কক্সবাংলা ডটকম(২ জানুয়ারি) :: ২০২২ সাল একটা কঠিন বছর শেষ করলো দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। বছরের শুরুটা হয়েছিল কিছুটা আশা দিয়ে। শেষটা হয়েছে চরম হতাশায়। আবার নতুন বছরের শুরুটাও হতাশায় শুরু হলো।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা যে আশা করেছিলেন, বছরের প্রথম দিনেই হতাশ করলো শেয়ারবাজার। লেনদেন আবার নেমেছে ২০০ কোটি টাকার নিচে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকেই বাজার ছিল সংশোধনে। তবে সেটি শেষ করে ২০২২ সালের শুরুতে সূচক কিছুটা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এরমধ্যে ঘটে দুটি ঘটনা। প্রথমত, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এই দুই ঘটনায় বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও দেখা যায় অস্থিরতা। বছর শেষেও কাটেনি সেটি।
ডিএসই সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো লেনদেন শুরু করেছে ইসলামি সুকুক বন্ড। পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘ মতভিন্নতাও দূর হয়েছে এ বছর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষণশীল নীতি পরিবর্তনের বিষয়টি আর আভাসে সীমাবদ্ধ নেই। তারা ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে নানা নির্দেশও দিয়েছে। এসবের কিছুই বিনিয়োগকারীদের হতাশা ঠেকাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বছর পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা লাভের মুখ দেখেননি। বরং আগের বছর যে লাভ হয়েছিল, গত বছর সেটা হারিয়ে ফেলেছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ সালের প্রথম কর্মদিবস ২রা জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৮৫৩ পয়েন্ট। সেদিন লেনদেন ছিল ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বছরের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সূচকের অবস্থান ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্ট। এক বছরে পড়েছে ৬৪৭ পয়েন্ট বা ৯.৪৪ শতাংশ। শেষদিন লেনদেন ছিল ৩৪৫ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরের প্রথম দিন যে লেনদেন, শেষদিন তার অর্ধেকেরও কম।
বছর শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। অর্থাৎ দুই মাসে বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারের মন্দার মধ্যেও ২০২২ সালে ৬টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে বাজার থেকে তুলেছে ৭১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটারি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, গত বছরের ২রা জানুয়ারি বিওধারীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৯টি। যা গত এক বছরে কমে বছরের শেষ কার্যদিবস ২৯শে ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৩০১টিতে। এতে এক বছরের ব্যবধানে বিওধারীর সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩৮টি বা ৮.৫১ শতাংশ।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, গত বছরের শেষটা একেবারেই ভালো যায়নি, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। পুঁজিবাজার বৈশ্বিক রাজনীতি ও সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি সবকিছু ইতিবাচক হয়ে আসে তাহলে তাই আমরা আশাবাদী চলতি বছর একটা ভালো সময় কাটাতে পারবো।
নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবস গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৯টির। আর ১৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৭৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আগের দিন লেনদেন হয় ৩৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৬৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেনি, ২০২০ সালের ৭ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো। ২০২০ সালের ৭ জুলাই ডিএসইতে ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর ডিএসইতে আর এত কম লেনদেন হয়নি।
বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০২২ সাল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই খারাপ গেছে। আবার নতুন বছরেও ঘুরে ফিরে সেই পতনই দেখতে হলো।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির ও ৮৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Posted ২:২১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta