কক্সবাংলা ডটকম(১৩ ডিসেম্বর) :: আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়ল আবার। আহামরি কোনো বৃদ্ধি না হলেও এক মাস পর প্রথমবারের মতো লেনদেন ছয় শ কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়েছে। ফ্লোর ছেড়ে দুই একটি কোম্পানির উঠে আসার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে।
আগের কর্মদিবসে শেয়ার দর দর বৃদ্ধি ও হ্রাস- এই দুই ধরনের কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৯১টি, সোমবার সেটিও বেড়ে হয়েছে ৯৪টি।
কক্সবাংলা ডটকম(১৩ ডিসেম্বর) :: আগের দিন ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়ার কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২৬৫, সেটিও কিছুটা কমে হয়েছে ২৫৯।
এই পরিবর্তনগুলো আহামরি কিছু না হলেও গত দুই মাস ধরে পুঁজিবাজারের আচরণ বিবেচনায় নিলে বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তির আভাস নিয়ে আসতে পারে।
এই ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসের মধ্যে ফের ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানির শেয়ারে ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
গত ৩১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর এই গ্রুপের চার কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তুমুল আলোচনা ছিল।
তিন মাসেরও কম সময়ে এক শ টাকা থেকে ওরিয়ন ইনফিউশনের দর হাজার টাকাতে ঠেকে। কোহিনূর কোমিক্যালসের দর ৩৭৯ টাকা থেকে সাড়ে সাত শ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ৮০ টাকার নিচ থেকে ওরিয়ন ফার্মার দর ছাড়ায় দেড় শ টাকার ঘর। বিকন ফার্মা আড়াই শ টাকার কম থেকে পৌঁছে যায় চার শ টাকার কাছাকাছি।
তবে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এই কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক পতন দেখা যায়। ধাপ ধাপ করে নামতে নামতে ওরিয়ন ইনফিউশন ৪৭৪ টাকাতেও চলে আসে।
ওরিয়ন ফার্মা দেড় শ টাকা থেকে ৮০ টাকার কাছাকাছি নেমে আসে। বিকন ফার্মার শেয়ারদর নামে আড়াই শ টাকার কাছাকাছি আর কোহিনূর ক্যামিকেলস চার শ টাকার কাছাকাছি নেমে আসে।
প্রায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ পতন হতে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের এখন উল্টোগতি। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে দিনের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি। দর আবার ছাড়িয়েছে আট শ টাকা। ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ারের প্রস্তাব সমন্বয়ের পরও কোহিনূর ক্যামিকেলসের দর সাড়ে চার শ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বিকন ফার্মা আবার তিন শ টাকার ঘরে। সেই তুলনায় ওরিয়ন ফার্মা হারিয়ে ফেলা দরের কমই ফিরে পেয়েছে। সবশেষ দর ৮৮ টাকা ৭০ পয়সা।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে উৎকণ্ঠায় গত মাস দুয়েক ধরেই পুঁজিবাজার টালমাটাল। ফ্লোর প্রাইসের কারণে শ তিনেক কোম্পানির শেয়ার একটি নির্ধারিত দরের নিচে নামতে না পারার বাস্তবতার মধ্যে লেনদেনও দৃশ্যত আটকে ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানিতে।
এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপের কারণে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমতে কমতে দুই শ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়।
তবে শেষমেশ নানা শঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সমাবেশটি হয়েছে শান্তিপূর্ণ। আর বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, তাও অনেকটাই নমনীয়। আর এরপর থেকেই হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করার ইঙ্গিত মিলছে।
সমাবেশের আগের কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ২৯৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সমাবেশের পরের কর্মদিবস রোববার তা বেড়ে হয় ৪১৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
সোমবার সেখান থেকে আরও খানিকটা বেড়ে গত ১৪ নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো ছাড়ায় পাঁচ শ কোটির ঘর। হাতবদল হয় ৫৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার এখান থেকেও আরও কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৬১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সূচক রোববার বাড়ে ১১ পয়েন্ট, সোমবার ২৭ পয়েন্ট এবং মঙ্গলবার বাড়ল ৪ পয়েন্ট। গত দুই মাসে টানা তিন দিন সূচক ও লেনদেন বাড়ার বিষয়টি এর আগে দেখা যায়নি বললেই চলে।
এদিন দর বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির, কমেছে ৪৯টি। ২৫৯টি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। বাকি ৩৭টির কোনো ক্রেতা ছিল না।
খাতওয়ারি বিবেচনায় দিন সবচেয়ে ভালো গেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। এক মাত্র এই খাতেই লেনদেন শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। হাতবদল হয়েছে ১২১ কোটি টাকার বেশি। দর বেড়েছে ৮টি কোম্পানির, কমেছে ৩টির আর ২০টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
দর বৃদ্ধির বিবেচন হিসাব করলে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো প্রাধান্য ছিল লক্ষ্যনীয়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির সাতটিই স্বল্প মূলধনি। বাকি তিনটির শেয়ার সংখ্যাও খুব বেশি নয়।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে লেনদেন বেড়েছে। যেহেতু বিএসইসি থেকে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস তোলা হবে না, সে কারণে বর্তমান প্রাইসেই সবাইকে পজিশন নিতে হবে।
‘যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হতো তাহলে হয়তোবা আরও ২০ শতাংশের মতো শেয়ারের দাম কমে যেত এবং তখন হয়তো অনেকে পজিশন নেয়ার কথা ভাবতেন।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
এদিন শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মুন্নু সিরামিকের।আগের কার্যদিবস সোমবার মুন্নু সিরামিকের ক্লোজিং দর ছিল ১১৫ টাকা ৭০ পয়সা। আজ লেনদেন শেষে কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ১২৭ টাকা ২০ পয়সা।
আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৯৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের ৯.৪২ শতাংশ, কোহিনূর কেমিক্যালের ৮.৭৪ শতাংশ, মুন্নু এগ্রো মেশিনারির ৭.৪৯ শতাংশ, এমবি ফার্মার ৭.১৫ শতাংশ, সালভো কেমিক্যালের ৫.৫৫ শতাংশ, লুব রেফের ৫.৫২ শতাংশ, বিডি থাই ফুডের ৫.২৪ শতাংশ, ইস্টার্ন ক্যাবলসের ৪.৬৪ শতাংশ এবং আইটি কনসালট্যান্টসের ৪ শতাংশ দর বেড়েছে।
লেনদেনে শীর্ষ ১০ শেয়ার
লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুন্নু সিরামিক, বসুন্ধরা পেপার, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ওরিয়ন ফার্মা, আমরা নেটওয়ার্ক, অ্যাডভেন্ট ফার্মা এবং আইটি কনসালট্যান্টস।
দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
বিক্রেতা উধাও ৫ কোম্পানির
কোহিনূর কেমিক্যাল: আগেরদিন সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৪২১ টাকা ৮০ পয়সা। আজ সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৫৮ টাকা ৭০ পয়সা। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮.৭৪ শতাংশ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় ছিল।
জুট স্পিনার্স: আগেরদিন সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২৭৩ টাকা ৭০ পয়সা। আজ সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯৭ টাকা ৬০ পয়সা। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ৭.৪৯ শতাংশ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় ছিল।
মুন্নু এগ্রো মেশিনারি: আগেরদিন সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৭৯৭ টাকা ৯০ পয়সা। আজ সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৫৭ টাকা ৭০ পয়সা। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৯ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭.৪৯ শতাংশ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় ছিল।
এমবি ফার্মা: আগেরদিন সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৫৪১ টাকা। আজ সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮১ টাকা ৫০ পয়সা। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪০ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭.৪৮ শতাংশ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় ছিল।
Posted ৪:০০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta