কক্সবাংলা ডটকম(৬ এপ্রিল) :: লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এবং সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারে যে করোনার সংক্রমণ সেটি গতবারের থেকে আলাদা। গতবারে করোনার যে স্ট্রেইন ছিল বা সংক্রমণের যে ধরন ছিল সেটি ছিল তুলনামূলকভাবে কম আক্রমণাত্মক এবং কম ক্ষতিকারক। ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই গতবছর দেখা গেছে মৃদু উপসর্গ নিয়েই একজন রোগী আক্রান্ত আক্রান্ত হন এবং ১৪ দিন পর তিনি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।
খুব অল্প ক্ষেত্রেই যাদের শারীরিক অন্য কোন সমস্যা আছে যেমন- হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস সমস্যা তারাই গুরুতর আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে যে তরুণ, অন্যান্য কোন রোগে আক্রান্ত নয় এমন ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
জানুয়ারি থেকে যে করোনার নতুন উপসর্গ যেটিকে অনেকে বলছেন যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন বা দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইন, সেই করোনায় কিছু নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এই উপসর্গগুলো ভয়ঙ্কর। গত মার্চ থেকে যে সমস্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের কিছু কিছু উপসর্গ চিকিৎসকরা পেয়েছেন যে উপসর্গগুলো ভয়ঙ্কর এবং দ্রুত তাদেরকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই উপসর্গগুলো মধ্যে রয়েছে-
১. হঠাৎ করে বুকে তীব্র ব্যথা: করোনায় আক্রান্ত যারা হচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে যে তাদের মৃদু উপসর্গ থাকছে। হালকা জ্বর, হালকা শুকনো কাশি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন এবং বুকে ব্যথা অনুভব করে না তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাদের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।
২. হঠাৎ করে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া: সামান্য জ্বর এবং সর্দি নিয়ে কেউ কেউ করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন কিন্তু তিন চার দিন পর দেখা যাচ্ছে যে হঠাৎ করে তার নাক দিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এবং দ্রুত তিনি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছেন। রক্তক্ষরণ এবার করোনা রোগীদের জন্য একটি বিপদজনক দিক হিসেবে সামনে এসেছে।
৩. তীব্র মাথাব্যথা: দেখা গেছে, প্রথমদিকে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু উপসর্গ কিন্তু হঠাৎ করে তার তীব্র মাথাব্যথা অনুভব হচ্ছে, মাথা তিনি তুলতে পারছেন না এবং মাথাব্যথা এমন খারাপ অবস্থায় চলে যাচ্ছে যে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত বাঁচানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
৪. যে কোন অঙ্গ বিকল বা ক্ষতি হয়ে যাওয়া: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যেকোনো একটি অঙ্গ যেমন- কিডনি, লিভার বিকল হয়ে যাচ্ছে এবং তিনি দ্রুত খারাপের দিকে চলে যাচ্ছেন।
৫. দেরিতে অবস্থার অবনতি: প্রথম দফা করোনায় দেখা গেছে প্রথম ৭ দিনই যত উপসর্গ এবং যেটুকু ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় ৭ দিন পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে এবং রোগী মোটামুটি সুস্থতার দিকে যাচ্ছে। প্রথম দফার করোনার সংক্রমণের সময় বলা হয়েছিল যে প্রথম ৭ দিন সামাল দিতে পারলেই তার ভয় কেটে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফা করোনায় দেখা যাচ্ছে যে প্রথম ৭ দিনই থাকছে মোটামুটি কম উপসর্গ এবং রোগী তেমন কোন বড় ধরনের অস্বস্তি অনুভব করছেন না। কিন্তু ৭ দিন পর তিনি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছেন এবং ১৪ থেকে ২১ দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অনেকের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
নতুন করোনার এই উপসর্গগুলো দিকে যেন সকলের লক্ষ্য রাখে এবং করোনার যে কোন উপসর্গ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেন তিনি তার কোভিড টেস্ট করে রিপোর্টটি নেন এবং পজিটিভ হলে যেন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন এমনটিই পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা।
করোনার ভ্যাকসিনের ইমিউনিটি কতদিন থাকবে বিষয়টি এখনো এই নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডির ইমিউনিটি থাকবে ছয় মাস থেকে এক বছর। আবার অনেকে বলছে, কয়েক বছর থেকে যাবে ইমিউনিটি। কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে তার উপরেও নির্ভর করে অনেক কিছু।
করোনার টিকা দেওয়া কতটা জরুরি?
অল্প বয়স্ক এবং বয়স্ক দুইয়ের জন্য করোনা টিকা অনেক সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর অর্থ এই নয় যে মধ্যবয়স্কদের করোনা টিকা নেওয়া জরুরি না। করোনা নিয়ে আমাদের মনে যে ভয় তা টিকার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।
করোনা টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে?
কিছুদিন আগে টিকা তৈরি হওয়ায় এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ মেলেনি করোনা টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম কী না। তবে অনেক গবেষকরা বলেছেন করোনা টিকা রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
গবেষণা:
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের একটি নতুন প্রতিবেদনে চার হাজার ভ্যাকসিন স্বাস্থ্যসেবা এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীদের তথ্য অনুসন্ধান করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মর্ডানার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ ৮০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ ৯০ শতাংশ কার্যকর। যাদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তাদের অন্যদের থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম।
কতদিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে?
ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনগুলোর তিন ধাপের পরীক্ষায় জড়িত গবেষকরা বলেছেন যে টিকা দেওয়া মানুষের কমপক্ষে ৬ মাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে। সিডিসির তালিকাভুক্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের উপর এটি শতভাগ কার্যকর এবং এফডিএর তালিকাভুক্তদের ক্ষেত্রে ৯৫.৩ ভাগ। তাছাড়াও ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনটি দক্ষিণ আফ্রিকায়ও কার্যকর বলে জানা গিয়েছে।
সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করতে পারি না। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি মাস্ক পরা এবং দূরত্ব মেনে চলাও অনেক জরুরি।
সূত্র: দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া
Posted ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta