কক্সবাংলা ডটকম(২০ নভেম্বর) :: আগের সপ্তাহের শেষ দুই দিন ঘুরে দাঁড়ালেও নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন পুঁজিবাজারে আবার ঢালাও দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। সব মিলিয়ে কেবল ২০টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ৬৮টির। যে হারে দর কমেছে, সেটি ভীতি ছড়িয়েছে আরও বেশি।
জানা যায়,গত ৩১ জুলাই থেকে নতুন করে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হওয়ার পর থেকে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা কোম্পানিগুলো গত এক মাস ধরেই ব্যাপক দরপতনের মধ্যে আছে।
এর মধ্যে তুমুল আলোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি ফ্লোরের কাছাকাছি ফিরে এসেছে। এতে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন বিকন ফার্মার দর ছিল ২৪০ টাকা ৮০ পয়সা। তবে কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস ২৪৫ টাকা। এর নিচে নামা আপাতত সম্ভব নয়।
ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের পর কোম্পানিটির শেয়ারদর তরতর করে বেড়ে ৩৯৩ টাকা হয়ে যায়। তবে পরে দেখা যায় এর আয় ও লভ্যাংশ আহামরি কিছু হয়নি। আর দর হারাতে হারাতে এখন নেমে এসেছে ফ্লোরের কাছাকাছি ২৫১ টাকা ৭০ পয়সায়।
আজ কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ১৪ টাকা বা ৫.২৭ শতাংশ।
আর একদিন দরপতনেই ওরিয়ন ফার্মা ফ্লোর প্রাইস ৭৯ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে আসতে পারে। গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন শেয়ারদর ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বোচ্চ উঠে ১৫৬ টাকা ৫০ পয়সা। এখন নেমে এসেছে ৮৫ টাকায়।
এর মধ্যে আজ কমেছে ৮.৯৯ শতাংশ বা ৮ টাকা ৪০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস ঘোষণার দিন কোহিনূর ক্যামিকেলসের দর ছিল ৩৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। তবে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয় ৩৮০ টাকা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে দর হয়ে যায় ৭৫৭ টাকা ৪০ পয়সা। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চূড়ায় উঠার পর যে দরপতন শুরু হয়, তাতে এখন নেমে এসেছে ৪৪৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ২৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ৫.১৪ শতাংশ।
তবে এখনও ফ্লোর প্রাইস থেকে অনেক দূরে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের দর। গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস ঘোষণার দিন দর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। তবে কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস ঠিক হয় ১০৭ টাকা ৩০ পয়সায়। অস্বাভাবিক উত্থানে এক পর্যায়ে দর এক হাজার টাকা ছুঁয়ে যায়। কমতে কমতে এখন তা নেমেছে ৮১৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
আজ কমেছে ২৭ টাকা ১০ পয়সা বা ৩.২১ শতাংশ।
তবে এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপের কেবল ওরিয়ন ফার্মাকে দেখা গেছে।
সেই কোম্পানিগুলোর দর এখন পড়ছে ব্যাপক হারে
বাকি সব কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। এখন কমছেও লাফিয়ে লাফিয়ে।
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মা, যেটির ২৫ টাকায় পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে ১৩২ টাকায় উঠে যায়। এখন নেমেছে ৯০ টাকা ৯০ পয়সায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৯৭ শতাংশ কমেছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দর, যেটি সম্প্রতি ১৪৭ টাকা ৯০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল। এখন নেমেছে ৮৪ টাকায়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯.৯৪ শতাংশ দর হারিয়েছে বসুন্ধরা পেপার। বর্তমান দর ৯৬ টাকা ৯০ পয়সা, যেটি ১২৬ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।
চতুর্থ সর্বোচ্চ ৯.৭০ শতাংশ কমে এডিএন টেলিকমের দর দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকা ৯০ পয়সা। এই কোম্পানিটির শেয়ারদর সম্প্রতি ১৫৯ টাকায় উঠে গিয়েছিল।
পঞ্চম সর্বোচ্চ ৯.৪৯ শতাংশ দর হারিয়ে ৩৫ টাকা ৩০ পয়সায় নেমেছে বিডিকম। কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। সম্প্রতি উঠে যায় ৭৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ৯.৩২ শতাংশ কমে কেডএস অ্যাকসেসোরিজের দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ৮০ পয়সায়, যেটি সম্প্রতি ১০২ টাকা ১০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।
সপ্তম সর্বোচ্চ ৯.১০ শতাংশ কমে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দর নেমেছে ৭০ টাকা ৯০ পয়সায়। এই কোম্পানিটির দর উঠে গিয়েছিল ৯৩ টাকা ৮০ পয়সায়।
অষ্টম সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে ওরিয়ন ফার্মা। নবম সর্বোচ্চ কমেছে পেপার প্রসেসিংয়ের দর। ৮.৭৩ বা ১৮ টাকা ৫০ হারিয়ে কোম্পানিটির দর দাঁড়িয়েছে ১৯৩ টাকা ৫০ পয়সা, যেটি সম্প্রতি উঠে যায় ৩৩৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
দশম সর্বোচ্চ ৮.৭২ শতাংশ বা ২৭ টাকা দর হারিয়ে মনোস্পুল পেপারের দর দাঁড়িয়েছে ২৮২ টাকা ৫০ পয়সা, যে কোম্পানিটির দর সম্প্রতি ৪৬৩ টাকা ৫০ পয়সা উঠে গিয়ে বিস্ময় তৈরি করেছিল।
আরও ৫টি কোম্পানির দর ৭ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৪টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৬টি দর ৪ শতাংশের বেশি, ১০টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৮টির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি। এর অনেকগুলো ফ্লোরের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৮২ পয়েন্ট কমেছে লাফার্জ হোলসিমের কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ওরিয়ন ফার্মার দর ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বসুন্ধরা পেপার, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, নাভানা ফার্মা, এসিআই ও এমজেএল বাংলাদেশের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৬০ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ১ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪২ পয়েন্ট।
পূবালী ব্যাংক সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৩৯ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা অয়েল, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
Posted ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta