শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের বেকারদের বড় অংশই উচ্চশিক্ষিত তরুণ

মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
486 ভিউ
দেশের বেকারদের বড় অংশই উচ্চশিক্ষিত তরুণ

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুন) :: আলমগীর হোসেন ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। এর পর থেকে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও কোথাও চাকরি হয়নি। শিক্ষাজীবন শেষ করে আড়াই বছর ধরে বেকার বসে আছেন তিনি। বর্তমানে দেশের বেকারদের বড় অংশই আলমগীর হোসের মতো উচ্চশিক্ষিত তরুণ। বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় না হওয়া, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের অনেকেই চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে কাজ করতে আগ্রহী এমন ১০০ লোকের মধ্যে ৪ দশমিক ২ জন কাজ পাচ্ছেন না, অর্থাৎ বেকার। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বেলায় বেকারত্বের হার এর তিন গুণ। আবার এদের বড় অংশই দীর্ঘ সময় ধরে বেকার। ফলে তাদের অর্জিত দক্ষতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অনেকেই হতাশা থেকে বিপথগামী হচ্ছেন।

বিবিএসের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, কাজ করতে আগ্রহী বা শ্রমবাজারে আছে এমন লোকসংখ্যা ছয় কোটি ২১ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ লোক কাজ করছেন বা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। আর ২৬ লাখ লোক বেকার। এ হিসাব অনুযায়ী জাতীয় বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, জরিপের সাত দিন আগে থেকে যারা কোনো ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না, তাদের বেকার হিসেবে ধরা হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন সময় পর্যন্ত সারাদেশে এ জরিপ চালানো হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রে এ হার ১০ দশমিক ১ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা যুবকদের বেকারত্ব। মাধ্যমিক পাস করাদের বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক পাস ৬ দশমিক ২ শতাংশ যুবক বেকার। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে এমন শ্রমশক্তির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেকার। আর মোটেই লেখাপড়া করেনি এমন শ্রমশক্তির ২ দশমিক ২ শতাংশ বেকার।

উচ্চশিক্ষিতরা যে বেশি বেকার, তা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন থেকেই বোঝা যায়। সর্বশেষ ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় সরকার প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে এক হাজার ২২৬ জনকে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ প্রার্থী। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থী ১৯৮ দশমিক ৫৯ জন। একইভাবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায়ও একটি পদের বিপরীতে দুই শতাধিক প্রার্থী অংশ নেওয়ার ঘটনা দেখা যায়। এ ছাড়া বেকারত্বের সুযোগে চাকরি নিয়ে নানা প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে দেশে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ তিন লাখ ১৫ হাজার বেকার রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার। আট লাখ ৫৩ হাজার জন মাধ্যমিক পাস করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বেকার বসে আছে তিন লাখ ৯৯ হাজার। আর মোটেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমন বেকারের সংখ্যা চার লাখ ৩৯ হাজার।

চাকরিদাতা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিক্ষিত লোকদের চাকরির সুযোগ যে নেই, তা নয়। তবে বাজারে যে ধরনের দক্ষ লোকের চাহিদা রয়েছে, শিক্ষিতদের মধ্যে অনেকেই সে চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। ফলে বিদেশ থেকে লোক এনে চাহিদা মেটানো হলেও দেশে শিক্ষিতদের অনেকে বেকার থাকছেন।

বেসরকারি খাতের নিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও এসিআইর চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, বর্তমানে যেসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে, সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারীরা আসছে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাসের মতো অনেক বিষয় থেকে অনেকে পাস করে আসছেন। বাজারে তাদের চাহিদা নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো লোক পাচ্ছি না। ভালো কেমিস্ট বা আইটি জানা লোক বাজারে অনেক কম। আর যারা আছে, তাদের চাকরি দিলে লেখাপড়ার মতো গোড়া থেকে শিখিয়ে নিতে হবে।’ এ সমস্যা সমাধানে তিনি বাজারে চাহিদা আছে এমন সব বিষয়ে লেখাপড়ায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে দেশে যেভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবির থাকায় কর্মসংস্থানের ওপর তার প্রভাব পড়েছে। ফলে শিক্ষিত যুবকদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও প্রশস্ত হচ্ছে না। তবে শ্রমবাজারে শিক্ষিত যুবকদের চাহিদা নেই, তা-ও বলা যাবে না।

এর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিবছর ভারত, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণ জনশক্তি আমদানি হচ্ছে। বছরে তিন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার তাদের পেছনে ব্যয় হচ্ছে। সুতরাং দেশের যারা উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন, তাদের একটি বড় অংশ যে যোগ্যতা নিয়ে শ্রমবাজারে আসছেন, তা বাজারের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাটাই মূলত দায়ী।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সামাজিক কারণে উচ্চশিক্ষিতরা যে কোনো চাকরি না করে নির্দিষ্ট কিছু চাকরিতে আসার প্রবণতা বেশি। এটিও তাদের বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ। তার মতে, শিক্ষিত লোকদের মধ্যে প্রত্যাশা বেশি থাকে। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে তাদের যে দক্ষতা, তা ব্যবহার করতে পারছে না। এর ফলে একদিকে দেশের মানবসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে হতাশার কারণে তাদের বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

প্রথমত, মৌলিক শিক্ষার গুণগত মানের উন্নতি করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষরতা ও সংখ্যাতাত্তি্বক বিষয়গুলো যাতে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।

সরকারের পক্ষে নিয়োগকারী সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, যেভাবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেরিয়ে আসছে, সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। আবার সরকারি খাতে যেসব কর্মসংস্থান আছে, সেখানেও সময়মতো নিয়োগ হচ্ছে না। অনেক শূন্য পদ থাকলেও নিয়োগবিধি না থাকায় নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। এ রকম বিভিন্ন কারণে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে।

জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বেকারদের ৫৬ শতাংশ ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় পর্যন্ত কাজ পাননি। কমপক্ষে ছয় মাস বেকার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ লোক। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষিতদের ৪৭ শতাংশ ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি বেকার থাকে। কমপক্ষে ছয় মাস বেকার থাকে ৪৫ শতাংশ লোক। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষিতদের অর্ধেকই ছয় মাস বেকার থাকে। ৩৫ শতাংশ লোক ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বেকার থাকে।

২০১০ সালের জরিপে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পরে ২০১৩ সালের জরিপে তা কমে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জরিপে এ হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। শ্রমশক্তির এক কোটি ৫৪ লাখ বা ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করেছে এক কোটি ৭৯ লাখ বা ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ। এদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের কর্মী রয়েছে এক কোটি ৮৯ লাখ, যা মোট শ্রমশক্তির ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী বেকার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সী ১০ লাখ ১৩ হাজার পুরুষ ও সাত লাখ ৯৭ হাজার নারী দেশের বেকার রয়েছে। মোট বেকারের ৭০ শতাংশ এই বয়সী। যুবকদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। ১৫ থেকে ১৭ এবং ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

486 ভিউ

Posted ১:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com