কক্সবংলা ডটকম(১৮ ফেব্রুয়ারি) :: টানা দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠাতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ, যেটি আগে এক বছর ছিল।
এ ছাড়া অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়েই কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এখন বিএসইসি একটি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনাটি হচ্ছে, পরবর্তী লভ্যাংশের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না।
জানা যায়, তালিকভুক্ত কোম্পানির শ্রেণি পরবর্তনের আগে একটি আদেশ ছিল। ওই আদেশ বাতিল করে নতুন একটি আদেশ জারি করেছে বিএসইসি গত বৃহস্পতিবার।
কয়েক দিন ধরে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব ছিল, বেশ কিছু কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হতে যাচ্ছে। এ গুজবকে ঘিরে পুঁজিবাজারে কয়েক দিন দরপতনও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন নির্দেশনা দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগের আদেশটি বহাল থাকলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ৭০টি কোম্পানি জেড ক্যাটাগরির তালিকার আওতায় থাকত। নতুন আদেশ জারি করায় এখনই উল্লিখিত কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটাগরিতে যেতে পারবে না।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃস্টি হয়।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসির বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতার সৃস্টি হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করবে তাদের মালিক পক্ষের শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত নিলে বাজারের জন্য ভালো হতো। তাহলে কোনো কোম্পানির মালিক পক্ষ শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে পারত না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু ব্রোকার হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থির পরিস্থিতির সৃস্টি হয়।
তারা বলেন, জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগসাজশে পুঁজিবাজারে কোম্পানির মালিক পক্ষ নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করে তাদের অংশটুকু উচ্চ দামে বিক্রি করে দেয়। ফলে নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে নিয়মনীতি পরিপালন না করার (নন-কমপ্লায়েন্স) জন্য জেড শ্রেণিভুক্ত করতে পারবে না কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে।
বিএসইসি বলছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করলে সেই কোম্পানিকে দুর্বলমানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হবে। তবে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশকে শ্রেণি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।
এ ছাড়া কোনো কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারখানা আধুনিকায়নের ঘোষণা দিয়ে কোনো কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ রাখলে তাদের ক্ষেত্রে এ শর্ত কার্যকর হবে না। আবার তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া পুঁজিবাজারের জেড শ্রেণিভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর করতে পারবেন না। পুঁজিবাজারের বাইরেও এসব উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
বিএসইসি বলেছ, কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হবে। তবে যদি কোনো কোম্পানি পুঞ্জীভূত লোকসান সত্ত্বেও নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ (এজিএম) করে এবং সর্বশেষ বছরে নিট মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তাহলে ওই কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
এ ছাড়া কোনো কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘনের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জ যদি মনে করে যে ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা প্রয়োজন তাহলে বিএসইসির অনুমোদনক্রমে তা করতে পারবে।
স্টক এক্সচেঞ্জের ‘জেড ক্যাটাগরি’ মানে হচ্ছে, যেখানে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তিতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। এই শেয়ারগুলো নন-মার্জিন এবং এই ক্যাটাগরির কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে ৩৫৭টি। এর মধ্যে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ার আছে ২৭টি।
জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি
প্রতিবছরে যে কোম্পানিগুলো ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে এবং প্রতিবছর বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করে সেসব কোম্পানিকে এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি বলা হয়।
বি শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি
বি শ্রেণির কোম্পানিগুলো বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করে কিন্তু কোম্পানিগুলো শেষ বছরে ১০ শতাংশ বা তার বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এন শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি
পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তএবং তাদের প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা অনুযায়ী অন্যান্য বিভাগে স্থানান্তরিত হবে।
জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি
যেসব কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন বা বার্ষিক কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবসয়িক কার্যক্রম বন্ধ বা যাদের পুঞ্জীভূত ঋণ পরিশোধিত মূলধন অতিক্রম করে, ওই সব কোম্পানি এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
সেটেলমেন্ট
এ, বি অথবা এন ক্যাটাগরির কোনো শেয়ার কেনার ১ কর্মদিবস পর শেয়ারটি বিক্রয় উপযোগী হয়। জেড ক্যাটাগরির ম্যাচিউর হতে শেয়ার ক্রয়ের পরে আরও ২ কর্মদিবস প্রয়োজন হয়। এ, বি অথবা এন ক্যাটাগরির কোনো শেয়ার বিক্রয় করার সঙ্গে সঙ্গে একই ক্যাটাগরির অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনা যায়। এ সুবিধা জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের জন্য প্রযোজ্য নয়।
শেয়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ যদি কোনো বিনিয়োগকারী উত্তলন করতে চান তবে এ, বি অথবা এন ক্যাটাগরির শেয়ারের ক্ষেত্রে সেই অর্থ ম্যাচিউর হতে শেয়ার বিক্রির পরে আরও ১ কর্মদিবস প্রয়োজন হয় । আবার জেড ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রির পরে আরও ২ কর্মদিবসের প্রয়োজন হয়।
Posted ১:০৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta