কক্সবাংলা ডটকম(২০ মার্চ) :: গত বছরের মার্চে অনাস্থা ভোটে ১৭৮ জন এমপির সমর্থন পেয়ে ক্ষমতা টিকে রাখেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর এক বছর পর ফের অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েছেন তিনি। তবে এ বারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বিরোধী দলগুলো তাকে হটাতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। এ নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে।
রাষ্ট্র, অর্থনীতি পরিচালনা ও বিদেশ কূটনীতিতে ব্যর্থতা অভিযোগ তুলে গত ৮ মার্চ দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। নয়-দলীয় বিরোধী জোট-পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি)-এর সিনিয়র আইন প্রণেতাদের একটি প্রতিনিধি দল এই অনাস্থা প্রস্তাব দেয়। এখন আগামী ২২ মার্চের মধ্যে জাতীয় পরিষদে অধিবেশন শুরু হতে হবে। আর ২৯ তারিখের মধ্যে অনাস্থা ভোট সম্পন্ন করতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ইমরান খানের ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের পতন কি এবার অনিবার্য?
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট। ইমরান খানকে তার গদি বাঁচাতে হলে দরকার ১৭২ এমপির সমর্থন। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর দাবি, ইমরান খানকে উৎখাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এমপির সমর্থন আছে। পিডিএম-এর প্রেসিডেন্ট ফজলুর রেহমান বলেছেন, তাদের লক্ষ্য ১৮০ জন এমপির সমর্থন।
পাকিস্তান সরকার দলছুটদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছেপাকিস্তান সরকার দলছুটদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছে
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএলএম-এন) নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকন আব্বাসী বলেন, ১৭২ জনের সংখ্যায় পৌঁছানোর জন্য বিরোধী দলগুলোয় আছে মোট ১৬২ জন এবং জামাত-ই-ইসলামি সরবরাহ করবে একজন। তিনি আরও বলেন, ইমরান খানের দলের দুই এমপি প্রকাশ্যে তাদের বিরোধিতা করেছেন। বাকি থাকলো সাত ভোট। আমাদের কাছে যে সংখ্যা রয়েছে তা এর চেয়ে অনেক বেশি।
এছাড়া পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজীব হারুন জিও নিউজ প্রোগ্রামে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) পদত্যাগ করা উচিত এবং দলের অন্য কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এগিয়ে আনা উচিত।’
ইমরান খানের দলের বেশ কয়েকজন এমপি জানান, তারা পিটিআই থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচন তারা পিটিআই-এর টিকিটে করবেন না।
চাপে ইমরান খান, দেশজুড়ে সহিংসতার শঙ্কাচাপে ইমরান খান, দেশজুড়ে সহিংসতার শঙ্কা
এর মধ্যে একজন এমপি দাবি করেছেন, তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পিটিআই থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এছাড়া দেশটির সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, পিটিআইয়ের ২৪ জন সংসদ সদস্য বিদ্রোহ করেছেন। তারা ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন।
এরই মধ্যে গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) দ্য নিউজ এক জরিপের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ৪২ শতাংশ পাকিস্তানি মনে করছেন ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনান অনাস্থা প্রস্থাব সফল হবে। অন্যদিকে অনাস্থা প্রস্তাবের আগে ৪৪ শতাংশ পাকিস্তানি ইমরান খানের পদত্যাগ চান।
এখন ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে দেশটির স্পিকার এ বিষয়ে লিখিতভাবে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করবেন। এরপর সেক্রেটারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবেন।
২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান খান। শুরু থেকে বিরোধীদের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি।
স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন ছিল, (২২ নভেম্বর ২০২০ বিবিসি)। এছাড়া দেশটির বিরোধী জোট দাবি করে আসছে, ইমরান খান সেনাদের পুতুল সরকার।
তবে সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বিরোধী নেতারা বারবার দাবি করেছেন, ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সমর্থন হারিয়েছেন। এই দাবি সত্যি হলে ইমরান খানের বিপদ ঠেকায় কে?
উল্লেখ্য, গত বারের মার্চেও ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। তবে সেবার ১৭৮টি ভোট পেয়ে গদি হারাতে হারাতে বেঁচে যান ইমরান। প্রয়োজনীয় চেয়ে ৬টি ভোট বেশি পেয়েছিল তাঁর সরকার। কিন্তু এবার ভোটাভুটিতে তাঁর গদি হারানো কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
Posted ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ মার্চ ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta