কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জানুয়ারি) :: দীর্ঘদিন পতনের পর কিছুটা ছন্দে ফিরেছে শেয়ারবাজার। মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছাড়িয়েছে ৯০০ কোটি।
মঙ্গলবার মূল্য সূচকের উত্থানে এই বাজারে শেষ হয়েছে লেনদেন। একই সঙ্গে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে।
শেয়ারবাজারের এমন গতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। এরই ফলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।
শেয়ারবাজারের আরও গতি বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীদের এমন আত্মবিশ্বাস আর বেশি কাজ করবে। দীর্ঘদিন বাজার খারাপ থাকার কারণে অনেক বিনিয়োগকারীই শেয়ারবাজারের সাইড লাইনে অপেক্ষমান ছিলেন। বাজারের এমন উর্ধ্বগতি বহমান থাকলে সাইড লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করবে। এতে করে বাজারের গতি আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিন ডিএসইতে ৯০০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। আগের দিন থেকে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। সোমবার এই বাজারে ৭১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৫ পয়েন্টে।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৭৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ৬৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮৬টির।
আরেক বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সিএসই সার্বিক সূচক সিএসপিআই ৮৯ পয়েন্ট বেড়েছে। সিএসইতে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এর আগে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৪ নভেম্বর। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৭১৪ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ৩১ জুলাই দ্বিতীয় বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর উত্থান দেখা দিলেও নভেম্বরের অর্ধেক পার হওয়ার পর ফের মন্দা ভর করে।
সর্বশেষ হাজার কোটির ঘরে লেনদেন হয়েছিল ৯ নভেম্বর। এর পরের তিন কর্মদিবস ১০, ১৩ ও ১৪ নভেম্বর ৭০০ কোটির ঘরে লেনদেন হলেও ধীরে ধীরে লেনদেন নেমে আসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটির ঘরে।
নতুন বছরে বাজার ভালো হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন বাজারের-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল। বছরের প্রথম তিন দিন আশার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এরপর ৪ জানুয়ারি বিএসইসি বাজার-সংশ্লিষ্টদের মোর্চা ও তাদের প্রতিনিধিদের ডেকে বৈঠক করে। সেখানে বলা হয়, বাজার ভালো করতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস তোলা হবে না।
বৈঠকের পরের দু দিন বাজারে তেমন প্রতিক্রিয়া না দেখা গেলেও এখন বাড়ছে লেনদেন।
ফ্লোর প্রাইস ভেঙ্গেছে ১২ কোম্পানি
এদিকে শেয়ারবাজারের এমন ছন্দে ফেরার সাথে সাথে একে একে ফ্লোর প্রাইস ভাঙ্গতে শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। যা শেয়ারবাজারকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে গতি বাড়াবে। কিছুটা গতি পাওয়া শেয়ারবাজারে আজ ১২টি কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস ভেঙ্গে উপরে লেনদেন হয়েছে।
মঙ্গলবার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করা ১১ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- এসিআই ফর্মুলেশন, একমি ল্যাবরেটরীজে, আলহ্বাজ টেক্সটাইল, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিবিএস, আইএফআইসি ব্যাংক, জেএমআই সিরিঞ্জ, কেয়া কসমেটিকস, পেনিনসুলা চিটাগাং,ইনডেক্স এগ্রো, রেকিট বেনকিজার এবং সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।
কোম্পানি ১১টির মধ্যে আজ এসিআই ফর্মুলেশনের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ১ টাকা ১০ পয়সা বা ০.৭১ শতাংশ বেড়ে ১৫৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ১৫৫ টাকায়।
একমি ল্যাবরেটরীজের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ২.৮২ শতাংশ বেড়ে ৮৭ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইস ৮৫ টাকায় আটকে ছিল।
আলহ্বাজ টেক্সটাইলের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৩০ পয়সা বা ০.২৩ শতাংশ বেড়ে ১৩৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ১৩২ টাকা ১০ পয়সায়।
বিবিএসের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ২ টাকা বা ৯.২৬ শতাংশ বেড়ে ২৩ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ২১ টাকা ৬০ পয়সায়।
কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ১০ পয়সা বা ০.২৭ শতাংশ বেড়ে ৩৭ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ৩৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ১০ পয়সা বা ০.৮৭ শতাংশ বেড়ে ১১ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ১১ টাকা ৫০ পয়সায়।
জেএমআই সিরিঞ্জের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৮০ পয়সা বা ০.৩১ শতাংশ বেড়ে ২৫৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সায়।
কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ১০ পয়সা বা ১.৫৬ শতাংশ বেড়ে ৬ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কিছুদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ৬ টাকা ৪০ পয়সায়।
পেনিনসুলা চিটাগাংয়ের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৪০ পয়সা বা ১.৪৬ শতাংশ বেড়ে ২৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ২৭ টাকা ৪০ পয়সায়।
ইনডেক্স এগ্রো লি: এর শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৪০ পয়সা ০.৩৯ শতাংশ বেড়ে ১০৪ লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ১০৩ টাকা ৬০ পয়সায়।
রেকিট বেনকিজারের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৪০ পয়সা বা ০.০১ শতাংশ বেড়ে ৪৭৬১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ৪৭৬০ টাকা ৭০ পয়সায়।
সাইফ পাওয়ারটেকের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ৭০ পয়সা বা ২.৩৬ শতাংশ বেড়ে ৩০ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানিটির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে ২৯ টাকা ৭০ পয়সায়।
উত্থানের দিনেও ফ্লোর প্রাইসে ফিরেছে চার কোম্পানি
অপরদিকে আগের থেকে ফ্লোর প্রাইসে থাকা প্রতিষ্ঠান এবং সোমবার ফ্লোর প্রাইসে ফেরা প্রতিষ্ঠান মিলে ফ্লোর প্রাইসের মোট প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছিল ২০৬টি। আজকের ফ্লোর প্রাইসে ফেরা ০৪টি নিয়ে ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ২১০টিতে।
আজ নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে আসা চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, মাইডাস ফাইন্যান্স, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর এবং সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
Posted ৭:২১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta