শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

নাইন ইলেভেনের ১৭ বছর : যে হামলা বদলে দেয় পৃথিবী

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
310 ভিউ
নাইন ইলেভেনের ১৭ বছর : যে হামলা বদলে দেয় পৃথিবী

কক্সবাংলা ডটকম(১১ সেপ্টেম্বর) :: ইতিহাসের বিভীষিকাময় নাইন ইলেভেন আজ। ১৭ বছর আগে ২০০১ সালের এ দিনে নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আত্মঘাতী বিমান হামলা চালায় জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদা।

২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম শহরগুলোর একটি নিউ ইয়র্কে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুইটি ভবনে বিমান নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় আল কায়েদার জঙ্গিরা। ধ্বংস হয় পাশের আরেকটি ছোট ভবনও। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষ। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়েও প্রাণ হারান অনেকে। হামলার শিকার হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের হেডকোয়ার্টার পেন্টাগন। প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারান ৯/১১ এর হামলায়।

নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমে আসে সাঁজোয়া যান। হামলার আশঙ্কায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সারাদিন বিভিন্ন অজানা স্থানে রাখা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এই হামলাকে ‘আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ হামলা’ আখ্যা দেয়।

৯/১১ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে যেমন মার্কিন আইন কঠোরতর হয়, তেমনি ঢেলে সাজানো হয় মার্কিন আমলাতন্ত্র। গঠিত হয় নতুন বাহিনী, নতুন মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ একতাবদ্ধ হয় পশ্চিমা শক্তিগুলো। আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবান জঙ্গিদের। আফগান যুদ্ধ শুরুর পর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে হামলা হয় ইরাকেও। এরপর দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এবং সেই সূত্রে আরও যুদ্ধ।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল কায়দার ১৯ জঙ্গি চারটি বিমান ছিনতাই করেছিল। হিস্টোরি চ্যানেল তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সৌদি আরবে পলাতক হিসেবে নথিভুক্ত ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে পরিচালিত সংগঠন আল কায়েদা এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতির কারণ দেখিয়ে তারা এ হামলা চালায়।

সংশ্লিষ্ট হামলাকারীদের কয়েকজন বছরখানেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠানেই বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। বাকিরা হামলার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিরা লুকিয়ে ছুরি নিয়ে উঠেছিল বিমানে।

সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ মডেলের একটি বিমান আঘাত হানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১১০ তলাবিশিষ্ট নর্থ বিল্ডিংয়ের ৮০তম তলায়। বিমানটিতে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল থাকায় খুব দ্রুতই ভবনে আগুন ধরে যায়। নর্থ বিল্ডিংয়ে আঘাতের মাত্র ১৮ মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী জঙ্গিদের ছিনতাই করা আরেকটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ বিল্ডিংয়ের ৬০তম তলায় আঘাত হানে।

এটিও একটি দূরপাল্লার বোয়িং ৭৬৭ বিমান। এই বিমানটি ছিল ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের। সকাল ১০টার দিকে সাউথ বিল্ডিং এবং সাড়ে ১০টার দিকে নর্থ বিল্ডিং পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পুড়তে থাকা জেট ফুয়েলের প্রচণ্ড তাপে গলে গিয়েছিল ভবন দুটির ইস্পাতের কাঠামো। ফলে একটির ওপর একটি তলা ধসে পড়ে পুরো ভবনকেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।

টুইন টাওয়ার ধসে পড়ার আগ পর্যন্ত মাত্র ছয় জন ব্যক্তি নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন। প্রায় ১০ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন ওই ঘটনায়, যাদের অনেকের আঘাতই মারাত্মক ধরণের। টুইন টাওয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট দুই হাজার ৭৬৩ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ধার তৎপরতায় গিয়ে প্রাণ হারানো ৩৪৩ ফায়ার ব্রিগেড ও চিকিৎসা কর্মী, নিউ ইয়র্ক পুলিশের ২৩ জন এবং পোর্ট অথরিটি পুলিশের ২৩ জন সদস্য।

তদন্তে দেখা যায়, হামলাকারী ইস্ট কোস্ট অঞ্চলের বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়াগামী বিমানে উঠেছিল। ইস্ট কোস্ট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায়, বিমানের জ্বালানিও লাগে অনেক বেশি। আল কায়েদার জঙ্গিরা জানতো, বিশাল পরিমাণ জেট ফুয়েল নিয়ে উড্ডয়ন করা বিমান ছিনতাই করতে পারলে তা দিয়ে অনেক বড় বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে। পরপর দুইটি সুউচ্চ ভবনে বিমান আছড়ে পড়ার ঘটনায় এটা সংশ্লিষ্টদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, যুক্তরাষ্ট্র হামলার শিকার।

 কিন্তু টুইন টাওয়ারের হামলাই শেষ নয়। জঙ্গিদের ছিনতাই করা আরও দুইটি বিমান তখনও আকাশে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭, বোয়িং ৭৫৭, বিধ্বস্ত হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে। এক্ষেত্রেও বিশাল পরিমাণ জেট ফুয়েলের কারণে বড় বিস্ফোরণ হয়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। পেন্টাগনের ওই পাশের ভবন ধসে পড়ে। এতে প্রাণ হারান ১২৫ জন ।  সেই সঙ্গে মারা যায় বিমানের সব যাত্রী ও ক্রুসহ আত্মঘাতী হামলাকারীরা।

সেদিনের সেই হামলাগুলো মার্কিন জাতীয় জীবনে যে শুধু বিপর্যয়ই ডেকে এনেছিল তা নয়। বরং প্রতিরোধেরও এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে চতুর্থ বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হারায় ছিনতাইকারী আল কায়েদার জঙ্গিরা। এটি ছিল ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩। বিমানটির উড্ডয়নে দেরি হয়েছিল। আর নিউ জার্সির লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের পার চল্লিশ মিনিট পরে সেটি ছিনতাইয়ের শিকার হয়। বিমানের যাত্রীদের অনেকেই ততক্ষণে জেনে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে হামলার ঘটনার বিষয়ে। ফলে তারা যখন জানতে পারলেন তাদের বিমানও ছিনতাই হয়েছে, তখন তারা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন ।

হিস্টোরি চ্যানেল তাদের কয়েকজনের ফোন কলের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, ফ্লাইট ৯৩ এর যাত্রীরা খুব সম্ভবত ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে ককপিটে থাকা ছিনাতিকারীদের বাধা দিয়েছিলেন। সকাল ১০টা ১০মিনিটে বিমানটি পেনসিলভানিয়ার একটি গ্রামীণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, এই বিমানটি নিয়ে জঙ্গিরা হয়তো হোয়াইট হাউজ, মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিড বা পারমাণবিক কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ওই বিমানে থাকা ৪৪ জনই প্রাণ হারান।

সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ হওয়া আল কায়েদার হামলার পর মার্কিন আইনে যেমন পরিবর্তন আসে তেমনি পাল্টে যায় আমলাতন্ত্রও, গঠিত হয় নতুন বাহিনী। হামলার আগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকতো বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনী।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত দ্য ইমপ্যাক্ট অফ সেপ্টেম্বর ১১ ২০১১ অন এভিয়েশন শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই হামলার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অথরিটি বাহিনী গঠন করে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে।

অন্যদিকে, হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে, ওই হামলার সূত্রেই ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট পাস করেছিল মার্কিন সংসদ। জঙ্গি দমনের প্রয়োজনে নজরদারি করার অনেক বেশি ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ওই আইনটির মাধ্যমে।

৯/১১ হামলার জন্য দায়ী করা হয় আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে। তাকে এবং আল কায়েদার বাকিদের ধরতে মার্কিন নেতৃত্বে শুরু হয় অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম। ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আফগানিস্তান যুদ্ধে যোগ দেয় ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মধ্যেই আফগানিস্তানের কার্যকর শাসনক্ষমতা থেকে তালেবানদের উৎখাত করা হয়। কিন্তু তাতে অবশ্য নির্মূল হয়নি জঙ্গিরা। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে অবস্থান নিয়ে লড়াই চালিয়ে যায় তারা।

২০১১ সাল পর্যন্ত ওসামা বিন লাদেনের হদিস পাওয়া যায়নি। ওই বছরের ২ মে মার্কিন সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপন করে থাকা লাদেনের খোঁজ পায় এবং এক ঝটিকা অভিযানে তাকে হত্যা করে। ২০১১ সালের জুন মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আফগানিস্তানে মোতায়েন করা সেনাদের বড় অংশকে দেশে ফেরানোর ঘোষণা করেন। তবে এখনও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী দেশটির সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য উপস্থিত রয়েছে। আর তালেবান জঙ্গিরাও নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

উয়েপেন অব মাস ডেস্ট্রাকশন থাকার অজুহাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০০৩ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ইরাক যুদ্ধকে ৯/১১ হামলার প্রেক্ষিতে ঘোষিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নীতির ধারাবাহিকতা আখ্যা দিয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে উঠে আসে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইরাকে তারা স্থাপন করে খিলাফত। ফলে আবারও মার্কিন বাহিনীকে নামতে হয় যুদ্ধে।

310 ভিউ

Posted ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com