কক্সবাংলা ডটকম :: ২০০৮ থেকে ২০২৪। ১৬ বছরে টানা চার মেয়াদে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। দেশের ফুটবলে তিনিই ১৬ বছরে একমাত্র নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। এস এ সুলতান ছিলেন বাফুফের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি। ছয় বছর দায়িত্বে থাকলেও মূলত তিনি এক মেয়াদেই ছিলেন।
১৬ বছরের ইতিহাস গড়ার পরও সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি সামনেও সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিসিবির সভাপতির পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করলেও সালাউদ্দিন তাঁর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অটল ছিলেন।
প্রায় প্রতিদিন পদত্যাগের দাবিতে বাফুফে ভবনে মিছিল ও মানববন্ধনের কর্মসূচি দিলেও সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। ফুটবলে আমার কিছু কমিটমেন্ট আছে তা পূরণ করতে ফের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আর নির্বাচন না করলে তা সবাইকে জানিয়ে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেব।
আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, তরুণ বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে খেলেছি, জাতীয় দলের অধিনায়ক ও কোচের দায়িত্ব পালন করেছি।
রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার থেকে সবকিছু পেয়েছি। যে ফুটবলের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছি। সেখানে কারোর হুমকি আমাকে দমাতে পারবে না। পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচন না করলে তা দেশবাসীকে জানিয়ে করব, কারোর চাপে নয়।’ শেষ পর্যন্ত ফুটবলে সালাউদ্দিন অধ্যায় শেষ হতে চলেছে
। ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই নির্বাচনে সালাউদ্দিন অংশ নিচ্ছেন না।
গতকাল নিজেই এ ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গতকালই সালাউদ্দিন প্রথমবার বাফুফে ভবনে এলেন। এসেই সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন নির্বাচন না করার। বাফুফে নির্বাচন পেছানোর জন্য আবেদন করলেও ফিফা তা নাকচ করে দেয়। অর্থাৎ ২৬ অক্টোবরই নির্বাচন হবে। সে দিনই ১৬ বছরের দায়িত্ব শেষ হবে সালাউদ্দিনের। দেখা মিলবে নতুন সভাপতির।
প্রশ্ন হচ্ছে সালাউদ্দিনের সিদ্ধান্ত বদলের কারণ কী? পারিবারিক একটা চাপ ছিল, স্ত্রী ও সন্তানরা চাচ্ছিলেন না তিনি আর ফুটবলের সঙ্গে জড়িত থাকুক। গত বছর তার শরীরে বড় ধরনের অপারেশন হওয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ঘরে বসেই ফুটবলের বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করছিলেন।
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, অবস্থা তার অনুকূলে নেই। নির্বাচন করলে নিশ্চিত হেরে যেতেন। তাই নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও সালাউদ্দিনের সান্ত¡না হচ্ছে তাকে আর পদত্যাগ করতে হলো না। সবচেয়ে বড় কথা শেষটা তার সম্মানের সঙ্গেই হচ্ছে।
সালাউদ্দিন সাধারণত যে ভঙ্গিতে কথা বলেন। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি চার মেয়াদ দায়িত্বে ছিলাম। সবার সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবানও মনে করি। যোগ্যতা ছিল বলেই বারবার নির্বাচিত হয়েছি। এখন ঘোষণা দিয়েই সভাপতির দায়িত্ব ছাড়তে যাচ্ছি।
এর চেয়ে বড় খুশি আর কি হতে পারে।’ যাক নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেও ফুটবলার ও সভাপতির সালাউদ্দিনের ক্যারিয়ার এক ছিল না। ফুটবলার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়ার মতো।
ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার তিনিই। কোচিং ক্যারিয়ারও মন্দ নয়। কিন্তু সভাপতি সালাউদ্দিনকে ঘিরে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। প্রথম মেয়াদে কিছুটা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপারকাপ নামিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। ২০১০ সালে এসএ গেমসে সোনা জয় এবং ২০২২ সালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রথম মেয়াদে ২০১১ সালে সালাউদ্দিনের প্রচেষ্টায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ঢাকা উড়ে এসেছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেসিদের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল নাইজেরিয়া। প্রাপ্তি বলতে এতটুকুই। বাকিটা ছিল সমালোচনায় বন্দি।
বিশেষ করে ফিফার অনুদান নিয়ে অনিয়মই তাকে ভিলেন বানিয়ে ছাড়ে। জাতীয় দলের মান একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ভুটানের মতো দুর্বল দলের কাছেও বাংলাদেশ হার মানে। এমন অবস্থায় তাকে ঘিরে আন্দোলন তুঙ্গে থাকার পরও ঘোষণা দিয়ে ফুটবল অধ্যায় শেষ করছেন এটাই বা কম কিসের।
শোনা যাচ্ছে সালাউদ্দিনের পর বাফুফের নতুন সভাপতি হতে যাচ্ছেন তাবিথ আউয়াল। আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৬ অক্টোবর সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিতে পারেন নিজেই। তবে বিশেষ এক সূত্র থেকে জানা গেছে, তাবিথ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কেউ লড়বেন না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন তিনি।
Posted ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta