শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসেই আটকা ৬০ শতাংশ বাজার মূলধন

রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৪
33 ভিউ
পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসেই আটকা ৬০ শতাংশ বাজার মূলধন

কক্সবংলা ডটকম(৭ জানুয়ারি) :: সদ্য বিদায় নেয়া ২০২৩ সাল দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ভালো যায়নি। এ সময়ে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বহুজাতিকসহ ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর এক প্রকার স্থির অবস্থায় ছিল। পুঁজিবাজার থেকে এ সময়ে রিটার্ন এসেছে যৎসামান্য।

এ অবস্থায় নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, ডলার পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার এবং পুঁজিবাজারে সংস্কার ও সুশাসনের দিকে নজর দিলে তা পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ২০২৩ সালে বেড়েছে মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে গড়ে দৈনিক লেনদেন হয়েছে ৫৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারি, এপ্রিল, মে, জুন ও ডিসেম্বরে শুধু ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। বাকি সাত মাসে ডিএসইর রিটার্ন ছিল নেতিবাচক।

গত বছর পুঁজিবাজারে মাত্র দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। সূচকের ওঠানামা সীমাবদ্ধ ছিল ২০০ পয়েন্টে। ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদরের নিম্নসীমা) আরোপের কারণে বাজারে থাকা শেয়ারের বড় একটি অংশই লেনদেন হয়নি এবং এতে বাজারের তারল্যপ্রবাহ কমে গেছে।

ইবিএল সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ছিল মোট বাজার মূলধনের (ডেবট সিকিউরিটিজ বাদে) প্রায় ৬০ শতাংশ।

দেশের পুঁজিবাজারে গত বছর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানির বেশির ভাগের শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। সার্বিকভাবে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ারের শেয়ারে। বহুজাতিকের পাশাপাশি বাজার মূলধনের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ২০ কোম্পানির শেয়ারে মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। এ কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের ৫০ শতাংশ। শেয়ারের পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও গত বছর অধিকাংশ ফান্ডের সম্পদমূল্য ও ইউনিটের দর কমেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সংস্কারে গুরুত্ব দেবে, সবার মধ্যে এমন প্রত্যাশা আছে। সংস্কারের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক এবং বাজারও ঘুরে দাঁড়াবে।’

পুঁজিবাজারে খাতভিত্তিক শেয়ারে রিটার্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারে কোনো রিটার্ন আসেনি। প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতে ১ শতাংশ এবং ব্যাংক খাতের শেয়ারে ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে এ সময় ওষুধ ও সিরামিক খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অবশ্য বীমা ও পাট খাতের মতো স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারে রিটার্ন ছিল দুই অংকের ঘরে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতির হতাশাজনক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রেও। এ বছর পুঁজিবাজারে মাত্র দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেখানে গত বছর নয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বছরজুড়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহের ঘাটতি দেখা গেছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির ও বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছে। একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা দ্রুত মুনাফার আশায় এসব শেয়ারে ঝুঁকেছেন। টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন ও ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে দেখা গেছে এবং এতে পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর মুদ্রনীতি ঘোষণা করে, যার প্রভাবে সুদহার বেড়ে যায়। এতেও পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ কমে গেছে। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগের চেয়ে পর্যবেক্ষণের প্রবণতা ছিল বেশি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে পুঁজিবাজারে গতি আসে সেটি বরাবরই দেখা যায়। সেটি এবারের নির্বাচনের পরে দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারে জন্য একটি বাধা হিসেবে কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এটি প্রত্যাহার করে নেয়া হবে জানানো হয়েছে। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাজারে লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

আমাদের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভালো শেয়ারের জোগান অত্যন্ত দুর্বল। নির্বাচনের পরে ভালো নতুন শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করছি। এসবই যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। পাশাপাশি যদি আমাদের ডলার সংকট কেটে যায় এবং টাকার অবমূল্যায়ন না হয় তাহলে বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। এটিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।’

২০২৪ সালে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কেমন থাকতে পারে সে বিষয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে তা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বিএসইসিও এ বছরে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার প্রত্যাশা করছে।

এটি প্রত্যাহার করা হলে তাৎক্ষণিক পুঁজিবাজারে দর সংশোধন দেখা যেতে পারে। তবে সেটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলে ডিএসইএক্স সূচক কমে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে আসতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে এটি বেড়ে ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টে দাঁড়াতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাতভিত্তিক তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এফএমসিজি, ওষুধ ও রসায়ন, ব্যাংক ও বীমা খাতের কোম্পানিগুলো ২০২৪ সালে ভালো করতে পারে। পাশাপাশি প্রকৌশল, নির্মাণ ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো মুনাফা ফিরে পেতে পারে। তবে ঋণ বেশি ও কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরতা বেশি এমন কোম্পানিগুলো আয় ও মুনাফা নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগের শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। কভিড সংক্রমণের প্রভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন তীব্র হয়ে উঠলে তা ঠেকাতে সে বছরের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা শুরু হলে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি।

এর পাঁচ মাসের মাথায় ১৬৯টি কোম্পানির ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। যদিও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমতে শুরু করলে দুই মাস পরেই গত বছরের ১ মার্চ আবারো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের মাধ্যমে শেয়ার দর ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের রেটিংয়ে অবনমন করেছে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের সাবসিডিয়ারি এফটিএসই রাসেল।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্বাচনের পর সুদহার ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের অংশীজনরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কমিশন অনুকূল পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলে বাজারে লেনদেন বাড়বে বলে সবাই মনে করছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে সেটি পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’

33 ভিউ

Posted ৫:৩৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com