দূর করার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ডমেস্টিক অ্যাসেট গ্রোথ ছিল ৩৩৮১ শতাংশ, অথচ ২০২২ সালের এপ্রিলে এই গ্রোথ ছিল ১০৬ শতাংশ। টাকা ছাপানোর ফলেই এই ডমেস্টিক অ্যাসেট বেড়েছে এবং এ কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘বাজারে মানি সাপ্লাই ঠিক রাখতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও নিয়মের মধ্যেই রেখেছে টাকা ছাপানো। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে যেমন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে, অন্যদিকে বাজারে ডলার বিক্রি করে টাকা তুলেও নিয়েছে। সুতরাং এখানে একটা ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।’

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়েছে তারল্য সংকট দূর করতে নয়, টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের বাজেটে বা সরকারকে।  তিনি বলেন, ‘আসলে তারল্য সংকট দূর করতে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকে বা বাজারে দেওয়া হচ্ছে না, দেওয়া হচ্ছে বাজেটে।

এ কারণে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট দূর হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ব্যাংক খাতটিই এখন রীতিমতো ধুঁকছে। নানা রকম সংকট ঘিরে ধরেছে এ খাতকে। দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে, সেটি এখনও চলমান। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সংকট দূর করতেই পারছে না। এই সংকট সহসাই দূরও হবে না বরং আরও বাড়বে। কারণ ১৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি মার্জিন দিতে হবে, দাতা সংস্থাগুলোর ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে। সবমিলিয়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে। এই ডলার চলে গেলে তো সংকট আরও বাড়বে। সেই হারে তো আর ডলার দেশে আসছে না। সুতরাং ব্যাংকিং খাতের চলমান সংকট সহসাই কাটবে না।’

 

37 ভিউ

Posted ৩:১২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com