কক্সবাংলা ডটকম(১৫ আগস্ট) :: মৌসুম শুরুই হয়েছে সবে। এমতাবস্থায় কোনো কোচের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা এক প্রকার আহম্মকিই বলা যায়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই ইউনাইটেডে মরিনহোর ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। এমনকি বাজিকর প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মরিনহো ইউনাইটেডের হয়ে মৌসুম শেষ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে বাজি খুলে বসেছে! চেলসি-আর্সেনাল দু’দলই নতুন কোচের অধীনে শুরু করলেও আশাবাদী উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে।
মরিনহোর সাথে ম্যানেজমেন্টের সমস্যা নতুন নয়। এর আগে মাদ্রিদ এবং চেলসি থেকে তিক্ত পরিস্থিতেই বিদায় নিতে হয়েছিল স্বঘোষিত স্পেশাল ওয়ানকে। ধারণা করা হচ্ছিল অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউনাইটেড অধ্যায়টা নতুন করেই লিখবেন তিনি। অন্তত যেভাবে একাধিকবার স্যার ফার্গুসন এবং ওয়েঙ্গারের পদাঙ্ক অনুসরণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাতে এমন ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক। সাজানো চিত্রনাট্য অনুযায়ীই যদি চলবেন তবে আর তিনি মরিনহো কেন?
গেল মৌসুমেই একাধিকবার খেলোয়াড়দের প্রকাশ্য সমালোচনা করে দলের অন্দরে জন্ম দিয়েছেন অশোন্তোষের। বিশেষ করে দলের সবচেয়ে বড় তারকা পগবার সাথে সম্পর্ক গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচে পগবাকে অধিনায়ক করে দল সাজালেও দুজনের মধ্যকার দুরত্ব যে সামান্যও কমেনি তা বোঝা গিয়েছে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পগবার কথাতেই। মরিনহোয় বিরক্ত হয়ে মার্শিয়াল-রাশফোর্ডদের মতো তরুণরা নতুন ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেন বলেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বেশ কবারই। নতুন খেলোয়াড়দের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনীহার অন্যতম কারণও বলা হচ্ছে মরিনহোকেই।
খেলোয়াড়দের সাথে এই যখন অবস্থা তখন প্রাক মৌসুমে মরিনহো বিবাদে জড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছেন ক্লাব অফিসিয়ালদের। ট্রান্সফার নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানান দিয়েছেন সরবে, পুরো প্রাক মৌসুম জুড়েই। মরিনহোর দেয়া খেলোয়াড়দের বয়স, দাম বা কার্যকারিতা; কোনোটাই আকর্ষণীয় ঠেকেনি বোর্ডের কাছে। যার ফলে হতাশ মরিনহো নিজেকে দাবি করেছেন হেড কোচ হিসাবে। যার দায়িত্ব শুধুই মূল দল সামলানো!
এই যখন অবস্থা তখন নতুন তথ্য মতে নিজেদের ইতিহাসের প্রথমবারের মত ডিরেক্টর অফ ফুটবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে ইউনাইটেড। বলাই বাহুল্য, এতে মরিনহোর খুশি হবার সামান্যতম কারণও নেই। এমনিতেই যখন কতৃত্বের প্রশ্নে তিনি প্রশ্নের সম্মুখীন তখন আরো একজন বাড়তি কর্তা তেতোই ঠেকবার কথা। এমতাবস্থায় মরিনহোর ইউনাইটেড অধ্যায় আর কতটা দীর্ঘ হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে চলতি পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন না ঘটলে মৌসুমের মাঝপথেই নতুন বস পেতে যাচ্ছে ইউনাইটেড! আরো একবার ঘরছাড়া হতে যাচ্ছেন স্বঘোষিত স্পেশাল ওয়ান।
মুখোমুখি সারি-এমেরি
আর্সেন উত্তর আর্সেনাল যুগের শুচনাটা হলো দুঃস্বপ্নের মত। সিটিজেনদের দুই তারকা স্টার্লিং এবং সিলভার জোড়া আঘাতে ধসে পড়েছে গোলান্দাজদের রক্ষণ। কান্ডারির ভূমিকায় ওয়েনগারের স্থলাভিষিক্ত এমেরি অসহায় পরাজয় বরণ করে নিলেন পেপ গার্দিওলার কাছে।
অপর দিকে ব্লুজদের ডাগ আউটে প্রথমবার দাড়িয়েই জয়ের নির্মল স্বাদ পেয়েছেন সারি। হাডার্সফিল্ডের বিপক্ষে চেলসির জয়টি এসেছে ৩-০ গোলের সহজ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে ‘সারি বল’ এর প্রদর্শনী দেখা না গেলেও উইলিয়ান-কান্তেরা আশার আলোই দেখাচ্ছেন সমর্থকদের। সারিও আশাবাদী উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে। চেলসিতে নাপোলির সারি বল না বরং নতুন কৌশলের প্রতিশ্রুতিই দিলেন তিনি। সারির স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্বক ফুটবলের নতুন রুপ দেখাটা হবে নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।
চেলসি-আর্সেনাল দু’দলই নতুন কোচের অধীনে শুরু করলেও দু’পক্ষের ভিন্ন রকম রাত কাটার কারণ আছে বৈকি। অবশ্যই হাডার্সফিল্ডের তুলনায় সিটি প্রতিপক্ষ হিসাবে শক্তিশালী। কিন্তু এটুকু বলেই পার পেয়ে যাবেন না এমেরি। ওয়েঙ্গারের আলোচিত-সমালোচিত ট্রান্সফার পলিসি বদলে তার সামনে সুযোগ ছিল দলটাকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার। অন্তত সাধারন গানার্স সমর্থকদের প্রত্যাশাটি তেমনই ছিল। কিন্তু সে পথে না হেঁটে এমেরি যাদের কিনেছেন তাদের দিয়ে প্রিমিয়ার লিগের মতন আসরে লড়াই করা যায় কি না সে প্রশ্নটি এখনি উঠতে শুরু করেছে।
অপর দিকে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন থেকেই সারি যেন জানতেন তিনি ঠিক কী করতে চাইছেন। নাপোলি থেকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছেন জর্জিনহোকে। রেকর্ড ট্রান্সফার ফি দিয়ে দলে ভিড়িয়েছেন কেপাকেও। প্রথম ম্যাচে কেপাকে সে অর্থে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে না হলেও জর্জিনহো বেশ আলো ছড়িয়েছেন। প্রথমার্ধের আড়ষ্টতা কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের চেলসি খেলেছে চমৎকার ফুটবল। সারি যেমনটি বলেছেন, সামনের চারটি সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এ সময়ে খেলার চাপ থাকবে কম এবং এরই মধ্যে চেলসিকে ধাতস্ত হতে হবে নতুন ধারায়।
একদিকে সব কিছুই যেমন সাজানো গোছানো মনে হচ্ছে অপর দিকে পুরোটাই যেন মেসড আপ। ওয়েনগারের বিদায়ের পর এমেরিই উপযুক্ত বিকল্প কি না সে প্রশ্নটি শুরুতেই উঠেছিল। এক ম্যাচই কাউকে মাপার মানদন্ড না হলেও, শুরুটা সে প্রশ্নটাকে দিচ্ছে শক্ত ভিত্তি। লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই মুখোমুখি হবে আর্সেনাল এবং চেলসি। এখন দেখার বিষয় সারির সাজানো বাগান আরো সুন্দর করে সাজে নাকি এমেরির গোলান্দাজরা সে বাগান গুড়িয়ে জয় নিয়ে ম্যাচ শেষ করতে পারে।