বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের কৃষি জিডিপির বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও নিচে

শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
137 ভিউ
দেশের কৃষি জিডিপির বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও নিচে

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ অক্টোবর) ::  দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বরাবরই সেরা পারফরম্যান্স আসে কৃষি খাত থেকে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের অনুপাতে আদায়ের হারের দিক থেকে কৃষির অবস্থান প্রতি বছরই শীর্ষে। এমনকি কভিডের প্রাদুর্ভাবজনিত অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের মধ্যেও কৃষি খাত থেকে ঋণের অর্থ আদায় হয়েছে বিতরণের চেয়ে বেশি। গ্রাহক হিসেবে কৃষকরা সেরা হলেও এখনো দেশের কৃষি জিডিপির বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও অনেক নিচে।

এ মুহূর্তে দেশের কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়ানোর অবশ্যম্ভাবিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ (এফএও) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, আগামী বছর দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবেলার ওপর জোর দিচ্ছেন নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা। যদিও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অর্থায়ন না বাড়ালে কৃষি উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব না।

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজার এখন অস্থিতিশীল। সারসহ কৃষি উপকরণের বাজারও ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও কৃষি উৎপাদনের খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষকের অর্থায়ন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি কোনোকালেই ভালো অবস্থায় ছিল না।

স্বাধীনতার পর অর্ধশতকের বেশি সময় পার হলেও এখনো খাতটির মোট উৎপাদনের বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা যায়নি। ব্যাংকগুলোও কৃষক বা ক্ষুদ্র গ্রাহকদের পরিবর্তে বড় গ্রাহকদের ঋণ বিতরণেই আগ্রহী। এ মুহূর্তে কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে বড় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভর্তুকির পাশাপাশি স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কৃষকের অর্থায়ন বাড়ানো না গেলে উৎপাদন বাড়ানো এক প্রকার অসম্ভবই হয়ে পড়বে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিতরণকৃত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বরাবরই কৃষির অবস্থান সবচেয়ে ভালো।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২১ হাজার ২৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে (২০২০-২১) কভিডকালীন দুর্বিপাকের মধ্যেও কৃষকদের কাছ থেকে বিতরণকৃতের চেয়েও বেশি অর্থ ফেরত পেয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই সময় কৃষি খাতে ২৫ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ হলেও আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৪৬৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

ঋণ আদায় পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো হলেও কৃষি খাতে ঋণের সম্প্রসারণ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশে কৃষি খাতে মোট জিডিপির পরিমাণ ছিল (চলতি মূল্যে) ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে এ সময় কৃষি খাতে জিডিপির বিপরীতে ঋণ বিতরণের হার ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের দুই অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এ মুহূর্তে কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতের সাবেক নীতিনির্ধারকরাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শস্য উৎপাদনের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অবদান অনেক বেশি।

কৃষি বাংলাদেশের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে। অন্য শিল্পও চলছে, তবে কৃষির সহায়তা থাকলে তারাও কিছু করতে পারত না। যতটুকু প্রণোদনা বা কৃষি ঋণ দেয়া উচিত সে তুলনায় আসলে দেয়া হয় না। প্রণোদনার মধ্যে যেমন সার, সেচ নিয়েও নানা রকম সমালোচনা আছে। কৃষি ঋণ অপ্রতুল। বাংলাদেশ ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা দেয়, সেটা অন্য ব্যাংকগুলো পালন করে না। কৃষির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিন্তু খুব সিরিয়াসলি ঋণগুলো দেয় না। প্রান্তিক কৃষকদের হয়রানি হতে হয়। কাগজপত্রকেন্দ্রিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। কৃষির ক্ষেত্রে আরো একটি সমস্যা হচ্ছে যথাসময়ে যদি ঋণ না পাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু চাষ করতে পারেন না। আবার ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কৃষকরা ফসল বিক্রি করা ছাড়া দিতে পারবেন না।

এক্ষেত্রে আবার তাদের তাড়া দেয়া হয় ঋণ ফেরত দিতে। এমনিতেও কৃষকরা কম ঋণ নেন। টাকার অংকও বেশি না। আবার তাদের ঋণ ফেরত দেয়ার হারও অনেক ভালো। এটা ইতিবাচক লক্ষণ। ভবিষ্যতে সার ও ডিজেলের যে বৈশ্বিক সংকট রয়েছে তা মোকাবেলায় ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। না হলে সংকট তৈরি হবে। জিডিপিতে অবদান যাই থাকুক, অন্য খাতে উৎপাদন না হলে কিন্তু মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না। কিন্তু কৃষিতে উৎপাদন কমে গেলে সমস্যা হবে।

দেশে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে হারে কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়ছে না। এর পেছনে বড় একটি কারণ হিসেবে খাতটির অপ্রতুল ঋণপ্রবাহের সমস্যাকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পাওয়া গিয়েছে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইইআর) এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতে কৃষি ঋণের প্রবাহ প্রতি ১ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে কৃষি খাতের মোট জিডিপি বেড়েছে প্রায় দশমিক ৩ শতাংশ।

ওই গবেষণায় আরো উঠে আসে, ক্ষুদ্র কৃষকদের সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ বরাবরই তাদের আয় ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষি খাতের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি। তাদের জন্য উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও বাজারকে লাভজনক করতে উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্তরেই সহায়তার প্রয়োজন পড়ে। এমনই এক কার্যকর সহযোগিতা হলো কৃষকদের সহজ অর্থায়ন। ভ্যালু চেইনের প্রতিটি পর্যায়ে স্বল্প সুদে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের সুযোগ থাকলে ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির পথে অনেক বাধাই দ্রুত মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।

একই সঙ্গে প্রান্তিক চাষীকে বাণিজ্যিক কৃষকে রূপান্তরের পথও অনেকটাই মসৃণ হয়ে ওঠে। এতে তাদের পক্ষে কৃষির অন্য যেসব উপখাতে ভূমির চেয়ে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বেশি (যেমন ডেইরি, পোলট্রি, মৎস্য, মৌচাষ ইত্যাদি), সেসব উপখাতেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।

বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন ভারতীয় নীতিনির্ধারকরাও। গত কয়েক দশকে দেশটির কৃষি খাতে জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত ক্রমেই বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। আশির দশকের শেষ দিকেও দেশটিতে এ অনুপাতের গড় ছিল ১৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। এ সময় দেশটিতে কৃষি খাতের উৎপাদন বেড়েছে ২৬ গুণ। এ বড় উল্লম্ফনে কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের অর্থনীতির অধ্যাপক ও উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের কৃষি ঋণের হার অনেক কম। ভর্তুকির হারও কম। আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা। কারণ বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও আমদানিনির্ভরতা রয়েই গেছে। আবার খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও আমাদের দেশের পুষ্টিহীনতা রয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিমাণ কমলেও সে হারে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমেনি। এর সঙ্গে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমেছে এবং উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে স্থায়িত্বশীল কৃষির রূপান্তর করতে হবে। কৃষি গবেষণায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

এ বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করবে উৎপাদনশীলতা, স্থায়িত্বশীলতা ও দাম কমিয়ে নিয়ে আসা। কৃষি ঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় বেশি হওয়া মানে এর উদ্বৃত্ত অংশ অন্য খাতে দেয়া হচ্ছে। কৃষিতে তো খেলাপি হচ্ছে না। এজন্য ব্যাংকের অর্থায়ন সুবিধাগুলোও বাড়াতে হবে। এছাড়া কৃষি উপকরণের ক্ষেত্রে একটা সার্বিক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে এটা খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মধ্যস্বত্বভোগী খেয়ে না ফেলে। আবার উপকরণের বাজারে যে নিয়ন্ত্রক রয়েছে, তা নিয়েও ভাবতে হবে। তা না হলে পচা বীজ যাচ্ছে, নিম্নমানের সার যাচ্ছে। এদিকে দামও বাড়ছে। ফলে কৃষির উৎপাদন উপকরণ নিয়ন্ত্রণের কাজটিকেও একটু সিরিয়াসলি করতে হবে।

এখন পর্যন্ত কৃষকদেরই ধরা হয় ব্যাংক খাতের সবচেয়ে ভালো গ্রাহক হিসেবে। ২০২১ ও ২০২২ সালজুড়ে করোনার কারণে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে বাধ্যবাধকতায় ছাড় দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতি ছাড় বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তারা। মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বড় অংশও এ সুযোগ নিয়েছেন। তবে ছাড় পেয়েও কিস্তি পরিশোধ থেকে বিরত থাকেননি কৃষকরা। মহামারীকালে আনুপাতিক হারে তারাই সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের তুলনায় আদায়ের অনুপাত ছিল ১০৬ শতাংশেরও বেশি।

কৃষিতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এসব উদ্যোগে সফলতা মিললেও কৃষিতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোয় তা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এর একটি বড় উদাহরণ হলো আমদানিনির্ভর শস্য উৎপাদনে রেয়াতি সুদে ঋণ কর্মসূচি। ডাল, মসলা, তেলবীজ, ভুট্টাসহ আমদানিনির্ভর বিভিন্ন শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সুবিধা দিতে এ কর্মসূচি চালু হয় প্রায় দুই দশক আগে। বিশেষ এ ঋণ কর্মসূচি সাফল্যও পেয়েছে বিপুল। যদিও সাফল্যের মাত্রা অনুযায়ী বিশেষ এ প্রকল্পের পরিসর ও অবয়ব বড় হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদের এ ঋণ কর্মসূচির আকার দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৭ কোটি টাকায়, যা দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত কৃষি ঋণের দশমিক ৪৭ শতাংশেরও কম। অথচ রেয়াতি সুদে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের হার ৯৩ শতাংশ। কেবল ৭ শতাংশ কৃষক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে গবেষণাপত্রে বলা হয়, রেয়াতি সুদে নেয়া ঋণের অর্থ কৃষকরা শস্য উৎপাদনে ব্যয় করছেন। পরবর্তী সময়ে উৎপাদিত শস্য বিক্রি করে যে মুনাফা হচ্ছে, সেটি থেকেই ঋণের অর্থ পরিশোধ করছেন কৃষকরা। যদিও প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কৃষক মনে করছেন, বিশেষ এ তহবিল থেকে দেয়া ঋণ লক্ষ্যমাফিক শস্য উৎপাদনে যথেষ্ট নয়।

ঋণদানের মাধ্যমে কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামানও।  তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ব্যাংককেই আলাদাভাবে বলা আছে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের জন্য। করোনার দুই বছরে কৃষকরা যে কাজে ঋণ নিয়েছিলেন তা অনেক ক্ষেত্রে সে কাজে ব্যয় করতে পারেননি। আমার মনে হয়, কৃষকদেরও ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা আগের চেয়ে কমেছে। এটা মেনে নিয়েই কৃষকদের যেকোনো পদ্ধতিতে ঋণ দিতে হবে। অর্থাৎ তাদের সক্ষমতার অভাবকে কাটিয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে।

প্রতি বছরই দেশের কৃষি ও কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দিষ্ট অংকের ব্যাংকঋণ নিশ্চিতের পাশাপাশি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন বিশেষ প্রণোদনা ও রেয়াতি সুদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও ঘোষণা করা হচ্ছে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষিতে বড় অংকের ভর্তুকিও দিচ্ছে সরকার। যদিও ঋণের প্রয়োজনমাফিক প্রবাহ না থাকায় এসব নীতির কার্যকর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রাখলেও কৃষক বরাবরই বঞ্চিত ও উপেক্ষিত থেকেছেন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব নীতি নেয়া হয়, তার সুফল প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌঁছায় না। এতে আর্থিকভাবে তারা সচ্ছলও হতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের কৃষকদের ১০ টাকার বিশেষ ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ২০ হাজার ৬৯৯।

বিপুল এ ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় আছে মাত্র ৫৬৯ কোটি টাকার আমানত। সে হিসাবে দেশের কৃষকদের ব্যাংক হিসাবে গড় সঞ্চয়ের পরিমাণ ৫৮০ টাকারও কম। লেনদেন না থাকায় এসব ব্যাংক হিসাবের বেশির ভাগই সক্রিয় নেই। তবে ব্যাংক হিসাবের একটি অংশ সরকারি ভর্তুকি ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স গ্রহণের মাধ্যমেও সক্রিয় আছে কৃষকদের অল্প কিছু ব্যাংক হিসাব।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম কিছু কিছু ফসলে স্বল্প সুদে ঋণ আছে উল্লেখ করে  বলেন, কৃষকরা ঋণ নিয়ে সাধারণত খেলাপি হন না। সুতরাং তাদের অবশ্যই ঋণ দিতে হবে। কারণ ঋণ না পেয়ে তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারস্থ হতে পারেন। যদি তারা ঋণ পান, তাহলে তাদের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়ে যাবে। আমরা সবগুলো জেলার জেলা প্রশাসকদের বলছি তারা যেন একটি কৃষি ঋণ মেলা করেন। যাতে কৃষকদের অধিক সুদে মহাজন, ফড়িয়া বা অন্য কারো কাছ থেকে ঋণ নিতে না হয়। এটি বাস্তবায়নে আমরা জোর দিচ্ছি।

137 ভিউ

Posted ২:২১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com